Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

মুভি রিভিউ: যৌনতা নিয়ে নতুন করে ভাবালেন বিদ্যা

সুলু, আদতে সুলোচনা ছিল একেবারে সাধারণ গৃহবধূ। ঘর গোছানো, হেঁশেল সামলানো, ছেলের পড়াশোনা, পাড়ার ছোটখাটো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা, এসব কিছুর সঙ্গে সে মন দিয়ে রেডিও শোনে। ‘লাকি ড্র’-এর মতো নানা খেলায় অংশ নেয়, প্রাইজ জেতে।

‘সুলু’ রূপে বিদ্যা বালন। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।

‘সুলু’ রূপে বিদ্যা বালন। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।

রেশমী প্রামাণিক
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ১৭:১৪
Share: Save:

তুমহারি সুলু

পরিচালনা- সুরেশ ত্রিবেণী

অভিনয়- বিদ্যা বালান, নেহা ধুপিয়া, মানব কউল

বৃষ্টি, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, মশা, শীতের আগমন— সবকিছু নিয়ে জমজমাট সপ্তাহ। আবার এরই মধ্যে শহরে চলছে ফিল্ম উৎসব। এহেন হেমন্তের বৃষ্টিভেজা সাত সকালে সিনেমা দেখতে যাওয়াতে একটু আলসেমি লেগেই থাকে। কিন্তু সেই সিনেমার মূল চরিত্রাভিনেত্রী যদি হন সিল্ক স্মিতা থুড়ি বিদ্যা বালন তাহলে তাঁর যাদুমন্ত্রে আলসেমি যে ধাঁ করে কোথাওউধাও হয়ে যাবে তা আপনি বুঝতেও পারবেন না। যোগ্য সঙ্গত দিতে সঙ্গে যদি এক পেয়ালা ধোঁয়া ওঠা কফি থাকে তাহলে মন্দ হয় না। আপাতত চলুন, সেরে নেওয়া যাক আর জে সুলুর পরিচয় পর্ব। সুলু, আদতে সুলোচনা ছিল একেবারে সাধারণ গৃহবধূ। ঘর গোছানো, হেঁশেল সামলানো, ছেলের পড়াশোনা, পাড়ার ছোটখাটো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা, এসব কিছুর সঙ্গে সে মন দিয়ে রেডিও শোনে। ‘লাকি ড্র’-এর মতো নানা খেলায় অংশ নেয়, প্রাইজ জেতে। একটি রেডিও চ্যানেলের খেলায় সে অংশ নিয়ে প্রেসার কুকার জেতে, যদিও মনে মনে সে একটি টিভি চেয়েছিল। এই পুরস্কার নিতে গিয়েই প্রথম তার চোখে পড়ে চ্যানেলের আর জে চেয়ে একটি বিজ্ঞাপন। তারপর তো এ দিক-ওদিক সুযোগ খুঁজে খোদ চ্যানেলের প্রোডিউসারের সঙ্গে দেখা করে জীবনে প্রথমবার ভয়েস টেস্ট দিয়ে আসে।

‘তুমহারি সুলু’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।

বাড়ি ফিরে নিজেকে আর জে হিসেবে দেখতে চেয়ে তুমুল প্রস্তুতি পর্ব শুরু করে। গলার পরিচর্যা থেকে শুরু করে গলায় যৌন আবেদন এনে পরিচিতদের ফোন করে দেখে নিতে চায় তারা সেই আবেদনে সাড়া দিচ্ছে কিনা। একই পরীক্ষা স্বামীর উপরেও চালায়। আসলে মাঝরাতের শো। মাঝরাতের লোকজনদের জাগিয়ে রাখতে কণ্ঠে শুধুই আবেদন থাকবে। এরকমটাই সেদিন তাকে শেখানো হয় রেডিও স্টেশন থেকে। তাই একবার ঝালিয়ে নিচ্ছে আর কি। কয়েকদিন বাদে রেডিওর অফিস থেকে তাকে ফোন করে ডাকা হয়। বলা হয়, রাতের শোয়ের সঞ্চালক হিসেবে তাকেই নির্বাচন করা হয়েছে। এবং অনুষ্ঠানের নাম হবে ‘তুমহারি সুলু’। এ প্রসঙ্গে সুলোচনা জানায় তার বরও তাকে আদর করে সুলু বলেই ডাকে। রাতের কাজ, একলা একটি মেয়ের নিরাপত্তা, স্যালারি ইত্যাদি সবকিছু নিয়ে স্বামীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর কাজ শুরু করে সুলু।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: এত রিফ্রেশিং ছবি বলিউডে বহুদিন হয়নি

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ছবিটা ব্ল্যাক কমেডি আর দর্শকদের জীবনে গভীর ট্র্যাজেডি

প্রথমদিন শোয়ের ফিডব্যাক দারুণ হওয়ায় পরের দিন সুলুর জন্য সারপ্রাইজ পার্টির আয়োজন করে সহকর্মীরা। আর ভালবেসে মন দিয়ে নিজের কাজ করে যায় সুলু। হোয়্যাটস্‌ অ্যাপ, চিল, ব্রো,ডুড ইত্যাদি নতুন শব্দের সংযোজন ঘটে তার শব্দভাণ্ডারে। ভাল লাগে এই যে কর্পোরেটের ছোঁয়া লেগেও বদলায়না মধ্যবিত্ত সুলুর লাইফস্টাইল। রাতজাগা পাগলদের জন্য তাকে বলতে হয়, আর পাঁচটা সাধারণ কাজের মতোই সেক্স একটা কাজ। স্বয়ং আয়ুষ্মান খুরানা (ছবিতে ছোট্ট একটি গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্সে রয়েছেন)তার শোতে এসে অটোগ্রাফ নিয়ে যায়।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ‘ডুব’ দেখুন আর ডুব দিন প্রেমের সমুদ্রে

মধ্যবিত্ত বাড়ির গৃহবধূ, নিজের ইচ্ছেপূরণের জন্য রাতের শোয়ের আর জে হয়েছে। এসব নিয়ে তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হবে না এত সহজ সমীকরণ তো আর হয় না। সুলুর দুই দিদি এবং বাবা প্রথমে জেরা করে সুলুর স্বামীকে, কেন সে তার বৌকে রাতের বেলা এরকম অশ্লীল শো করার অনুমতি দিয়েছে যা কিনা বাড়ির সবার সঙ্গে বসে শোনা যায় না। তার সংসার রসাতলে যাচ্ছে। ছেলের দেখভাল হচ্ছে না। মোটামুটি চেনা ছকেই এগোয় গল্প। কিন্তু মুখ্যচরিত্রে বিদ্যা বলান যে। অন্যরকম কিছু তো থাকতেই হবে। তাঁর অভিনয় এবং সংলাপ ২ ঘণ্টা ধরে কখনও হাসায়, কখনও চোখের জল ফেলায়, আবার কখনও বা নিছক আনন্দ দান করে। বিদ্যার সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন স্বামীর চরিত্রে মানব কউল। ভাল লাগে নেহা ধুপিয়ার অভিনয়ও। মূলত বিজ্ঞাপনের জন্য কাজ করলেও পরিচালক সুরেশ ত্রিবেণীর এটি প্রথম ছবি। আর প্রথম ছবিতেই ছক্কা। বিদ্যার চরিত্রের মধ্য দিয়ে তিনি যৌনতাকেনতুন করে ভাবাতে শিখিয়েছেন। এমনকী,এ ছবির প্রচারেও বিদ্যা বলেছিলেন, ‘‘যৌনতা নিয়ে নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে এবার। আসলে সেক্স একটা অনুভূতি মাত্র। কোনও ট্যাবু নয়।’ লেখার মধ্যে যৌন আবেদন, সেক্স ইত্যাদির মতো খুচরোখাচরা দু’একটা ছোঁয়াচে শব্দ থাকলেও আদতে পরিবারের সবাই মিলে দেখতে পারবেন এই ছবি। আসলে পরিচালক সুরেশের প্রথম ছবিতে খুঁত বিশেষ নেই। তাইউইক এন্ডে আপনার মন যদি শুধুই বলে, ‘এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট,এন্টারটেনমেন্ট,’। তাহলে আপনার গন্তব্য হোক তুমহারি সুলু। আর হ্যাঁ, ‘হাওয়া হাওয়াই’ গানটির নতুন ভার্সানও কিন্তু মন্দ লাগবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE