দিশারি: চলচ্চিত্র উৎসবের অনুষ্ঠান মঞ্চ। নিজস্ব চিত্র
পুজোর আগে তিন দিন ধরে এক অন্য উৎসবের স্বাদ পেল রবিশঙ্কর, অর্ঘ্য, দীপাঞ্জনরা।
স্কুলে গিয়ে কাউকে ক্লাস করতে হল না। তারা সিনেমা দেখল। ইয়া বড় পর্দায়! তিন দিনে তিনটে সিনেমা— ‘পাকারাম’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ এবং আমির খানের ‘দঙ্গল’।
হাওড়ার আমতার মোল্লারচক গ্রামের কচিকাঁচারা গ্রামের শিবমন্দির চত্বরে নানা অনুষ্ঠান দেখতেই অভ্যস্ত। তা বলে গ্রামের স্কুলে শিশু চলচ্চিত্র উৎসব! প্রথমে চমকেই গিয়েছিল ওই কচিকাঁচারা। অবাক হন গ্রামবাসীও। কিন্তু বৃহস্পতিবার যখন মোল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মণ্ডপ হল, বড় পর্দা টাঙানো হল, প্রজেক্টর বসানো হল, দলে দলে ভিড় জমল। শুধু স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই নয়, ওই সন্ধ্যায় বড় পর্দায় সিনেমা দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন বড়রাও। তাঁরা সাহায্যেরও হাত বাড়িয়ে দেন।
মোল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগে ‘শিশু চলচ্চিত্র উৎসব’ এই প্রথম। গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দাই কৃষিজীবী। এখানে সিনেমা হল নেই। আমতা শহরের একমাত্র সিনেমা হলটিও দীর্ঘদিন বন্ধ। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে টিভি আছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে ছোটদের সিনেমা দেখার সময়-সুযোগ কচিকাঁচারা তেমন পায় না বললেই চলে। আর সেই কারণেই বড়পর্দায় ছোটদের সিনেমা দেখানোর ভাবনা বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক দেবাশিস হাজরা বললেন, ‘‘কলকাতা বা বড় শহরে শিশু চলচ্চিত্র উৎসব হয়। সেখানে যাওয়ার ক্ষমতা গ্রামের ছেলেমেয়েদের নেই। তা হলে তারা কি বড় পর্দায় সিনেমা দেখতে পারবে না? এ কথা ভেবেই এই উৎসবের আয়োজন।’’ আমতা পূর্ব চক্রের স্কুল পরিদর্শক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাল উদ্যোগ। প্রস্তাবটি আসার সঙ্গে সঙ্গে অনুমোদন করি। যে তিনটি ছবি দেখানো হয়, সেগুলি শিক্ষামূলক। এটা তো শিক্ষার অঙ্গ।’’
স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১০৫। মোল্লারচক এবং পাশের কুমারচক গ্রামের কচিকাঁচারাই এখানে পড়ে। প্রথম দিন স্কুলের মাঠে উৎসবের উদ্বোধন হয়। প্যান্ডেল করে দেখানো হয় ‘পাকারাম’। খরচের অনেকটাই চাঁদা তুলে জোগাড় করে গ্রামের ষোলো আনা কমিটি। দ্বিতীয় এবং তৃতীয়ে দিনে অবশ্য স্কুলের হলঘরে সিনেমা দেখানো হয়। দ্বিতীয় দিন স্কুলে এসেছিলেন আমতা-১ ব্লকের বিডিও লোকনাথ সরকার। তিনিও উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
স্কুলের এই উদ্যোগে গ্রামবাসীরা আপ্লুত। ষোলো আনা কমিটির পক্ষে ভবতারণ মণ্ডল বলেন, ‘‘লেখাপড়ার সঙ্গে সংস্কৃতি-চর্চারও দরকার। আমাদের বাড়ির ছেলেরা সিনেমা হলে যাওয়ার সুযোগ পায় না। স্কুলে বসেই যদি তারা এই সুযোগ পায়, এর থেকে আনন্দের আর কী আছে!’’
আপ্লুত রবিশঙ্কর দলুই, অর্ঘ্য দলুই, দীপাঞ্জন কুণ্ডুর মতো ছাত্রছাত্রীরাও। শনিবার ‘দঙ্গল’ শেষের পরেই তারা পরের বছরেও এই উৎসবের দাবি জানিয়ে বসেছে শিক্ষকদের কাছে।ো
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy