ছবিতে স্বস্তিকা।
ইচ্ছেটা ছিলই। উপায়ও ছিল না এমন নয়। তবে ভাবনারা ডানা মেলতে কিছুটা সময় নিল। সেই ভাবনার নাম ‘স্পিনিং আ ইয়ার্ন’। নেপথ্য কারিগর ফ্যাশন ডিজাইনার শুচিস্মিতা দাশগুপ্ত। ২০০৪-এ তৈরি তাঁর নিজস্ব কোম্পানি ‘নেক্সটাইলস’-এর এ এক অন্য উড়ান।
ট্র্যাডিশনাল টেক্সটাইল নিয়ে রঙমিলান্তি খেলেন শুচিস্মিতা। স্বপ্নেরা আশ্রয় পায় তাঁর ডিজাইন করা শাড়ির আঁচলে, কখনও বা ধুতি-কুর্তায়। সম্প্রতি নিজস্ব ওয়েবসাইটও লঞ্চ করলেন তিনি। সঙ্গে মুক্তি পেল ফ্যাশন নিয়ে তৈরি শর্ট ফিল্ম ‘স্পিনিং আ ইয়ার্ন’। আর্ট ও টেক্সটাইলের যুগলবন্দি। বার্লিন ফ্যাশন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শর্ট লিস্টেড হয়েছে উত্সব মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবিটি।
আরও পড়ুন, ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা সবাই একে অন্যের পিঠ চুলকোচ্ছি
প্রজেক্টের মাস্টারমাইন্ড নিশ্চয়ই আপনি? ‘‘একবারেই নয়’’— বললেন শুচিস্মিতা। তা হলে আইডিয়াটা কার? ব্যাক স্টোরিটা শেয়ার করলেন ডিজাইনার। তাঁর কথায়, ‘‘ওয়েবসাইটা যখন তৈরি হল, ভেবেছিলাম আমার কাছে পুরনো যা ছবি আছে সেগুলো নিয়ে কিছু একটা করব। উত্সবকে বললাম। ও বলল, শুট করব। প্রথমে একটা বাড়িতেই শুট করব ভেবেছিলাম। কিন্তু সেটা পাওয়া গেল না। এদিকে কয়েক জনের ডেটও নেওয়া ছিল। তখন বাগবাজারে একটা জায়গা ভাড়া করে শুট করলাম। সেটার ফুটেজ দেখে সবাই খুব এক্সাইটেড ছিল। তারপর তো ফুলিয়াতেও শুট হয়েছে। একদিকে ওই বাড়িটা না পেয়ে ভালই হয়েছে।’’
ছবির একটি দৃশ্য।
এই প্রথম ফ্যাশন ফিল্ম তৈরি করলেন উত্সব। কী ভাবে ভেবেছিলেন? ‘‘এ ধরনের কাজ আমার প্রথম। শুরুতে গোটা টিমের কারও কাছেই পরিষ্কার ছিল না যে কী হতে চলেছে। আমি আসলে কিছু মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দি করতে চেয়েছিলাম। ফ্যাশন ফিল্ম মানেই যেখানে শুধু কস্টিউম নয়। ধরুন, দু’জন লোক বসে কথা বলছে। একটা ড্রামাটিক মোমেন্ট তৈরি হল। সেখানেই দর্শক দেখে নেবেন পোশাকটা। যখন চরকা কাটার দৃশ্য রয়েছে একজন তাঁতিকে ফ্রেমে রেখেছি। হয়তো ওই তাঁতির চরিত্রটা কোনও অভিনেত্রী করতে পারতেন। হয়তো ভালই করতেন। কিন্ত তাঁতির অভিজ্ঞতাটা তাঁর থাকত না। এই ছোট ছোট জিনিসগুলো ইনকরপোরেট করতে চেয়েছি’’ বললেন উত্সব।
আরও পড়ুন, ‘পোশাক কোনও কোনও ক্ষেত্রে উত্তেজনা তৈরি করে, এটা মেয়েরাও জানে’
দীর্ঘদিন ধরেই ‘নেক্সটাইলস’-এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। রয়েছেন এই ছবিতেও। কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? ‘‘বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারতে মারতে দারুণ দারুণ শাড়ি পরে ছবি তোলা। শুটিং বলে আলাদা কিছু মনেই হয়নি। একটা রবিবার প্রচন্ড আনন্দ করে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানোর অনুভূতি। তার এন্ড প্রডাক্টটা যদি এত সুখকর হয়, তা হলে এমন রবিবার আরও আসুক জীবনে।’’
ফ্যাশন ডিজাইনার শুচিস্মিতা দাশগুপ্ত।
‘কহানি’, ‘শব্দ’, ‘কাদম্বরী’, ‘অপুর পাঁচালী’-র মতো ছবির কস্টিউম ডিজাইন করেছেন শুচিস্মিতা। সেখান থেকে এটা একেবারে নিজের মতো করে অন্যধারার কাজ। কোনটা বেশি পছন্দের? শুচিস্মিতা বললেন, ‘‘দু’টোর মধ্যে কোনও কম্পিটিশন নেই। তবুও বলব, এটা বেশি কাছের। খুব এনজয় করেছি। সকলে নিজের বেস্টটা দিয়েছে। না হলে এটা সম্ভব ছিল না।’’
আরও পড়ুন, ‘যাঁরা সমালোচনা করছেন তাঁরাই নিয়মিত প্রত্যেকটা এপিসোড দেখছেন’
‘নেক্সটাইলস’ প্রথম থেকেই মূলত হ্যান্ডলুম নিয়ে কাজ করেছে। গোটা পরিকল্পনার পিছনে কি কোথাও বাংলার তাঁতিদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টাও ভেবেছেন? ডিজাইনার বললেন, ‘‘আমি যে তাঁতিদের সরাসরি খুব সাহায্য করতে পারি, এমন নয়। তবে এখন হ্যান্ডলুম পরাটা ফ্যাশন বলে মনে করেন অনেকে। সেখান থেকে জানতেও চান। আমার থেকে না কিনলেও অন্য কারও থেকে হয়তো নেবেন। আসলে এটা ঠিক প্রডাক্ট স্টোরি নয়, টেক্সটাইল স্টোরি করতে চেয়েছি। আমি যেটা ভালবেসে করি সেটা নিয়েই একটা গল্প।’’
ছবিতে স্বস্তিকা ও বিক্রম।
স্বস্তিকা ছাড়াও বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, সোনিকা চহ্বন, গৌরব চক্রবর্তী, ঋদ্ধিমা ঘোষ, মল্লিকা মজুমদার, খেয়া চট্টোপাধ্যায়কে দেখা যাচ্ছে এই শর্টফিল্মে। চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনা করেছেন গৈরিক সরকার। মিউজিকের দায়িত্ব সামলেছেন রাজনারায়ণ দেব। প্রথম প্রয়াসটা ভাল লেগেছে তাঁর। তাই এ ধরনের উদ্যোগ আবার নেবেন বলেই জানালেন শুচিস্মিতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy