Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

‘আমার সংলাপ এখন অন্যেরা বলছে’

এই শহরেরই রাতের এক কাফে। বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে এসেছে। রেডিওয় হাল্কা বাংলা গান। কাফে-মালিক নব ঘুরিয়ে গান পাল্টাতে পাল্টাতেই তা বন্ধ করে এগোলেন একটি টেবিলের দিকে। সেখানে তখন... শুরুটা এ ভাবেই। ‘ইন্টেরিয়ার কাফে নাইট’, অধীরাজ বসুর সিনেমা। বছর পঁচিশের মাছে-ভাতে বাঙালি অধীরাজ বর্তমানে মুম্বইয়ের বাসিন্দা। মানবিক সম্পর্ককে নিয়ে অধিরাজের এই সিনেমা মাত্র ১৩ মিনিটের। সপ্তাহ দুয়েক আগে অনলাইনে মুক্তি পেয়েছে। ইতিমধ্যেই ইউটিউবে ভিউয়ারশিপ ৭ লাখ ছাড়িয়েছে। মুম্বইতে অধীরাজকে ফোনে ধরলেন শুভঙ্কর চক্রবর্তী• সিনেমা মুক্তি পেতেই ইউটিউবে কয়েক লক্ষ ভিউয়ার। কেমন লাগছে? ‘ইন্টেরিয়র কাফে নাইট’ বানিয়েছিলাম দু’বছর আগে। কিন্তু, মুক্তি পায়নি। ফিল্ম ফেস্টিভালগুলোতে ভাল ফিডব্যাক পাচ্ছিলাম।

পরিচালক অধীরাজ বসু।

পরিচালক অধীরাজ বসু।

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ১২:৩৫
Share: Save:

• সিনেমা মুক্তি পেতেই ইউটিউবে কয়েক লক্ষ ভিউয়ার। কেমন লাগছে?

‘ইন্টেরিয়র কাফে নাইট’ বানিয়েছিলাম দু’বছর আগে। কিন্তু, মুক্তি পায়নি। ফিল্ম ফেস্টিভালগুলোতে ভাল ফিডব্যাক পাচ্ছিলাম। ২২টি ফেস্টিভালে দেখানো হয়েছে, তার মধ্যে ছ’টিতে পুরস্কারও পেয়েছে। তার পরে অনলাইন রিলিজের কথা মাথায় আসে। মুক্তির পর এত লাইক, মন্তব্য আর ভিউয়ার দেখে ভালই লাগে। আসলে কোথাও দর্শকদের এটা ভাল লেগেছে, লিঙ্ক ফরওয়ার্ড করছেন অনেকে, অন্যদের সিনেমাটি দেখতে বলছেন, এটাই পাওনা।

• দর্শকদের প্রতিক্রিয়া কী?

সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর আপনি শুধু আশা করতে পারেন, সেটি হয়তো দর্শকদের ভাল লাগবে। কিন্তু, সত্যি বলতে কী এতটা আশা করিনি। চিন, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকেও ফোন পাচ্ছি। হিন্দি ভাষাটাই হয়তো অনেকে জানেন না, নাসিরুদ্দিন শাহকেও চেনেন না, সাবটাইটেল পড়ে গোটা সিনেমাটিকে শুধু অনুভব করে আমাকে ফোন করেছেন! আসলে গল্পটির সঙ্গে কোথাও গিয়ে একটা বন্ডিং তৈরি হয়েছে।

• হিন্দি কেন, সিনেমাটা তো বাংলাতেই হতে পারত!

আমার জন্ম শিলিগুড়িতে। ছবিতেও শিলিগুড়ির কথা রয়েছে। বাবার বদলির চাকরি ছিল। সেই সুবাদে অনেক জায়গাতেই থাকতে হয়েছে। কলকাতা থেকে জামশেদপুর, এমনকী বাংলাদেশেও থেকেছি। ছোটবেলায় কলকাতাতে ছিলাম কিছু দিন। ক্লাস ওয়ান, টু ওখানে পড়েছি। আত্মীয়স্বজন সকলেই ওখানে। এখনও মাঝে মাঝে যাই। মুম্বইতে যখন ইলেভেন-টুয়েলভে পড়ছি, তখন ঠিক করলাম ফিল্ম-মেকিংটাই করতে হবে। তার পর মুম্বইতে কাজ শুরু করি। গত ১০ বছর তো এখানেই রয়ে গিয়েছি। আসলে আমার বেড়ে ওঠাটা তো এখানে। আর হিন্দিতে আমি স্বছন্দ। তাই, হিন্দিতেই হল সবটা।

• ছোটবেলার কিছুটা কেটেছে বলেই কি ছবিতে কলকাতা কানেকশন? এমনকী ‘কাফে’তে হেমন্তের গান?

‘কতদিন পরে এলে...’ গানটা বাবা আমাকে সাজেস্ট করেছিল। কলকাতার সঙ্গে বাবার কানেকশন অনেক বেশি। বাবা বাংলা গান শুনতে ভালবাসে, বাংলা সিনেমা দেখে, খোঁজখবরও রাখে বাংলার। আমি শুনেই সিলেক্ট করে ফেললাম। একে তো হেমন্তবাবুর গানটা অনবদ্য, আর কোথাও যেন সিনেমাটার সঙ্গে মিলেও যায় পারফেক্টলি। এমনকী মায়েরও খুব প্রিয় গান এটা। দ্বিতীয় লাইনটি জানেন তো! (নিজেই গেয়ে ওঠেন) ‘তোমায় অনেক কথা বলার ছিল যদি শোনো...’।

• বাংলা সিনেমা দেখেন?

একদম। আলটিমেটলি আমি তো বাঙালি! একটা টান তো আছেই। আর এখন তো বাংলা সিনেমাগুলো মুম্বইতেও রিলিজ করে। তা ছাড়া বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই আমার বন্ধু। যেমন সৃজিত। ওর ‘চতুষ্কোণ’,‘জাতিস্মর’ বেশ লেগেছে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সিনেমাও ভাল লাগে। ‘খাদ’ দেখেছি। সে দিন ‘বেলাশেষে’ দেখলাম। দারুণ! বাংলা সিনেমা অনেক স্মার্ট হয়েছে। অনেক এনরিচড।

• পছন্দের পরিচালক কারা?

বাংলাতে সৃজিত, কৌশিক। এঁদের সিনেমা ভাল লাগে। বলিউডে রাজকুমার হিরানি। আসলে আমি যে ধরনের সিনেমা করি, দেখার ব্যাপারেও সেটাই প্রেফার করি। বাকিদের সিনেমা তাঁদের মতন করে ভাল। আসলে সিনেমাটা তো একটা ক্রিয়েশন, স্বাভাবিক ভাবেই সেই নির্মাণের সঙ্গে জুড়ে থাকে অনেখানি ভালবাসা। থাকে প্রচুর মানুষের খাটনিও। তাই কোথাও যেন সব ধরনের সিনেমাই আমার ভাল লেগে যায়।

আরও পড়ুন

গত ১০ বছরে পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হয়েছে যে ১২ বলিউডি ছবি

• কী ভাবে এই ফিল্ডে এলেন?

কাজ করতাম বিশাল ভরদ্বাজের প্রোডাকশানে। ডিরেকশনাল টিমেও ছিলাম। কয়েকটা কাজ করার পরে মনে হল, নাহ্‌ এ বার নিজেকে কিছু করতেই হবে। সিনেমা বানাতে হবে। সহ-পরিচালক হলেই যে সিনেমা বানাতে পারা যাবে, এমনটা কিন্তু নয়। হয়েও ওঠে না। কারণ, সহ-পরিচালকেরা ক্যামেরার পিছনে ধরা-বাঁধা কিছু কাজ জানেন। আর প্রোডাকশান সামলানো। তাই,আমি দু’বছরের একটা গ্যাপ নিলাম। সিনেমা বানানোর খুঁটিনাটি শেখা শুরু করলাম। প্রচুর সিনেমা দেখা, স্ক্রিপ্ট লেখা, এডিটিং, স্ক্রিন-রাইটিং— তার পর একটা সময় মনে হল এ বার সিনেমা বানানো যেতে পারে।

অনেক দিন ধরেই কাফে নিয়ে ভাবছিলাম। অদ্ভুত একটা জায়গা, যেখানে অনেকেরই প্রথম আলাপ হয়। আবার শেষ বিদায়ও। সম্পর্কই আমার সিনেমার প্রধান উপজীব্য। ‘ইন্টেরিয়র কাফে নাইট’ও এমন এক সিনেমা।

• নাম কী ভাবে এল?

সিনেমার নাম হিসাবে কোনও কিছুই মাথায় আসছিল না। শর্ট ফিল্ম তো! তাই এমন কিছু নাম রাখতে হত যাতে সিনেমাটা সম্পর্কে যেন পুরোটা না বলা হয়ে যায়। কাফেতে একটা রাতের গল্প। আমাদের স্ক্রিপ্টে অনেক কিছু লিখে রাখতে হয়। যেমন, লোকেশন, ঘরের ভেতরে না বাইরে, কোন জায়গায় ঘটনাটা ঘটছে এবং কখন, মানে দিনে, দুপুরে, সন্ধে না রাতে। এ সবের একটা হেডিংও থাকে। এই সিনেমাটার নাম ওই হেডিং থেকেই এসেছে।

• নাসিরউদ্দিন শাহের মতো এক জন অভিনেতাকে ডিরেক্ট করা! নার্ভাস লাগেনি?

আমি ওঁর সঙ্গে একটা কাজ করেছিলাম আগে। আমারই সিনেমা ডিপ্লোমা ডকুমেন্টারি ‘গুঞ্জ’। ওই ডকুমেন্টারিতে খুব কম সময়ের জন্য ছিলেন উনি। শুটিংয়ের সময় নার্ভাস হলে চলবে না, প্রথমেই এটা মাথায় ঢুকিয়ে নিয়েছিলাম। কারণ, ওঁর সময়ের খুব অভাব। তবে, যে দিন জানতে পেরেছিলাম নাসিরজি সিনেমাটি করবেন, সে দিন খুব নার্ভাস লেগেছিল। তার পর থেকেই ড্রাফ্‌ট লিখতে শুরু করি। নাসিরজিকে স্ক্রিপ্ট দেওয়ার আগে আমি ১০টি ড্রাফ্‌ট লিখি। ওঁর ভাল লাগার পরেও আরও পাঁচটি। আলটিমেটলি স্ক্রিপ্টটা ওঁর খুব ভাল লেগেছিল। তাই কনফিডেন্স লেভেলটা বেড়ে গিয়েছিল।

• আপনার এই কনফিডেন্স দেখে নাসিরজি কিছু বললেন?

সে দিন এক সাংবাদিক আমাকে ঠিক এই প্রশ্নটাই করেছিলেন। নাসিরজি তখন ঠিক আমার পাশেই বসেছিলেন। প্রশ্নটা শুনে আমার হাত থেকে মাইক্রোফোনটা নিয়ে নিলেন। বললেন, “উত্তরটা আমি দিয়ে দিই? অধীরাজ একবারেই নার্ভাস ছিল না। কারণ, আপনি তখনই নার্ভাস বোধ করবেন যখন আপনি সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি নন। অধীরাজ যে একটু বেশিই প্রস্তুত ছিল।” শুনে মনে হয়েছিল এত বড় মাপের এক জন মানুষ এ কথা বলছেন! তা হলে বোধহয় কাজটায় উতরে গেছি। সে দিন বুঝেছিলাম, হার্ড ওয়ার্ক তোমাকে প্রতিদান দেবেই। (আবার হাসি)

• শ্বেতাকে নিয়ে রিস্ক হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়নি?

শ্বেতা স্কুললাইফ থেকেই আমার বন্ধু। ও কিন্তু তুখোড় অভিনেত্রী। এটাও ঠিক, শ্বেতাকে ইন্ডাস্ট্রি ভাল ভাবে ব্যবহার করেনি। ‘মাকড়ি’ এবং ‘ইকবাল’ ছাড়া ওঁকে হয়তো কেউ মনেও রাখেনি। শ্বেতাও ঠিক আমার মতো সময় নিচ্ছিল। পরে যখন ঠিক করল ও ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে আসবে, তখন আমি চেয়েছিলাম আমার সিনেমায় কাজ করুক। এখন আমার কাছে ওকে নিয়ে এত ফোন আসছে!

• শেরনাজ পটেল এবং নবিন কস্তুরিয়াকে নিলেন। কোনও বিশেষ কারণ?

যখন আমি স্ক্রিপ্ট লিখেছিলাম, তখন চরিত্রগুলোর পাশাপাশি অভিনেতাদেরও ঠিক করেই ফেলেছিলাম। নাসিরুদ্দিন স্যর আর শ্বেতাকে আমি ফাইনাল করেই রেখেছিলাম। বাকিদের তখনও খুঁজছি। সেই সময় একটা নাটক দেখি, ‘ওয়ান অন ওয়ান’। সেখানে শেরনাজজিকে অসামান্য লাগে। নাসিরজির প্রাক্তন হিসেবে ওর মতো এত চার্মিং অভিনেত্রী ছাড়া আর কারও কথা মাথায় আসেনি। আর নবীনকে আমি ‘সুলেমানি কীড়া’তে প্রথম দেখি। ওঁকে কিছুটা হলেও নাসিরজির মতো দেখতে, কোঁকড়ানো চুল, হাইট। ৩০ বছর আগের নাসিরজির সঙ্গে হুবহু না মিললেও অনেকটা মেলে।

• আপনার প্রিয় বিষয় কি সম্পর্ক?

হ্যাঁ। তবে তা শুধু মানবিক নয়। আত্মারও। আমার দ্বিতীয় ছবি ‘দ্য লাস্ট ডে’তেও সম্পর্কের কথা বলেছি। সেখানে কিন্তু নারী-পুরুষ নয়, দুই পুরুষের বন্ধুত্বের কথা রয়েছে।

• বাংলায় শর্ট বা বিগ সিনেমার কথা ভাবছেন?

দেখুন বিগ সিনেমার কথা এখনই বলতে পারছি না, তবে মাথায় রেখেছি। আর বাংলায় সিনেমা বানাতে কেন চাইব না? এন্ড অফ দ্য ডে তো বাঙালি, এমনকী বাড়ির সবাই বাংলাতেই কথা বলে। এখন তো সবে শুরু করেছি, বলিউডে কিছু সিনেমা করব। কে বলতে পারে, এরই মধ্যে হয়তো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতেও চেনা পরিচয় হয়ে যাবে।

• পরিচালক হিসেবে নিজেকে কত নম্বর দেবেন?

নম্বরে আমি বিশ্বাসী নই। তবে, এখন যে এত ইন্টারভিউ দিচ্ছি, কনফারেন্স করছি, অদ্ভুত লাগছে! আমি কোনও দিন ভাবিনি ক্যামেরার সামনে আমাকে দাঁড়াতে হবে। বা শুনতে হবে দাদা একটু লাইটটা নিন। এগুলো তো আমার ডায়লগ! ক্যামেরার পিছন থেকে তো এগুলোই আমি বলি। (হাসি)


দেখুন সেই ভিডিও

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Adhiraj Roy Interior Cafe Night Exclusive Interview
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE