শ্যুটিং: পরিচালক রঞ্জিত তিওয়ারির (মাঝে) সঙ্গে ফারহান আখতার। —নিজস্ব চিত্র।
আইনের চোখে তাঁরা নির্দোষ। অথচ, বছরের পর বছর তাঁদের থাকতে হচ্ছে কারাগারে। অনেকেই পেশাদার অপরাধী নন, কোনও ভুলের জেরে হতে হয়েছে বন্দি। কিন্তু জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে থাকতে থাকতে অপরাধ জগতেও হাতেখড়ি হয়ে যাচ্ছে এঁদের অনেকেরই। দেশ জুড়ে নানা সমীক্ষায় জেলের বিচারাধীন বন্দিদের নিয়ে এমন তথ্য বারবার সামনে এসেছে। এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করেছে খোদ সুপ্রিম কোর্টও। এ বার বন্দিদের সেই যন্ত্রণার ছবি তুলে ধরতে চাইছে বলিউডও। কলকাতার ছেলে রঞ্জিত তিওয়ারির প্রথম ছবি ‘লখনউ সেন্ট্রালে’ দেখা যাবে বন্দিজীবনের নানা অজানা কথা। ছবির নায়ক ফারহান আখতার এক বন্দি, যিনি জেলের অন্য বন্দিদের সঙ্গে নিয়ে একটা ব্যান্ড তৈরি করেন। খুঁজে পান নিজেদের আলাদা পরিচয়।
হালফিলে বন্দিদের সংশোধন প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে নানা কাজের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। কোথাও তাঁরা পোশাক ডিজাইন করছেন, কোথাও যুক্ত হচ্ছেন নাটক ও খেলাধুলোর সঙ্গে। টলিউডে ‘মুক্তধারা’-র মতো ছবিতে এমন কাহিনি উঠে এসেছে। কিন্তু বলিউডে বন্দিদের নিয়ে সে ভাবে ছবি তৈরি হয়নি। সে দিক থেকে তাঁর ছবি কি একটা অন্য ধারার সূচনা করবে? রঞ্জিত বলছেন, ‘‘সেটা দর্শকেরাই বলতে পারবেন। তবে এটুকু বলতে পারি ছবিতে যে মানবিক বার্তা দেওয়া হচ্ছে তা সবার মন ছুঁয়ে যাবে।’’
লখনউ সেন্ট্রাল জেলে ঘটা বাস্তবের একটি ঘটনা থেকেই ছবির অনুপ্রেরণা পেয়েছেন রঞ্জিত। ছবির জন্য গবেষণা করতে গিয়ে রঞ্জিতের উপলব্ধি, ‘‘চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি থাকাটাই একটা শাস্তি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অপরাধকে সমর্থন করছি না। কিন্তু সব বন্দিদের তো ‘হার্ডকোর’ অপরাধীদের মতো মানসিকতা নয়, তাই যাঁরা ভুল করে ফেলেন তাঁদের কথা অন্য ভাবে ভাবা উচিত।” দমদম জেলে সম্প্রতি দু’দল বন্দিদের মধ্যে সংঘর্ষের কথা শুনে রঞ্জিত বলছেন, ‘‘বিচার না পেয়ে দীর্ঘদিন বন্দি থাকতে থাকতে এমন হতাশা আসতে পারে। অনেকে ঘটনার ফেরে বন্দি হয়ে যান, কিন্তু অনেকসময় তাঁদের নিজেদের হয়ে মামলা লড়ার খরচটুকুও থাকে না।’’
প্রাক্তন পুলিশকর্তা থেকে কারাকর্তা সকলেই জানাচ্ছেন, বন্দিদের সংশোধন করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল দ্রুত বিচার। তা না হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে কাউকে বন্দি থাকতে হলে কারা দফতরের এই সব কর্মসূচির সাফল্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। তবে ফিল্মের মতো শক্তিশালী গণমাধ্যমে জেলবন্দিদের কথা উঠে আসাকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন তাঁরা।
রাজ্যের কারা দফতরের প্রাক্তন আইজি বংশীধর শর্মার পেশাদার জীবনের উপলব্ধিও একই। তিনি বললেন, ‘‘আমাদের দেশের সংবিধান বলে, দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত যে কোনও অভিযুক্তই নির্দোষ। কিন্তু তাঁদেরই বছরের পর বছর থাকতে হয় অপরাধীদের সঙ্গে। এটা অমানবিক এবং জেলের সবচেয়ে বড় সমস্যা।’’ তিনি মনে করেন, ‘‘এটা নিয়ে যত নাড়াচাড়়া হবে ততই ভাল। তবে যতদিন না দ্রুত বিচার হবে, ততদিন এই সমস্যার সমাধান হবে না।’’
সমস্যা যে সত্যিই অনেক গভীরে, তা মানছেন মুক্তধারার নায়ক নাইজেল আকারাও। নিজেও বন্দিজীবন কাটিয়েছেন নাইজেল। তাঁর মতে, ‘‘জেলে এমন হামেশাই ঘটে। সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের সংশোধন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা যায়। কিন্তু বিচারাধীনদের তা-ও যায় না।’’ বিচারাধীন বন্দিদেরও বিভিন্ন সংশোধন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা উচিত বলে মনে করেন নাইজেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy