বান্দোয়ানের মঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।
আদিবাসী ভাষায় নাট্য চর্চা বাড়ায় খুশি আদিবাসী সংস্কৃতি প্রেমীরা। সম্প্রতি আগ্রহী দল না পাওয়ায় ছাত্র-যুব উৎসবে বাংলা নাট্য প্রতিযোগিতা বাতিল করতে হয়েছে পুরুলিয়ার কিছু ব্লকে। সেখানে আদিবাসী ভাষার নাট্য প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে বিপুল সংখ্যক দল। তবে কি আদিবাসী ভাষায় নাটক করার জন্য আগ্রহ বাড়ছে পুরুলিয়ায়? এই প্রশ্নই উঠে গেল পুঞ্চা ও বান্দোয়ানে অনুষ্ঠিত আদিবাসী নাট্য প্রতিযোগিতার আসরে।
চলতি বছরে পুরুলিয়া জেলার দু’টি জোনে পুঞ্চা ও বান্দোয়ানে আদিবাসী ভাষায় রচিত একাঙ্ক নাটকের প্রতিযোগিতা চলছে। এ বার দু’টি জোনে মোট ১৫২টি দল যোগ দিয়েছে। বান্দোয়ান জোনে এ বার বরাবাজার, বান্দোয়ান এবং মানবাজার ২ ব্লক মিলিয়ে ৯২টি দল এবং পুঞ্চা জোনে জেলার আরও আটটি ব্লকের ৬০টি দল যোগ দিয়েছে। অনেকে এই সংখ্যা দেখে অবাক হলেও আয়োজকেরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধরেই আদিবাসী নাটকের প্রতিযোগিতায় প্রায় এত বিপুল সংখ্যার দলই যোগ দিচ্ছে। তাই প্রতিযোগিতার আয়োজক অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর প্রতিদিন ১৫টি করে নাটক প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছেন। ওই দফতরের পুরুলিয়া জেলা প্রকল্প আধিকারিক নিখিলেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘এমন কয়েকটি জেলা রয়েছে যারা দু’-তিনটি জেলা মিলিয়ে একটি দল পাঠান। সেখানে পুরুলিয়ায় এত দল যোগ দিয়েছে, যে উৎসবের চেহারা নিয়েছে।’’
এ বিষয়ে সাঁওতালি বিশিষ্টজনদের নানা ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। জেলার সাহিত্যিক মহাদেব হাঁসদার মতে, ‘‘আদিবাসীদের রক্তে সংস্কৃতি রয়েছে। যে কোনও উৎসবে আচার অনুষ্ঠানে নাচ-গান থাকবেই। তা ছাড়া নাটকের মাধ্যমে সাংসারিক জীবন যন্ত্রণা, ভালবাসা-বিরহ থেকে সরকারি প্রকল্পের নানা সুবিধার কথা বিশাল জনতার সামনে তুলে ধরার সুযোগ মেলে। নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরার এমন সুযোগ কেউ ছাড়তে চান না।’’ আবার এই প্রতিযোগিতায় যোগ দিলে সরকারি খরচও মিলছে। সেটাও নাট্যপ্রেমীদের আগ্রহ বাড়ার অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করছেন। আবার শুধুমাত্র কয়েকদিনের আনন্দ হই-হুল্লোড়ের মজা পেতেও নাটকের দল প্রতিযোগিতায় যোগ দিচ্ছে।
কী ধরনের নাট্যচর্চা হচ্ছে? বোরো থানার বাসিন্দা নাট্যকার নরেন্দ্রনাথ সোরেনের কথায়, ‘‘নাটক হচ্ছে চলমান সমাজের দর্পন। নাটকের মাধ্যমে বাল্য বিবাহ রোধ, নাবালিকা বিয়ে বন্ধ, কন্যাশ্রী-যুবশ্রীর মতো সরকারি প্রকল্প প্রচার হচ্ছে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো এবং খারাপ দিকের প্রভাব নিয়েও নাটক হচ্ছে। ফেসবুকে আলাপ হওয়া তরুণী বদ লোকের খপ্পরে পড়ে কী ভাবে বাড়িতে ফেরত এল, এ নিয়েও নাটক লেখা হচ্ছে।’’ জেলার অন্যতম সাহিত্যিক কলেন্দ্রনাথ মান্ডি বলেন, ‘‘নাটকের দল সংখ্যায় বাড়ছে বটে। কিন্তু মান বাড়ছে না। প্রতিষ্ঠিত নাট্যকারের লেখা এবং দক্ষ পরিচালকের তত্ত্বাবধানে নাটকের সংখ্যা কম। সংখ্যা বেড়েছে বলে আত্মশ্লাঘা করার মতো কিছু নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy