Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

মুভি রিভিউ: শরদিন্দুর হাত ধরে এ বার পুজোয় আবার হিট ব্যোমকেশ

শুরুই হচ্ছে নায়কের চরিত্রে উত্তমকুমারকে রাখতে হবে আর শ্যুটিংটা যদি গোলাপবাগানে করা যায়, প্রযোজকের সঙ্গে অজিত এবং সত্যবতীর এই রকম কথোপকথনের সূত্র ধরে। আসলে দর্শকের স্মৃতিশক্তির উপর ভরসা না করে আদতে যে ‘ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা’র সিক্যুয়াল তা বুঝিয়ে দেওয়া আর কি।

ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ-এ সত্যান্বেষী। ছবি: যিশু সেনগুপ্তের টুইটার পেজের সৌজন্যে।

ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ-এ সত্যান্বেষী। ছবি: যিশু সেনগুপ্তের টুইটার পেজের সৌজন্যে।

রেশমী প্রামাণিক
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৬:১৯
Share: Save:

সিনেমা- ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ

অভিনয়- যিশু সেনগুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, ঊষসী চক্রবর্তী

পরিচালনা- অঞ্জন দত্ত

পুজো মানেই গোয়েন্দা আর গোয়েন্দা মানে বাঙালির নস্ট্যালজিয়া! নাকি রহস্যের অনুসন্ধান। তিনি অবশ্য নিজেকে সত্যান্বেষী বলতেই পছন্দ করেন। সেই মেসবাড়ি থেকে, কেউ গোয়েন্দা খেতাব দিলেই ভুল শুধরে দিয়ে বলতেন, সত্যের অনুসন্ধানী। এ বার পুজোয় আবার হাজির ব্যোমকেশ। তবে আসছে বছর যে আবার হবে এ রকম ইঙ্গিত কিন্তু দেওয়াই ছিল ‘ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা’র শেষ দৃশ্যে সাহেববেশী ব্যোমকেশ এবং কোকোনদ গুপ্তের গুলিযুদ্ধের মাধ্যমে। আসলে ব্যোমকেশ এবং বাঙালিয়ানার একটা অদ্ভুত যোগসূত্র রয়েছে। ট্যাক্সিতে উঠে ভুল হিন্দি থেকে শুরু করে ধুতি পাঞ্জাবিতে পারফেক্ট মেছো বাঙালি। এ দিকে মগজাস্ত্রে শান দিতে চা ও হুইস্কির অদ্ভুত সংমিশ্রণও রয়েছে। অন্য দিকে, আধুনিকতার অনুপ্রবেশ ঘটাতে রিপন স্ট্রিট আর মুনলাইট বারও রয়েছে।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: একা ঘাড়ে করে ছবিটি বয়ে নিয়ে গিয়েছেন কঙ্গনা

আসা যাক সিনেমা প্রসঙ্গে। শুরুই হচ্ছে নায়কের চরিত্রে উত্তমকুমারকে রাখতে হবে আর শ্যুটিংটা যদি গোলাপবাগানে করা যায়, প্রযোজকের সঙ্গে অজিত এবং সত্যবতীর এই রকম কথোপকথনের সূত্র ধরে। আসলে দর্শকের স্মৃতিশক্তির উপর ভরসা না করে আদতে যে ‘ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা’র সিক্যুয়াল তা বুঝিয়ে দেওয়া আর কি। শাশ্বতর ভয়েস ওভারে ধরা পড়ে তৎকালীন ভিয়েতনামের গুলিযুদ্ধ, বোমার লড়াই। একটা-দুটো করে বোমা পড়তে শুরু করেছে এখানেও। ভিয়েতনামের প্রতিবাদে শহরের রাস্তায় রাস্তায় মিটিং মিছিল পথ অবরোধ। এ রকম এক টালমাটাল দিনে পড়শি এবং বন্ধু পরিচয়ে কোকোনদ গুপ্তের ব্যোমকেশের বাড়ি এসে দেশলাইয়ের বাক্স উপহার দিয়ে যাওয়া, হাবুলের বোন রেখার রহস্যজনক মৃত্যু, চিকিৎসক রুদ্রের সঙ্গে হাবুলের সৎমা মালতীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, হাবুলের মৃত্যু, রিপন স্ট্রিটের হোটেল, মুনলাইট বার, তার বাবা দেবকুমার সরকারের বিজ্ঞানসাধনায় তুরুপের তাস হয়ে ওঠা সেই বিষ দেশলাইয়ের বাক্স— গল্প গড়ায় এ ভাবেই। মেসবাড়িতে থাকাকালীন মেস মালিকের কোকেনের ব্যবসা পুলিশের কাছে ফাঁস করেছিল অতুল। সেখান থেকেই তার উপর রোষ তৈরি হয় মেস মালিক ওরফে কোকোনদের (অঞ্জন দত্ত)। এর পর পুলিশি হেফাজত থেকে দু’বার পালিয়ে যাওয়া, ফরেন্সিক ল্যাব থেকে দেশলাইয়ের বাক্স উধাও, সেই বাক্স উদ্ধারের জন্য ব্যোমকেশ বক্সীকে (যিশু সেনগুপ্ত) নিয়োগ— সব মিলিয়ে রহস্য জমজমাট হওয়ার কথা থাকলেও কোথাও যেন ঠিক জমাট বাঁধছিল না।

‘ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।

তবে ব্যোমকেশ এবং অজিতের (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) সংলাপে বেশ ট্যুইস্ট রেখেছেন পরিচালক। এবং তা ভালরকম উপভোগ্য। ব্যোমকেশ এবং মালতীর (স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়) বেশ কিছু দৃশ্যে ফাটাফাটি অভিনয় করেছেন এই জুটি। যথাযথ লাগে চিকিৎসকের ভূমিকায় দেবদূত ঘোষের অভিনয়। শেষ দৃশ্যে সেই অঞ্জনোচিত ভূমিকায় পরিচালক অঞ্জন দত্ত। তবে সবার উপর সত্য যিশু-শাশ্বত জুটি। অঞ্জনের মুন্সিয়ানাতে সরলরৈখিক গতিতে এগোয় তাদের সম্পর্ক এবং রহস্য অনুসন্ধান। অযথা জটিল হয় না। চাপের মুহূর্তে অজিতের সংলাপ যেমন কমিক রিলিফ দেয় সে রকম গম্ভীর মুহূর্তে ভাবাতেও ছাড়ে না। যদিও গম্ভীর মুহূর্ত এই সিনেমায় খুব কম আছে। তবে রাগী ব্যোমকেশের চরিত্র কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা কিন্তু পরিচালক যত্ন নিয়ে এঁকেছেন।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ‘চিলেকোঠা’ ভাবাল, কিন্তু চাহিদা পূরণ করল কি?

মনে থেকে যায় বন্ধু অজিত যখন ব্যোমকেশের দেশপ্রেমের কথা বলে। মনেপ্রাণে খাঁটি বাঙালিয়ানার কথা বলে। ওই মুহূর্ত অসাধারণ ফ্রেমবন্দি করেছেন চিত্রপরিচালক গৈরিক সরকার। মন্দ নয় নীল দত্তের আবহসঙ্গীত।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ‘ড্যাডি’ গ্যাংস্টার থেকে গডফাদার হয়ে ওঠার জার্নি

মোটামুটি হিট গোয়েন্দা চরিত্র নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট কম হচ্ছে না। শার্লক হোমসকে নিয়ে বিবিসি সিরিজ বা আমেরিকান সিরিজ (এলিমেন্টারি) হোক বা ফেলুদাকে নিয়ে ওয়েব সিরিজ, সবেতেই বড্ড বেশি আধুনিকতার অনুপ্রবেশ। কোথাও যেন খেই হারিয়ে ফেলছে মূল চরিত্রগুলো। সে দিক দিয়ে মাছের ঝোল, ভাত আর রিপন স্ট্রিটের ওই সস্তার হোটেলের মধ্য দিয়ে বাঙালি স্বাতন্ত্র ধরে রেখেছে ব্যোমকেশ। এখনও অবধি তীক্ষ্ণ বাঙালি বুদ্ধির ক্ষুরধার পরিস্থিতি অনুভূত হয় তার চরিত্রের মাধ্যমে। তাই কিছু যেন মিসিং, এই উপলব্ধিতে কিছু নম্বর কাটা গেলেও এ বার পুজোয় কিন্তু আবার হিট শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজো শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে প্যান্ডেল হপিংও। রিলিজ করেছে অনেকগুলো বাংলা ছবি। এ বার আপনার অভিযান শুরুর পালা। কে না বলতে পারে, ব্যোমকেশ দেখে আপনিই বলবেন আসছে বছর আবার হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE