Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

আরডি ‘এক্স’

বৃষ্টি খুব ভালবাসতেন আরডি বর্মণ। বৃষ্টির ফোঁটার শব্দ শোনার জন্য নাকি সারা রাত নিজের ব্যালকনিতে বসে থেকেছেন অনেক দিন। রেকর্ড করতেন বৃষ্টির আওয়াজ।

চেনা মেজাজে পঞ্চম। ছবি: ফাইল

চেনা মেজাজে পঞ্চম। ছবি: ফাইল

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ১৪:১৮
Share: Save:

অঙ্ক কষতে গিয়ে হামেশাই অজানা সংখ্যাকে ‘এক্স’ ধরে শুরু করি। তবে আরডি-র নামের পাশে লেখা এই ‘এক্স’-এর অর্থ কিন্তু এক্কেবারে আলাদা। আরডি বর্মণের মিউজিক্যাল জার্নিতে যে সব চমকে দেওয়া ‘এক্সট্রা’ ফ্যাক্টরগুলো কাজ করেছে, যে কারণে তাঁর গান মানুষের মনকে মাতিয়েছিল, সেই ‘এক্সট্রা’ ফ্যাক্টরটা জুড়েই তো এই আরডি ‘এক্স’। এই বাড়তি দক্ষতাই আর ডি-কে শুধু সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নয়, ভারতীয় সঙ্গীত ও চলচ্চিত্র জগতের এক অসামান্য এবং অবশ্যই অপ্রতিদ্বন্দ্বী স্রষ্টার মর্যাদা এনে দিয়েছিল।

আজ, ২৭ জুন, রাহুলদেব বর্মণের ৭৯তম জন্মদিন। এমন দিনে এই কিংবদন্তী মিউজিশিয়ানকে আমরা ফিরে দেখব এমন কিছু ‘এক্স’ ফ্যাক্টর দিয়েই।

শচীনদেব বর্মণের একমাত্র ছেলে রাহুল। ঠাকুমা ডাকতেন ‘টুবলু’ নামে। তবে ‘পঞ্চম’ নামেই আরডি-র সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা। আর এই ‘পঞ্চম’ নামটি তাঁকে দিয়েছিলেন অভিনেতা অশোক কুমার। প্রথম থেকেই তিনি যেন স্পেশাল। মাত্র ন’বছর বয়সে যে ছেলে প্রথম গান তৈরি করে ফেলে, তাকে বিশেষ গুণের অধিকারী ছাড়া আর কী বা বলা যায়। শুধু গান তৈরি করে যাওয়াই নয়, ভারতীয় সঙ্গীত জগতে সুর, ছন্দ, যন্ত্র নিয়ে যে বিচিত্র পরীক্ষানিরীক্ষা করে গেছেন অসাধারণ সাফল্যের সঙ্গে, তার তুলনা নেই। তাঁর সেই ‘এক্স’ ফ্যাক্টরগুলির জন্যই তিনি আরও বেশি অনন্য।

ছোটবেলায় রাহুলদেব। ছবি: ফাইল

‘এক্স’ ইনস্ট্রুমেন্ট

‘হ্যায় আপনা দিল তো আওয়ারা’ গানটি মনে পড়ছে? গানটি কম্পোজ করেছিলেন শচীনদেব বর্মণ। সেই গানে নিজে হারমনিকা বাজিয়েছিলেন পঞ্চম। এ দেশে তিনিই প্রথম ইলেকট্রনিক অর্গানের সঙ্গে ভারতীয় চলচ্চিত্রের শ্রোতা ও দর্শককে পরিচয় করিয়েছিলেন। গানটি ছিল ‘ও মেরে সোনা রে’। রক মিউজিকের আঙ্গিকে বলিউড গান তৈরি করেছিলেন আরডি। এ ছাড়া গানে চেলো ও বাজ গিটারের সুর তাঁর হাতেই প্রথম শুনেছি আমরা। পশ্চিমি, লাতিন, আরবি ঘরানার মিউজিক ব্যবহার করার জন্য বিদেশ থেকে বহু বাদ্যযন্ত্র আনিয়েছিলেন তিনি।

‘এক্স’ স্পেশাল সাউন্ড

এক দিন আশা ভোঁসলেকে নিয়ে শপিং-এ বেরিয়েছেন। তার পর চলে গেছেন লং ড্রাইভে। শপিং-এর কথা মাথা থেকে বেমালুম উধাও। আশা সে কথা মনে করানোর পর দু’টো কাচের গ্লাস কিনে বাড়ি ফেরা। আর সেই কাচের গ্লাসে চামচ ঠুকেই নাকি ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে জো দিলকো’-র মিউজিক কম্পোজ করে ফেলেন। কিতাব’-ছবিতে ‘মাস্টারজি কি আ গয়ি চিঠ্ঠি’-গানে ডেস্ক বাজিয়ে রেকর্ডিং করিয়েছিলেন পঞ্চম। তার জন্য একটা স্কুল থেকে কয়েকটা ডেস্ক আনিয়ে নিয়েছিলেন।

বৃষ্টি খুব ভালবাসতেন আরডি বর্মণ। বৃষ্টির ফোঁটার শব্দ শোনার জন্য নাকি সারা রাত নিজের ব্যালকনিতে বসে থেকেছেন অনেক দিন। রেকর্ড করতেন বৃষ্টির আওয়াজ। এক বার একটি গানে খালি বোতলে ফুঁ দিয়ে হলো সাউন্ড তৈরি করেছিলেন আরডি। আর এক বার ‘ও মাঝি রে’ গানে জল ভর্তি বোতলের শব্দ ব্যবহার করেছিলেন।

রিহার্সাল। ছবি: ফাইল

‘এক্স’ গানের-গল্প

নিজের জীবনের বহু ঘটনা থেকেও পেশাদার জগতের গান বেঁধেছেন আরডি। তাঁর প্রথম স্ত্রী রিতা পটেল। তাঁর সঙ্গে দার্জিলিঙে আলাপ। রীতা নাকি আরডি-র গানের ফ্যান ছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে এক দিন পঞ্চমের সঙ্গে ছবি দেখতে যান। ১৯৬৬-তে বিয়ে। যদিও ৭১-এই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বিবাহ-বিচ্ছেদের পরের বছর ‘পরিচয়’ ছবির জন্য ‘মুসাফির হুঁ ইয়ারো’ গানটি লিখেছিলেন পঞ্চম।

‘সনম তেরি কসম’ ছবির গান রিহার্সালের সময় নিশা নামে এক কোরাস শিল্পী ঢুকতেই তিনি নাকি মজা করে বলেছিলেন, ‘নিশা আহা হা আহা হা’। কী আশ্চর্য! সেই শব্দগুলোই পরে তিনি গানে ব্যবহার করেন। বাকিটা বলার কিছু নেই। সুপারহিট হয়েছিল সেই গান।

আরও পড়ুন, জন্মদিনে আরডি-র কিছু গল্প, আপনি জানেন তো?

‘এক্স’ অভিনয়

অল্প হলেও ছবিতে অভিনয়ও করেছেন আর ডি। অভিনয় করেছিলেন ‘ভূত বাংলা’ ও ‘প্যায়ার কা মৌসম’ ছবিতে।

‘এক্স’ এভারগ্রিন সৃষ্টি

আজও তাঁর গানেই রেডিও স্টেশনগুলোর শো শুরু হয়। রিয়্যালিটি শো থেকে অ্যাওয়ার্ড সেরিমনি। তাঁর তৈরি ‘ফাস্ট নাম্বার্স’ এখনও এক নম্বর পছন্দ। তাঁর তৈরি বিভিন্ন গানের রিমিক্সও পরবর্তীতে অনেক ছবিতে ব্যবহার হয়েছে। এখনও হচ্ছে। তা সে রণবীর কপূরের মুখে ‘বচ না অ্যায় হাসিনো’ হোক, দীপিকার নাচে নতুন ‘দম মারো দম’ অথবা সোনাক্ষীর মুখে ‘গুলাবি আঁখে জো তেরি দেখি’ হোক। এ সব গানের সৃষ্টি তো পঞ্চমেরই হাতে।

মৃত্যুর ২৩ বছর পরও তাঁর সৃষ্টিতে মজে গোটা দেশ। পঞ্চমদার স্মৃতি রোমন্থন করে সঙ্গীতশিল্পী ঊষা উত্থুপ বললেন, ‘‘তিনি এক জন কমপ্লিট আর্টিস্ট। আজও তাঁর গান নিয়েই কত শিল্পী বেঁচে রয়েছেন। কত স্টেজ শো-তে শুধু তাঁর গান গাইলেই দর্শক আনন্দে মেতে ওঠে। কারণ, পৃথিবীর নিয়ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা নন, তাঁর সৃষ্টিটাই বড়।’’

ঊষা উত্থুপ ও রাহুলদেব বর্মণ। ছবি: ফাইল

আজ তাঁর জন্মদিনে আরডি বর্মণের স্মৃতি ভিড় করছে আমাদের মনেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE