সাতান্ন বছর এগিয়ে এসে যদি আজকের দিনে মুক্তি পেত গুরু দত্তের ‘পিয়াসা’! তবে কেমন হতো?
প্রশ্নকর্তা দেশের নতুন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং পুরনো ছবির পোকা অরুণ জেটলি। একটু আগেই ৪৫তম আন্তর্জাতিক ফিল্ম উৎসবের উদ্বোধন করে এসেছেন। তাঁর প্রশ্ন উৎসবের প্রধান অতিথির কাছে, যিনি একটু আগেই নবনির্মিত শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি স্টেডিয়ামের মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে রোশনাই বাড়িয়েছেন গোয়ার আকাশে।
প্রেক্ষাগৃহের বাইরে তাঁর নীল জিনস, লাল গিঁট বাঁধা শার্ট, বিড়ি মুখে সেই বিখ্যাত কাট আউট। ম্যারিয়ট হোটেলের নিজস্ব আলো আঁধারি ঘেরা সৈকতের নৈশাহারে বিগ বি কিন্তু কালো গলাবন্ধে আপাদমস্তক ফর্মাল। ফিল্মের প্রসঙ্গ উঠতেই দুই প্রবীণ ডুবে গেলেন আড্ডায়।
জেটলি বললেন, “স্বাধীনতার পর বহুদিন পর্যন্ত দারিদ্র ছিল ভারতীয় সিনেমার মূল থিম। সেটা পাল্টে গিয়েছে ধীরে ধীরে। বচ্চনজি, ভাবুন তো আজ যদি ‘পিয়াসা’ রিলিজ করত?”
‘যো জিতা ওহি সিকন্দর’ থেকে ‘থ্রি ইডিয়টস’ গুঞ্জনের মতো নামগুলি ঘুরে গেল টেবিলে। যেখানে অমিতাভ বচ্চন, জেটলি ছাড়া রয়েছেন গোয়ার রাজ্যপাল মৃদুলা সিংহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর, রাজ্যবর্ধন রাঠৌরের মতো হাতে গোনা ক’জন। ডেলিগেট, সরকারি কর্তা, দেশবিদেশের ফিল্ম জগতের মানুষের কাছে যে চিঠি এবং ক্যাটালগ গিয়েছে তাতে অবশ্য মনোহর পর্রীকর এখনও গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরই! মন্ত্রিসভা রদবদলের পর তড়িঘড়ি করে শেষ দিকের কিছু কার্ডে কেবল নাম বদলিয়েছে।
জেটলির প্রশ্নের উত্তরে অমিতাভ বললেন, “হয়তো ছবির গল্পটাই বদলে যেত!” একটু চুপ করে বোধহয় এক ঝলক ভেবে নিলেন গুরু দত্ত-ওয়াহিদা রহমানের সেই প্রেমকাহিনি যাকে টাইম ম্যাগাজিন সর্বকালের সেরা দশটি প্রেমের ছবির মধ্যে জায়গা দিয়েছে। তার পরে আবার শোনা গেল ব্যারিটোন, “আহা, কী ভাল ছিল ছবিটা! আজকের দিনে যদি এই ছবি মানুষ না দেখে, তবে সেটা কিন্তু খুব দুঃখের ব্যাপার জেটলিজি।”
৭৫টি দেশের ১৭৯টি ছবি দেখানো হচ্ছে এ বারের উৎসবে। উদ্বোধন করে অমিতাভই বলেছেন, “অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে পাশের লোকটির জাত, ধর্ম, বর্ণ আমরা মনেও রাখি না। আজ যখন গোটা বিশ্বেই টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার প্রবণতা, তখন সিনেমা হলের মত আর কী-ই বা আছে যা মানুষের এহেন সমন্বয় ঘটাতে পারে?”
রাত বাড়ছে, নস্টালজিয়ার ঘোরও। “আজকাল স্ক্রিপ্টের ভাষা, কথা বলার সময় শব্দের ব্যবহার কত পাল্টে গিয়েছে’’, কিছুটা স্বগতোক্তির ঢংয়ে বললেন অমিতাভ। “সবই যে খারাপ তা বলছি না, অনেক কিছুই তো ভাল হচ্ছে। কিন্তু জেটলিজি, এখনকার কোনও গান ঝট করে পুরোটা বলতে পারবেন? মনে করার চেষ্টা করুন তো!” অবশ্যই একমত জেটলি। পরে আনন্দবাজারকে বললেন, “আশির দশকের পর আর নিয়মিত ছবি দেখা হয় না। দিলীপকুমার, দেব আনন্দ, রাজেশ খন্না, বচ্চনজি এক সময় গুলে খেয়েছি। এখন আর সময় পাই না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy