পাপন। ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।
ক্ষমা চাইলেও নাবালিকাকে চুমু খাওয়ার ঘটনায় গায়ক অঙ্গরাগ মহন্ত নিস্তার পাচ্ছেন না। অসম ও মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। রিয়ালিটি শোয়ের বিচারক পদ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন পাপন। পাপনের চুম্বনকাণ্ড নিয়ে দ্বিখণ্ডিত শিল্পী মহলও।
পাপনের ফেসবুক ভিডিওয় দেখা যায়, একটি রিয়ালিটি শো’তে বাচ্চাদের নিয়ে দোলের শ্যুটিংয়ের ফাঁকে মজা করার সময় অঙ্গরাগ এক কিশোরীকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খান। সেই চুম্বন নিয়ে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনে নালিশ ঠুকেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি রুণা ভুঁইঞা। বিজেপি নেতা সুব্রমহ্মম স্বামীর মতে, পাপী পাপনকে ধর্ষণের মামলায় সাজা দেওয়া উচিত।” পাপন নিজে ভুল স্বীকার করে বলেছেন, "ওই ভাবে মেয়েটিকে ধরা ঠিক হয়নি। কিন্তু ঘটনাটি স্নেহের বহিঃপ্রকাশমাত্র।" অসমের মঙ্গলদৈয়ের বাসিন্দা মেয়েটির বাবাও বলেছেন, পাপন মেয়েটির গুরুদেব। যা করেছেন আবেগ ও স্নেহের বশে করেছেন।
আজ খোদ মেয়েটি নিজে ও অন্যান্য কিশোরী প্রতিযোগিরা ভিডিও বার্তা আপলোড করে। মেয়েটি বলে, "পাপন স্যার যা করেছেন আমায় ভালবেসে করেছেন। বাবা-মা যে ভাবে আমায় আদর করে, চুমু খায়, পাপন স্যারও তাই করেছেন। কিছুই খারাপ করেননি।" অন্য এক কিশোরী প্রতিযোগীও বলে, "পাপন স্যার আমাদের বাবা-দাদার মতো। কখনও বাড়ির অভাব বুঝতে দেননি। এত ভাল স্যারকে নিয়ে যে নোংরা করা হচ্ছে তা খুব অন্যায়।"
কিন্তু মহারাষ্ট্রের নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর নির্দেশে মুম্বই পুলিশ ইতিমধ্যে ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। অসমের নারী ও শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনীতা চাংকাকতি পাপনের বিরুদ্ধে গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনারকে অভিযোগপত্র জমা দেন। কমিশনার হীরেণ নাথ জানান, দিসপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভাষ্য নিতে পাপনকে তলব করা হবে।
পাপন ওই শোয়ের বিচারক ও গুরুর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করে আজ টুইটে লেখেন, "আমি আর পেশাদার কাজের মানসিকতায় এখন নেই। তাই বিচারকের পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। যতদিন না বিতর্ক শেষ হচ্ছে ও আমার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হচ্ছে ততদিন আমি সরে থাকতে চাই। আইনে আমার আস্থা রয়েছে। সত্য প্রকাশ পাবে। আশা করি আমার ব্যক্তিগত জীবনকে সম্মান করা হবে।"
আরও পড়ুন, কেউ চাইছেন গ্রেফতারি, কেউ বলছেন পাপন ভাল মানুষ
কামরূপ জেলা শিশু সুরক্ষা অফিসার মালবিকা কলিতার মতে, "তারকা বলে বা 'আইন জানতাম না' বলে এ ক্ষেত্রে কেউ পার পেতে পারেন না। পাপন যা করেছেন তা অবশ্যই আইনত দণ্ডনীয়।" রুণাদেবীর মতে, "যদি মেয়েটি বা তাঁর পরিবার ঘটনাটি নিয়ে আপত্তি নাও করে, তাও মামলা চালানো যায়। কারণ, চ্যানেলের চাপ, তারকার চাপ, ভবিষ্যতের স্বপ্ন সামনে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ও কিশোরী এ নিয়ে বিতর্ক চাইবে না। আমার সঙ্গে পাপনের কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। আমি নিজেও তাঁর গানের বড় ফ্যান। কিন্তু কোনওভাবেই পাপনের ওই ব্যবহার মানা যায় না। এতগুলি মেয়েকে নিয়ে শুটিং করা ও তাঁদের গুরু হিসেবে থাকায় পাপনকে আরও বেশি দায়িত্ববান হতে হত।" তিনি জানান, পাপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তাঁকে অনেকেই অনলাইনে হুমকি দিচ্ছে, গালি দিচ্ছে।
গায়ক জুবিন গর্গ বলেন, "পাপনের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। আমি নিশ্চিত ও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু করেনি। অযথা বিতর্ক বাড়ানো ঠিক নয়।"
কোরিওগ্রাফার ও পরিচালক ফারহা খানের মতে, "আমি পাপনকে চিনি। খুবই ভাল মানুষ ও। কিন্তু যদি আমার মেয়ের সঙ্গে এমন কেউ করত আমি মোটেই তা পছন্দ করতাম না।" অভিনেত্রী রবিনা টন্ডন টুইট করেন, পাপন যা করেছে তার কোনও অজুহাত হয় না। তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত।
ওই রিয়ালিটি শোয়ের অন্যতম বিচারক শান প্রথমে পাপনকে সমর্থন করে টুইটে লেখেন, "আমার মনে হয় চুমুটা ঠোঁটে ছিল না। ক্যামেরার অ্যাঙ্গলটা ভুল ছিল। পাপন খুবই ভালমানুষ ও স্নেহপ্রবণ। ওকে 'বিকৃতকাম' বলা ঠিক নয়। তবে আইন নিজের মতো চলবে।" পরে অবশ্য টুইটটি মুছে দেন তিনি।
আরও পড়ুন, ফেসবুক লাইভে হঠাত্ চুমু খেয়ে বসলেন পাপন!
অভিনেত্রী গওহর খান টুইটারে লেখেন, "ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলে ভুল ছিল না। পাপন ওই কিশোরীর সঙ্গে যা করেছেন- তা মোটেই বাবার মতো স্নেহ ছিল না। ইচ্ছে করিই মেয়েটির ঠোঁটে চুমু খেয়েছে সে।" গায়িকা-অভিনেত্রী সুচিত্রা কৃষ্ণমূর্তির মতে, "পাপনের মতো আমার মেয়ের সঙ্গে কেউ ওরকম করলে ঠাস ঠাস করে চড় মারতাম। যাতে আর কেউ এমন করার সাহস না পায়।"
সেন্সর বোর্ডের প্রাক্তন প্রধান পহলাজ নিহলানির মতে, বাচ্চাদের নিয়ে করা রিয়ালিটি শোয়ের বিচারকদের আরও অনেক ভদ্র আচরণ করা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy