‘এলোকেশে’-র মিউজিক ভিডিওর একটি দৃশ্য।
শীতের পড়ন্ত বিকেল আগেই গড়িয়ে গিয়েছে। নিস্তেজ আলো ছাপিয়ে আকাশে তখন জমাট অন্ধকার। রাস্তার ধারের এক ছোট্ট ক্যাফেতে ধীরে ধীরে নিভে গেল সমস্ত আলো। ভিতরে রাখা সাদা পর্দায় ফুটে উঠলেন এলোকেশী এক যুবতী।
ধ্বংসপ্রায় দালানের চারপাশ ঘিরে সে ‘কুহকিনী একাকিনী’র ধীরলয়ে যাতায়াত। ইউটিউবের পর্দায় এ ভাবেই মুক্তি পেল ঋতম সেনের লেখা নতুন গানের মিউজিক ভিডিও, ‘এলোকেশে’।
শুক্রবার কসবার এক ক্যাফেতে জমায়েত হয়েছিলেন ঋতমের বন্ধুবান্ধব, গুণমুগ্ধরা। উপলক্ষ, ‘এলোকেশে’-র মুক্তি। আসরে ছিলেন দ্যুতি মুখোপাধ্যায়, সৌম্যদীপ মুর্শিদাবাদী, প্রসেনরা। ঋতমের কলমে ভাষা পেয়েছে এ গান। আর গানের কাঠামো গড়ার কাজে ছিলেন ‘মুর্শিদাবাদী প্রজেক্ট’-এর গায়ক সৌম্যদীপ মুর্শিদাবাদী। কণ্ঠের সঙ্গে সঙ্গে ‘এলোকেশে’র সুরও গড়েছেন যে সৌম্যদীপ!
আরও পড়ুন: নতুন জার্নি শুরু করলেন শোভনদেব
গানে আসর মাতালেন দ্যুতি মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
মূল গানের আগে অবশ্য মাইকের সামনে এসে আসর জমিয়েছেন বগা তালেব, প্রিয়ঙ্কা সাহা, দ্যুতি মুখোপাধ্যায়রা। প্রিয়ঙ্কা-দ্যুতির ডুয়েট ‘শুভরাত্রি প্রিয়তমা’ বা যন্ত্রসঙ্গীতহীন গলায় দ্যুতির ‘সময় যায়’ আসর মাত করেছে। সৌম্যদীপ মুর্শিদাবাদী মন ছুঁয়েছেন কবীরের দোঁহা, আমির খসরুর ‘মন কুন্তো মৌলা’ বা ‘যমুনা কিনারে মেরা গাঁও’-এর মতো কৃষ্ণভজন শুনিয়ে।
আরও পড়ুন: ‘আন্টি দিদুর কাছে দাদুর গল্প সে ভাবে শোনা হয়নি’
গান আর টুকরো কথার ফাঁকেই ঋতম বলেন, “শান্তিনিকেতন থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে রাইপুরের একটি ভাঙা বাড়িতে এই মিউজিক ভিডিওর শুটিং হয়েছে।” ভিডিওতে ‘এলোকেশে’র ভূমিকায় রয়েছেন শ্রীলঙ্কার হানিয়া লুৎফি। সঙ্গে দেখা গিয়েছে কৌস্তভ চক্রবর্তীকে। সেতার আর তবলার বোলে স্তিমিত সুরের মায়াজাল ছড়িয়েছে এ গানের গায়ে। ঋতমের কলমে ভিডিওর ক্যানভাস জুড়ে ফুটে উঠেছে একের পর এক ছবি। কখনও তিনি লিখছেন, ‘রূপসী কুয়াশায় অভিসারী মনবাসনা / কুহকিনী একাকিনী চুপিসারে আঁখি মুছো না’। আবার কখনও বা ‘অকারণে অভিমানে মায়ানিশি করো রচনা’ মতো লাইন।
ঋতম সেনের লেখা গানে শ্রোতাদের মন জয় করলেন সৌম্যদীপ মুর্শিদাবাদী। —নিজস্ব চিত্র।
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর হাত ধরে ঋতম সেন এখন আর অপরিচিত নন। ‘তোমাকে বুঝি না প্রিয়’-র রচয়িতার কলম থেকে এর আগে বেরিয়েছে ‘শুভরাত্রি প্রিয়তমা’ বা ‘মন আজি’-র মতো গান। বাংলা গানের মূল ধারায় নয়। বরং প্রসেন বা ঋতমের মতো শিল্পীরা যেন সচেতন ভাবেই নিজস্ব ঘরানা গড়ে তুলেছেন। কখনও ঋতম লিখেছেন, ‘তুমি আছো অনুভবে, দ্রুত পায়ে সরে আসি / এ আঁধারে মায়া বাড়ে, পারো যদি কোরো ক্ষমা / আশা রাখি দেখা হবে, শুভরাত্রি প্রিয়তমা।’ আবার কখনও বা ‘তোমাকে বুঝি না প্রিয় / বোঝো না তুমি আমায় / দূরত্ব বাড়ে যোগাযোগ নিভে যায়।’ ভাঙা প্রেম, অবুঝ মন, না-বলা কথা— ঋতমের কলম চুঁইয়ে ভাষা পেয়েছে এমন নানা রঙের অনুভূতি। নতুন গান ‘এলোকেশে’-তেও দেখা গেল সে ছোঁয়া।
দেখে নেওয়া যাক ‘এলোকেশে’-র মিউজিক ভিডিও
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy