Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মুভি রিভিউ: ভালবাসার বাড়ি

‘ভালবাসার বাড়ি’র একটি দৃশ্যে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

‘ভালবাসার বাড়ি’র একটি দৃশ্যে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৭:১৮
Share: Save:

কী মিষ্টি। আঃ কী মিষ্টি। আমার আপনহারা প্রাণ। আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ। খুব মিষ্টি!

ছবির নাম ‘ভালবাসার বাড়ি’। পরিচালক তরুণ মজুমদার।

তরুণবাবুর ছবি একটা সময়কে খুব সৎ ভাবে ধরে রাখে। সেপিয়া টোন যে ভাবে নিভে আসা অতীতের সিদ্ধ প্রতীক, তরুণবাবুর ছবিও। ছেলেবেলায় তাঁর ‘ভালবাসা ভালবাসা’ বলে ছবিটা অনেকেই দেখেছেন। বড় হয়েছেন। রুচিটুচি সব বদলে গিয়েছে। তার পরেও যদি সেই ছবিটার জন্য মায়া থাকে, তা হলে দেখে আসুন ‘ভালবাসার বাড়ি’। ভাল লাগবে।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: প্রত্যাশার পাহাড়, শবর জীবন্তই

ভাল লাগবে। কারণ, হালের অনেক বাংলা ছবি যৌথ পরিবার নেই, কলতলা নেই, কাঠের উনুন নেই, কুলুঙ্গি নেই ইত্যাদি বলে মড়াকান্না কেঁদে যায় দু’-আড়াই ঘণ্টা। তরুণবাবু সে সবের ধার ধারেন না। তিনি তাঁর ছবির ভাষায় নিপাট ঝকঝকে। তাঁর ছবিতে চাকরি যাওয়ার পরে সহকর্মী পরিবারে মিশে যাওয়ার প্রস্তাব আসে মোটের উপরে এ ভাবে— ‘যতই মিড্ল ক্লাস, মিড্ল ক্লাস করো না কেন, বুঝতে হবে আমরা কোন ক্লাসে বিলং করি। সেই ক্লাসটাকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। এক হাঁড়ি। নতুন একান্নবর্তী পরিবার।’ হুবহু হল না, তবে বক্তব্যটা এই।

গল্পটা শুরু হয় ম্যারাপ বাঁধা বাড়ির ছবি দিয়ে। সেখানে কী হবে, সেটা হে দর্শক, আপনি দেখেই বুঝবেন। বরং, ছবিটা দেখার আগে, এমনকী, ছবিটা তৈরি হওয়ার আগেই জেনে বসে আছেন। নায়ক আর নায়িকার বিয়ে। হওয়ারই ছিল। হয়েছেও।


‘ভালবাসার বাড়ি’র একটি দৃশ্যে দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়।

মধ্যিখানে গল্প। খুব মিষ্টি। রিনি, মানে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এ ছবির নায়িকা। বাবা ভবতোষবাবু চটকলের ক্লার্ক। চাকরি যায় তাঁর। রিনি গান শেখায়। চাকরি নেয়। সেখানে আলাপ কল্যাণের সঙ্গে। কল্যাণ সিংহ (প্রতীক সেন) মোটের উপরে ক্যাবলাকান্ত। তবে সৎ, উদ্যমী, দায়িত্ববান। তার পরে এটা-ওটা হতে থাকে। বড়লোকের হাবিজাবি একটা ছেলের সঙ্গে প্রায় পাকা সম্বন্ধ কাটিয়ে তাকেই বিয়ে করে রিনি।

এখন অভিনয়। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। যতই যাই হোক, ওই চরিত্রে তাঁকে ছাড়া উপায় ছিল না। অভিনয়-টভিনয় নয়, তরুণবাবুর শিল্পের ভাষা সৎ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন, এমন নায়িকা আর বিশেষ আছে কি? ফলে বয়সের হিসাব কষতে যাবেন না। বৃথা। তবে শুধু যাঁর নামটুকু লিখলেই এই ছবির রিভিউ সারা হয়ে যেতে পারে, শুধু যাঁর জন্য এই ছবি দেখতে যেতে পারেন— তিনি দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়। এ পৃথিবী এক বার পায় তারে, পায় নাকো আর।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: আরও একটা ‘বিগ বাজেট’, আরও একটা ‘ম্যাগনাম ওপাস’

ক্যামেরা প্রগলভ। চুম্বকের টানের মতো এগিয়ে যেতে থাকে। ছবির গীতিকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর ছবির চরিত্ররা ‘ফাটিয়ে দিয়েছ’ শুনলে আকাশ থেকে পড়ে— এটা আবার কী ভাষা? এই দুই ব্যাপারের মধ্যে কোনও সংঘাত নেই। সমন্বয়ও নেই। সেটাই মস্ত ব্যাপার। তরুণবাবু আসলে মিষ্টি গল্প বলেন। তাতে ভারতমাতা ট্যুরস অ্যন্ড ট্রাভেলস বলে কোম্পানি থাকে। লোকে ভারতমাতা কি জয়ও বলে। কিন্তু কানে লাগে না। অবনীন্দ্রনাথ আর হালের ডামাডোলের মাঝে যেটুকু শান্ত, যেটুকু মিষ্টি— তা-ই তিনি বলেন।

দিনের শেষে ক্যাবলা কল্যাণেরও কী মিষ্টি একটা প্রেম হয়— এটা কি কম কথা নাকি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE