তিন টেক্কার চালে বাজিমাত করল সুলতান। যশরাজ ফিল্মস, ইদের দিন মুক্তি এবং সব কিছু ছাপিয়ে ছবিতে সলমনের উপস্থিতি— এই তিনে মিলে ছবিটির বড়সড় সাফল্য যে আসবেই এটা তো অনেকেই অনুমান করেছিল। তা ছাড়া প্রায় ফাঁকা মাঠেই গোল দিল যশরাজ প্রডাকশন। কারণ, একই দিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল শাহরুখ খানের ছবি ‘রইস’-এরও। ‘রইস’-এর মুক্তির দিন পিছিয়ে দিয়ে ‘সুলতান’ বক্স অফিস জয়ের পথ আগেই প্রশস্থ করে দিয়েছিলেন শাহরুখ। তাই ছবি মুক্তির পর সুলতান সকলের প্রত্যাশা পূরণের দিকেই এগোচ্ছে। ৯০ কোটি টাকা বাজেটের এই ছবির মুক্তির প্রথম দিনেই আয় হয়েছে ৩৬.৫৪ কোটি টাকা। সপ্তাহে বাকি আরও চার দিন। এমনিতেই সলমনের যে কোনও ছবি অনায়াসেই ১০০ কোটির বেঞ্চমার্ক পেরিয়ে যায়। তবে আলি আব্বাস জাফর পরিচালিত এই ফিল্মটির থেকে বলিউড বক্স অফিসের প্রত্যাশা অনেকটাই বেশি।
এ বার ছবির গল্পে আসা যাক।
ছবিতে এক দিশাহীন প্রাণবন্ত যুবক সুলতান আচমকাই প্রেমে পড়ে যান আরফার। আরফা এলাকার একজন নামী কুস্তি প্রশিক্ষকের মেয়ে। আরফা নিজে কুস্তিতে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন। তাই কুস্তিগীর যুবতীর প্রেমে পাগল সুলতান কুস্তির দুনিয়ায় পা রাখলেন আরফার মন জয়ের আশায়। আরফার পাশাপাশি কুস্তিকেও ভালবেসে ফেললেন। সবাইকে চমকে দিয়ে সুলতান হয়ে গেলেন রাজ্য চ্যাম্পিয়ন। অর্থাত্, ছবির সেই দিশাহীন যুবক শুধু রাজকন্যাই পেলেন না, জিতলেন গোটা রাজ্য।
এর পর শুরু সুলতান-আরফার দেশ ও বিশ্বজয়ের যুগ্ম অভিযান। এখানেও অনায়াসে জয় পেলেন দু’জন। এর পর অলিম্পিকেও মনোনীত হলেন সুলতান-আরফা। কিন্তু সন্তানসম্ভবা আরফা ছিটকে গেলেন অলিম্পিকের পদক জয়ের দৌড় থেকে। সুলতান কিন্তু থেমে থাকেননি। এ বারেও অনায়াসেই অলিম্পিকে সোনা জিতলেন তিনি। সাফল্যের সঙ্গে বাড়তে থাকল অহঙ্কার। গ্রামের সরল, সাদামাটা সুলতানের তেজে তখন সকলেই ফিকে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু একটা ধাক্কা সব কিছুকে ওলট পালট করে দিল। আর তাতেই কুস্তির জগত থেকে সরে এলেন সুলতান। তবে যে কারণে কুস্তি থেকে তাঁর অকাল অবসর, সেই একই কারণে বছর খানেক বাদে আবার আন্তর্জাতিক ফ্রি স্টাইল রেসলিং প্রতিযোগিতার রিংয়ে সুলতানের প্রত্যাবর্তন ঘটে। এ বার কঠিন পরিশ্রম, আর সাংঘাতিক জেদ তৈরি করল আর এক নতুন সুলতানকে। এই সুলতান আগের চেয়েও দুর্ধর্ষ এবং আগের চেয়ে অনেক বেশি বিনয়ী। এ বারেও সবাইকে অবাক করে দিশি ‘ধোবি পাছাড়’-এ আন্তর্জাতিক রেসলিং প্রতিযোগিতা জিতে নিলেন তিনি। ছবির গল্প মোটামুটি এই রকমই।
কিন্তু একটা ফিল্মের বাণিজ্যিক দিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও ছবির চিত্রনাট্য, অভিনয়, অ্যাকশন, আবহ সঙ্গীতের মতো বিষয়গুলিকে হেলাফেলা করলে ছবির সার্বিক সাফল্য মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।
এ বার ‘সুলতান’-এর সে দিকগুলির বিষয়ে আলোচনায় আসা যাক।
ছবির সিংহ ভাগ জুড়ে সলমনের উপস্থিতি দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হলেও এ ছবির বেশ কিছু ত্রুটি যথেষ্ট চোখে লাগে। যেমন, ছবিতে সেই ষাট-সত্তরের জামানার হিন্দি ছবির কায়দায় রাস্তায় আচমকা ধাক্কায় মুখোমুখি হন সুলতান আর আরফা। আর তাতেই আরফার প্রেমে পড়ে যায় ছবির নায়ক। অর্থাত্, সেই পুরনো ছক। তাছাড়া, যুবতির মন জয় করতে ত্রিশ বছর বয়সে কুস্তির দুনিয়ায় পা রেখে বড় সহজেই বিশ্বজয় করে ফেললেন সুলতান। সবচেয়ে বাড়াবাড়ি তো অলিম্পিকে তাঁর সোনা পাওয়ার ব্যপারটা। এ যেন নেপালের বিরুদ্ধে ফুটবল ম্যাচে ব্রাজিলের জেতার মতোই সহজ এবং স্বাভাবিক একটা ব্যপার! ব্যপারটা কি এতোই সহজ! তিনি ছবির নায়ক বলে অলিম্পিকের সোনার মেডেলও তাঁকে সহজেই পাইয়ে দিতে হবে!
ছবির আরও একটা অদ্ভুত ঘটনা ঠিক বোধগম্য হল না। বিশ্বজয়ী কুস্তিগীর যখন সন্তান হারানোর দুঃখে কুস্তি থেকে সন্যাস নিলেন, তখন ঠিক কোন অপরাধে তাঁর স্ত্রী তাঁকে ত্যাগ করে বাপের বাড়িতে কাটালেন বছরের পর বছর তার উত্তর অজানাই থেকে গিয়েছে। হয়তো সুলতানের কোনও সিক্যুয়ালে তা জানাবেন পরিচালক আলি আব্বাস জাফর!
আরও পড়ুন...
মুক্তি পেল সুলতান, ভাঙতে পারে বক্স অফিসের সব রেকর্ড
আর একটা কথা না বললেই নয়। সুলতান কিন্তু ‘চক দে’, ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ বা ‘মেরি কম’ সঙ্গে এক সারিতে বসানের মতো ছবি মোটেই নয়। কারণ, ছবিতে সুলতান কুস্তিগীর হয়ে উঠছে একটা মেয়ের মন জয় করার জন্য। কুস্তি ছাড়ছে সন্তানের মৃত্যুর জন্য। আর আবার ফ্রি স্টাইল রেসলিংয়ে ফিরছে এলাকায় ব্লাড ব্যাঙ্ক খোলার তাগিদে। অর্থাত্, যে কুস্তি তাঁকে আন্তর্জাতিক মানের সাফল্য দিয়েছে সেই কুস্তিকে শুধুমাত্র নিজের জীবনের ছোট-বড় স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজে লাগিয়েছেন সুলতান। কুস্তি কখনই তাঁর কাছে প্যাশান হয়ে উঠতে পারল না। আলি আব্বাস জাফরের এ ছবি জুড়ে রয়েছেন শুধুই সুলতান বা সলমন। বাকি আর কিছুই তেমন ভাবে সুযোগ পেল না এ ছবিতে। আরফার চরিত্রে অনুষ্কা শর্মা তবুও কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন। সন্তানসম্ভবা আরফার ভালবাসা আর সংসারের জন্য অলিম্পিক যাওয়ার স্বপ্ন অনায়াসেই ত্যাগ করলেন। কেরিয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে মেয়েদের সেই চিরাচরিত ত্যাগ শিকার কিছুটা হলেও ধরা পড়েছে অনুষ্কার অভিনয়ে। কিন্তু সুলতানের দুই কোচ কুমুদ মিশ্র এবং রণদীপ হুডার মতো শক্তিশালি অভিনেতাকে তেমন কাজেই লাগাতে পারলেন না পরিচালক। সব মিলিয়ে বড় ব্যানার, বড় স্টারের দৌলতে হয়ত ভাল ভাবেই উতরে যাবে ‘সুলতান’। সলমনের অগনিত দর্শকও বেশ খুশি, কারণ গোটা ফিল্ম জুড়ে তো শুধুই ভাইজান। কিন্তু ছবির চিত্রনাট্য বেশ দুর্বল। কুস্তির কাঁধে ভর দিয়ে ছবির অ্যাকশন জমে উঠলেও কুস্তির প্রতি সুবিচার করেননি ছবির পরিচালক। ভাগ্যিস ‘সুলতান’ সলমন খান। অন্য কেউ হলে কী হত কে জানে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy