Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Bollywood

নানাবতী মামলার ‘জট খুলল’ রুস্তম-এ

১৯৫৯ সাল। মুম্বই তখন বম্বে। বলিউডে তখন রাজত্ব করছেন রাজ কপূর। কিন্তু বম্বের সংবাদপত্রে তখন একটাই খবর ঝড় তুলেছিল। প্রেম আহুজা হত্যাকাণ্ড বা নানাবতী মামলা। ফিল্মের থেকেও ফিল্মি, রহস্যে মোড়া এই মামলা নিয়ে তখন উত্তাল বম্বে-সহ গোটা দেশ। আর ৫৭ বছর আগের সেই ঘটনা অবলম্বনেই লেখা বিপুল কে রাওয়ালের চিত্রনাট্য, অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘রুস্তম’।

সুদীপ দে
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৬ ১৪:১৪
Share: Save:

১৯৫৯ সাল। মুম্বই তখন বম্বে। বলিউডে তখন রাজত্ব করছেন রাজ কপূর। কিন্তু বম্বের সংবাদপত্রে তখন একটাই খবর ঝড় তুলেছিল। প্রেম আহুজা হত্যাকাণ্ড বা নানাবতী মামলা। ফিল্মের থেকেও ফিল্মি, রহস্যে মোড়া এই মামলা নিয়ে তখন উত্তাল বম্বে-সহ গোটা দেশ। আর ৫৭ বছর আগের সেই ঘটনা অবলম্বনেই লেখা বিপুল কে রাওয়ালের চিত্রনাট্য, অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘রুস্তম’। ছবিটির পরিচালক টিনু সুরেশ দেশাই। ছবিতে ঘটনা প্রায় একই, কিন্তু চরিত্রগুলির নাম পাল্টে গিয়েছে। নৌ সেনা অফিসার কেএম নানাবতী এখানে রুস্তম পাভরি (অক্ষয় কুমার)। নানাবতীর স্ত্রী সিলভিয়ার নাম পাল্টে এখানে সিন্থিয়া। সিন্থিয়ার প্রেমিক প্রেম আহুজার নাম বদলে এখানে হয়ে গিয়েছে বিক্রম মাখিজা(অর্জন বাজওয়া)। এ বার ‘রুস্তম’-এর গল্পে আসা যাক। ছুটিতে বাড়ি ফিরলেন নৌ সেনা অফিসার রুস্তম পাভরি। বাড়িতে ফিরে জানতে পারেন স্ত্রী গত দু’দিন ধরে বাড়িতে নেই। তিনি বেড়িয়েছেন তাঁর বন্ধু বিক্রম মাখিজার সঙ্গে। এর পর স্ত্রীর আলমারি ঘেঁটে রুস্তম খুঁজে পান তাঁর স্ত্রীকে লেখা বিক্রম মাখিজার বেশ কিছু ‘প্রেম পত্র’। স্ত্রী বাড়ি ফিরতেই রুস্তম তাঁকে বুঝিয়ে দেন তাঁর ‘গোপন প্রণয়’-এর খবর তিনি জেনে গিয়েছেন। এর পরই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে নিজের সার্ভিস রিভলভার নিয়ে রুস্তম সোজা হাজির হন বিক্রমের বাড়িতে। তার পর বড়জোড় মিনিট দুয়েক। নিজের সার্ভিস রিভলভার থেকে পর পর তিনটি গুলি। সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু বম্বের কোটিপতি ব্যবসায়ী বিক্রম মাখিজার। তার পর নৌ সেনা কমান্ডার নিজেই আত্মসমর্পণ করেন বম্বে পুলিশের কাছে। বম্বের একটি নিম্ন আদালতে মামলা শুরু হয়। কিন্তু অদ্ভুতভাবেই বিক্রম মাখিজাকে খুন করে আত্মসমর্পণ করার পরও আদালতে দাঁড়িয়ে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন তিনি। খুন করেও কেন নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করলেন নৌ সেনা কমান্ডার! এ বার জেনে নেওয়া যাক ৫৭ বছর আগের সেই নানাবতী মামলার কিছু কথা। ঠিক কী ঘটেছিল তখন!

১৯৫৯ সালে প্রেম আহুজা হত্যাকাণ্ডে নাম জড়ায় নৌসেনা অফিসার কে এম নানাবতীর। ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় হয় গোটা দেশ। মামলা চলাকালীন কিছু তথ্য উঠে আসে মামলার বিচারক, জুরি এবং সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে। জানা যায়, নানাবতীর স্ত্রী সিলভিয়ার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন এই প্রেম আহুজা আর এই পরকীয়ার কারণেই খুন হতে হয় তাঁকে। এই মামলা চলাকালীন অদ্ভুত ভাবেই দেশের মিডিয়া এবং জনসাধারণের বিপুল সমর্থন পেয়ে যান কেএম নানাবতী। মামলা চলাকালীন মহারাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী ট্যাবলয়েড নানাবতীর সমর্থনে এগিয়ে আসে। এমন ভাবে প্রচার চালায় যে, ওই সময় প্রায় জাতীয় নায়ক হয়ে ওঠেন তিনি। এই খুনের মামলায় বম্বের নিম্ন আদালতে শেষ পর্যন্ত নির্দোষ প্রমাণিত হন নানাবতী। এ পর্যন্তই দেখানো হয়েছে ‘রুস্তম’-এ। আজও অনেকেই মনে করেন মামলার এই রায় গভীরভাবে মিডিয়া এবং জনমত দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। ভারত সরকারও এই মামলার পরই দেশের বিচার ব্যবস্থা থেকে জুরি ব্যবস্থার অবলুপ্তি ঘটান। কিন্তু বম্বে হাইকোর্ট প্রেম আহুজা হত্যাকাণ্ডে নৌ সেনা অফিসার কে এম নানাবতীকে দোষী সাব্যস্ত করে। তিন বছর জেলে কাটানোর পর নানাবতীকে ক্ষমা করেছেন বলে লিখিতভাবে জানিয়ে দেন প্রেম আহুজার বোন। এর পর মহারাষ্ট্রের তত্কালীন রাজ্যপাল বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত নানাবতীর সাজা মাফ করে তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দেন। জেল ছেকে ছাড়া পেয়ে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে কানাডায় গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন কে এম নানাবতী।

খুন করেও সে সময় তিনি দেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছিলেন জাতীয় নায়ক। কিন্তু দেশে বিপুল জনসমর্থন পেয়েও কেন দেশ ছেড়ে চলে গেলেন জনপ্রিয় এই নৌ সেনা অফিসার! এ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। আর এখান থেকেই ‘রুস্তম’ তার চিত্রনাট্যে বদল এনেছে। আর এই পরিবর্তন বেশ মুখরোচক এবং যথাযথ বলেই মনে হয়েছে। গল্পের একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে এই খুনের তদন্তের দায়িত্বে থাকা বম্বে পুলিশের অফিসারকে এই খুনের পেছনের ‘আসল কাহিনি’ জানাচ্ছেন রুস্তম। আর যা জানাচ্ছেন, তাতে বাস্তবে বিপুল জনসমর্থন পেয়েও নানাবতীর দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ খুঁজে পাবেন দর্শক। তবে এটা নিছক চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে তৈরি হওয়া একটা কারণ মাত্র। যদিও ব্যাপারটা বেশ মানানসই এবং গ্রহনযোগ্য। এ ছবির চিত্রনাট্য বেশ ভাল। অক্ষয় কুমার, ইলিয়ানা, এশা গুপ্তা, অর্জন বাজওয়া এবং বম্বে পুলিশের অফিসারের ভূমিকায় পবন মালহোত্রার অভিনয় মন্দ নয়। তবে ছবির সঙ্গীত মোটামুটি। ‘রুস্তম’-এর কাহিনি প্রবাহ নির্মাণে যথেষ্ঠ ফাঁক থেকে গিয়েছে। পরিচালক টিনু সুরেশ দেশাইকে তাঁর দ্বিতীয় ছবিতে, আগের ছবির (১৯২০ লন্ডন) তুলনায় কিছুটা পরিণত মনে হলেও তাঁকে ‘ফুল মার্কস’ দেওয়া গেল না।

তবে খুনের পেছনের ‘আসল কাহিনি’ জানতে বা বাস্তব ঘটনা নির্ভর এই চিত্রনাট্যের দুর্দান্ত কাল্পনিক ক্লাইম্যাক্স জানতে আপনাকে অবশ্যই সিনেমা হলে যেতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE