মদ্যপানে 'না'-তে জোর সমালোচনা।
ছবিতে ধূমপান বা মদ্যপানের কোনও দৃশ্য থাকলে তা নিষিদ্ধ করার জন্য সেন্সর বোর্ডের তরফ থেকে অর্ডার ইস্যু হয়েছে মঙ্গলবার। বোর্ড প্রধান পহেলাজ নিহালনির নয়া সংস্কার! সেন্সর বোর্ডের তরফ থেকে লিখিত বিবৃতি জানানো হয়েছে, সুপারস্টারকে কোটি কোটি মানুষ অনুসরণ করেন। তাঁদের অনস্ক্রিন ধূমপান ও মদ্যপান করতে দেখলে সমাজে সঠিক বার্তা পৌঁছয় না। ওই দৃশ্য সত্যিই প্রয়োজনীয় হলে তার কথা আলাদা। যদিও কোন দৃশ্য সত্যি প্রয়োজনীয়, তার মাপকাঠি ঠিক কী, তার ব্যাখ্যা সেন্সর বোর্ডের তরফ থেকে পাওয়া যায়নি। বরং নিহালনির ব্যখ্যা, ‘‘যদি কোনও ছবিতে মদ্যপান প্রয়োজনীয় হয়, সে ক্ষেত্রে অ্যাডাল্ট সার্টিফিকেট দিতে হবে।’’
আরও পড়ুন- সিনেমায় সিগারেট বা মদ নয়,মন্তব্য নিহালনির
পরিচালকদের কাছে এই দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত? মুখ খুললেন টলিউডের তিন পরিচালক।
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়
প্রথম কথাই হল, গণতান্ত্রিক দেশে সেন্সর বোর্ড বলে কিছু থাকা উচিত বলে আমি মনে করি না। সার্টিফিকেশন বোর্ড থাকতে পারে। কিন্তু ছবি থেকে কী সেন্সর করা হবে সেটা নির্দিষ্ট কেউ ঠিক করতে পারেন না। সিনেমা তো সমাজেরই প্রতিফলন। আর ধূমপান, মদ্যপান এ সবই সমাজে রয়েছে বলেই সিনেমায় দেখানো হয়। ছবির জন্য কী প্রয়োজন সেটা তো সিনেমা যাঁরা তৈরি করেন অর্থাত্ ফিল্মমেকার ছাড়া আর কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। সিনেমাকে দেখে অনুসরণ করার যে ব্যাপারটা সেন্সর বোর্ড বলেছে, তা হলে তো সিনেমা থেকে খুনের দৃশ্য সবার আগে বন্ধ হওয়া উচিত। আবার চুরি, ডাকাতিও তো দেখানো যাবে না, কারণ সেটা ফলো করবেন সকলে! আসলে এগুলো নানা ভাবে পশ্চাদাপসরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
ধূমপান বা মদ্যপান তো দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ। এটা তো জীবনের বাইরে নয়। আর ফেলুদা সিগারেট খেতেন, সেটাই তার চরিত্র। শার্লক হোমস পাইপ খেতেন, সেটাই চরিত্র। এ নিয়ম মানতে গেলে তো আর ফেলুদা তৈরি করা যাবে না। অথবা অ্যাডাল্ট সার্টিফিকেট দিয়ে ফেলুদার ছবি রিলিজ হবে। কী ভাবে প্রেজেন্ট করা হচ্ছে, সেটার ওপরই সবটা নির্ভর করে। আমাদের ‘বেলাশেষে’তে সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য ছিল। ‘ইচ্ছে’তে সিগারেট খাওয়া ছিল, চুম্বন দৃশ্যও ছিল। সেগুলোর তো প্রয়োজন ছিল বলেই রেখেছিলাম। আর সিগারেট বা মদ খাওয়া দেখালে সামাজিক ভাবে ভুল বার্তা পৌঁছনোর যে কথাটা বলা হয়েছে তা হলে তো ছবিতে খুনের দৃশ্যও আর রাখা যাবে না! সেটাও তো সঠিক বার্তা নয়। একটি শিশু তার বাবাকেও বাড়িতে সিগারেট খেতে দেখছে আবার সিনেমাতেও কোনও চরিত্রকে দেখছে। তাই বলেই কি সে সিগারেট খাবে? আমি তো বুঝতে পারছি না, এমন চললে সিনেমাটা কী করে হবে? শুধু তথ্যচিত্র তৈরি করতে হবে।
অরিন্দম শীল
আমি তো হাত তুলে দিয়েছি। আমার আর কিছুই বলার নেই। আসলে সিনেমাটাকে বোঝা প্রয়োজন। যে সততা, প্যাশন নিয়ে পরিচালক ছবি তৈরি করে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেন সেটা বোঝার ক্ষমতা সেন্সর বোর্ডের অধিকাংশের নেই। আর যে দেশের মানুষ মুরগি খাবে না শুয়োর— সেটাও সরকার ঠিক করে দেয় সে দেশে তো এটাই স্বাভাবিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy