‘পদ্মাবত’-এর একটি দৃশ্যে দীপিকা পাড়ুকোন। ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।
সেটে দুর্ঘটনা থেকে হামলা, চড়চাপড়-হুমকি-মাথার দাম ঘোষণা— কী নেই এই ছবিকে জড়িয়ে! শেষ হয়েও যেন শেষ হচ্ছে না সঙ্কট। সেন্সর বোর্ড সঞ্জয় লীলা ভংসালীর ছবি ‘পদ্মাবত’কে ছাড়পত্র দিয়েছিল আগেই। এ বার চার রাজ্যে ছবি মুক্তিতে সরকারি বাধাও সরিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, আগামী ২৫ জানুয়ারি দেশ জু়ড়ে মুক্তি পাচ্ছে ১৫০ কোটি বাজেটের এই ছবি। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ‘পদ্মাবত’-মুক্তির ঘটনাবহুল সেই জার্নি।
২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬: পদ্মাবতীর সেটে মাথায় আঘাত পান মুকেশ ডাকিয়া নামে এক চিত্রশিল্পী। মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬: ভংসালীর কাছে মুকেশের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন অ্যালায়েড মজদুর ইউনিয়ন।
৪ জানুয়ারি, ২০১৭: আপোস আলোচনার মাধ্যমে মুকেশের পরিবারকে ২৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
২৭ জানুয়ারি, ২০১৭: ভংসালীর বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ আনে রাজপুত করণী সেনা। সেটেই চড় মারা হয় পরিচালককে।
আরও পড়ুন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৫ জানুয়ারি সব রাজ্যেই ‘পদ্মাবত’
২৮ জানুয়ারি, ২০১৭: সেটে নিগ্রহের পর জয়পুরে শুটিং বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ভংসালী। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, রানি পদ্মাবতী এবং আলাউদ্দিন খলজির মধ্যে আপত্তিকর কোনও দৃশ্য নেই।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭: রাজপুত শ্রী করণী সেনা দাবি করে, এই ধরনের ঐতিহাসিক ছবিতে যাতে ইতিহাস বিকৃতি না হয়, সে জন্য একটা প্রি সেন্সর বোর্ড থাকা উচিত।
৬ মার্চ, ২০১৭: জয়পুরের চিতোরগড় দুর্গে পদ্মিণী মহলে ঢুকে হামলা চালায় করণী সেনা। ছবিতে যে আয়নার মাধ্যমে রানি পদ্মিণীকে আলাউদ্দিন খলজির দেখার কথা ছিল, তা ভেঙে দেওয়া হয়।
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭: পদ্মাবতীর প্রথম পোস্টার রিলিজ হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। নানা দিক থেকে ছবির মুক্তিতে বাধা দেওয়ার হুমকি।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭: জয়পুরের রাজমন্দির সিনেমা হলের বাইরে জড়ো হয় রাজপুত করণী সেনার একটা বড় দল। ভংসালীর বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে এবং ছবির পোস্টার পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
৯ অক্টোবর, ২০১৭: পদ্মাবতীর নতুন পোস্টার রিলিজ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
#padmavati Rangoli Controversy!
— KARAN K. (@KARANK19522136) October 16, 2017
A crowd of 100 people cried JAY SRI RAM AND rubbed out my 48hrs' intense work! Shocked!@RanveerOfficial pic.twitter.com/0yWbE7Jqfa
১৬ অক্টোবর, ২০১৭: সুরাটের এক শিল্পী পদ্মাবতীর পোস্টার দেখে টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে রঙ্গোলি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তা ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
১৮ অক্টোবর, ২০১৭: যাঁরা রঙ্গোলি ধ্বংস করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে অনুরোধ করেন দীপিকা পাড়ুকোন।
this has to stop NOW & action must be taken! @smritiirani pic.twitter.com/o5RGhDTHPJ
— Deepika Padukone (@deepikapadukone) October 18, 2017
২৫ অক্টোবর, ২০১৭: মুক্তি পেল এই ছবির গান ‘ঘুঙর’। এতে দীপিকার নাচ নিয়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়।
২৬ অক্টোবর, ২০১৭: প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা শঙ্করসিন বাঘেলা দাবি করেন, হিন্দু এবং ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের জন্য পদ্মাবতীর প্রি-রিলিজ স্ক্রিনিং করতে হবে। ছবিতে কোনও বিকৃতি রয়েছে কিনা তা ওই সম্প্রদায়ের নেতারা পরীক্ষা করে দেখবেন।
২ নভেম্বর, ২০১৭: ৯ এবং ১৪ ডিসেম্বর গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের আগে যাতে ছবিটি কোনও ভাবেই মুক্তি না পায়, তার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত আবেজন জানায় বিজেপি।
৪ নভেম্বর, ২০১৭: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী পরামর্শ দেন, ঐতিহাসিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, বিক্ষোভকারী এবং সেন্সর বোর্ডকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হোক।
আরও পড়ুন, হিন্দু মুসলমান সবাই জানে, পদ্মিনী শুধুই কল্পনা
৮ নভেম্বর, ২০১৭: উজ্জ্বয়িনীর বিজেপি সাংসদ চিন্তামণি মালব্য ফেসবুকে লেখেন, ‘ভংসালীর মতো লোকেরা অন্য কোনও ভাষা বোঝে না। এরা শুধু জুতো বোঝে। গোটা দেশ কখনওই রানি পদ্মাবতীকে অসম্মান করবে না।’
৯ নভেম্বর, ২০১৭: ফের বিবৃত দেন ভংসালী। তিনি বলেন, ‘‘দীপিকা এবং রণবীর যে দুটি চরিত্রে অভিনয় করছেন, তাঁদের মধ্যে কোনও কথোপকথন নেই।’’
১১ নভেম্বর, ২০১৭: মুক্তি পায় পদ্মাবতীর টাইটেল সং ‘এক দিল এক জান’। পর্দায় দেখা যায় দীপিকা পাড়ুকোন এবং শাহিদ কপূরকে।
১২ নভেম্বর, ২০১৭: ভংসালীর মুম্বই অফিসের বাইরে প্রতিবাদ হয়। রাজপুত সম্প্রদায়ের তরফে গাঁধীনগর এবং সুরাটেও প্রতিবাদ হয়।
১৩ নভেম্বর, ২০১৭: এই প্রথম ছবিটি নিয়ে মুখ খোলেন শাহিদ কপূর। তিনি বলেন, ‘‘ছবিটিকে একটা সুযোগ দিন।’’
১৪ নভেম্বর, ২০১৭: মুখ খুললেন দীপিকা পাড়ুকোন। ‘‘… একটা জাতি হিসেবে আমরা কোথায় যাচ্ছি?’’ দীপিকার এই মন্তব্য ভাইরাল হয়ে যায়। ট্রোলড হন নায়িকা।
১৬ নভেম্বর, ২০১৭: ১ ডিসেম্বর দেশ জুড়ে বন্ধ ঘোষণা করে করণী সেনা। দীপিকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
১৭ নভেম্বর, ২০১৭: সেন্সর বোর্ড ছবিটিকে নির্মাতাদের কাছে ফেরত পাঠায়।
আরও পড়ুন, এই রাজনীতি সস্তা এবং অপরিণত
১৮ নভেম্বর, ২০১৭: পদ্মাবতীর মুক্তি পিছিয়ে দেওয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে আবেদন জানান রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। উল্টো দিকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কাছে পদ্মাবতী ইস্যুতে গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালকে বয়কট করার আবেদন জানান শাবানা আজমি।
১৯ নভেম্বর, ২০১৭: হরিয়ানার বিজেপি নেতা সুরজ পাল আমু, ভংসালী এবং দীপিকার মাথার দাম ঘোষণা করেন।
২১ নভেম্বর, ২০১৭: পদ্মাবতীর মুক্তি ১ ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭: কেন্দ্রীয় সেন্সর বোর্ডের নির্দেশ— পাল্টে ফেলতে হবে ছবির নাম। ‘পদ্মাবতী’ হবে ‘পদ্মাবত’। বদলাতে হবে ছবির আরও চারটি অংশ। তবেই ‘ইউ/এ’ শংসাপত্র-সহ মুক্তি পাবে সঞ্জয় লীলা ভংসালীর দেড়শো কোটি বাজেটের ছবি।
১ জানুয়ারি, ২০১৮: এই নিয়ে তৃতীয় বার চিঠি গেল মেবারের রাজপরিবার থেকে। অভিযোগ সেই একই, তাঁদের সম্মতি রয়েছে বলে সর্বসমক্ষে ঘোষণা করা হলেও আদৌ কোনও মতামত নেওয়া হয়নি। বরং রাজপরিবারের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও ‘পদ্মাবতী’কে মুক্তির ছাড়পত্র দিয়েছে সেন্সর বোর্ড।
১৭ জানুয়ারি, ২০১৮: বিজেপি শাসিত চার রাজ্যের সরকার এই ছবি প্রদর্শনের উপর ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করে। রাজস্থান, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ এবং হরিয়ানা সরকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কাতে এই ছবি তাদের রাজ্যে চলতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করে। এই ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারির পরই, একে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন ছবির নির্মাতারা।
১৮ জানুয়ারি, ২০১৮: কোনও রাজ্য আলাদা ভাবে ‘পদ্মাবত’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে না। স্পষ্ট রায়ে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
বলিউড-টলিউড-টেলিউডের হিট খবর জানতে চান? সাপ্তাহিক বিনোদন সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy