Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শুটিং বন্ধের নিন্দায় সরব টলি-পাড়া

কলাকুশলীরা হোটেলে বসে রয়েছেন। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই তথা ‘ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের আপত্তিতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে বিলেতের ওই শ্যুটিং।

শ্যুটিং বন্ধ নিয়ে ক্ষোভ দেবের।

শ্যুটিং বন্ধ নিয়ে ক্ষোভ দেবের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ০২:৫৬
Share: Save:

বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার জায়গা বহু দিন ধরেই তৈরি হয়েছে। ছবির মান নিয়ে বারবার উঠেছে প্রশ্ন। ব্যবসা নিয়ে বেড়েছে অনিশ্চয়তা। টলিউডের অন্দরের খবর, বাংলা ছবিতে ভাল কাজের জায়গা ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এই অবস্থায় বিলেতের মাটিতে জোর করে শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় নিন্দায় সরব টালিগঞ্জ পাড়া। অধিকাংশেরই মত, অসুবিধা, অভিযোগ বা অন্যায় যা-ই হোক না কেন, শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়াটা মেনে নেওয়া যায় না।

ব্রিটেনের প্লিমাথের কাছে টরকো-য় হিমাংশু ধানুকা প্রযোজিত বাংলা ছবি ‘চালবাজ’-এর শ্যুটিং আপাতত থমকে। কলাকুশলীরা হোটেলে বসে রয়েছেন। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই তথা ‘ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের আপত্তিতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে বিলেতের ওই শ্যুটিং।

বৃহস্পতিবারই এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন অভিনেতা জিৎ। বলেছিলেন, এমন চলতে থাকলে বাংলা ছবির লগ্নি ধাক্কা খাবে। শুক্রবার দেবও এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করে জানান, তিনি নিজে চেষ্টা করেছিলেন, যাতে শ্যুটিং না আটকায়। তবে টেকনিশিয়ানদের স্বার্থ দেখাটাও যে জরুরি, তা মানছেন পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তবে তাঁর মতে, “শ্যুটিং বন্ধ হওয়ার থেকে দুঃখজনক কিছু হতে পারে না। সমস্যা মিটিয়ে নিয়ে কাজ শুরু করাটাই কাম্য ছিল।’’

পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সাফ কথা, ‘‘আমি শাস্তির পক্ষে। কিন্তু কোনও কাজ বন্ধ করার পক্ষে নই।’’ তিনি জানান, ফেডারেশনের সঙ্গে প্রযোজকের কোনও সমস্যা হতেই পারে। ফেডারেশনের তরফে অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু তার জন্য বিদেশের মাটিতে শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়াটা অযৌক্তিক। এটা সামগ্রিক ভাবে বাংলা ছবিরই ক্ষতি। আর তা একাধিক স্তরে।

‘‘একটা ছবির শ্যুটিং শেষ হওয়া মানেই তো ছবিটা মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাওয়া নয়। তার পরেও বেশ কিছু দিন অনেক কাজ চলে ছবির পিছনে। সেই সময়টা তো ফেডারেশনের হাতে ছিল শাস্তি দেওয়ার জন্য। শ্যুটিং এ রকম চটজলদি কেন বন্ধ হল, বুঝলাম না। কী এমন মারাত্মক ঘটনা ঘটল? এটা আমার কাছে একটা নতুন পরিস্থিতি’’— বললেন তিনি।

প্রযোজক ফিরদৌস হাসানও ঘটনার নিন্দা করে জানিয়েছেন, একটা ছবি তৈরি হওয়া মানে অভিনেতা থেকে শুরু করে স্পট বয়, গাড়িচালক থেকে শুরু করে হলের মালিক— সকলের রুজির জায়গা তৈরি হওয়া। সেখানে শ্যুটিং বন্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা ছবি এমনিতেই ধুঁকছে। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই বিনিয়োগ করছেন প্রযোজকেরা। সেখানে এমন ঘটনা আমাদের মাথা আরও নিচু করে দেয়।’’

ঘটনার পরে হিমাংশু ধানুকা বিদেশের মাটি থেকেই বারবার দাবি করেছেন, আজ, শনিবার শ্যুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। ফেডারেশনের নিয়ম মেনে ১৯ জন টেকনিশিয়ানই ছিলেন তাঁর দলে। ফেডারেশনও জানত সব। ‘‘শুধু কিছু মানুষের ইগোর কারণে শ্যুটিং বন্ধ করা হল জোর করে। এটা কাম্য নয়।’’— বলেন তিনি।

তবে এতেও বদলায়নি পরিস্থিতি। বরং ‘অমানবিকতা’র অভিযোগ তুলে ওই প্রযোজনা সংস্থার অনুমোদন বাতিল করার পক্ষপাতী ফেডারেশন। স্বরূপ বিশ্বাস স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, টেকনিশিয়ানদের ‘পেটের লড়াইয়ে’ তিনি আপস করবেন না। ফেডারেশনের অনমনীয় মনোভাবের নিন্দা করছে সব মহল। যা-ই হয়ে থাক না কেন, মাঝপথে শ্যুটিং বন্ধ না হওয়াটাই বাঞ্ছনীয় ছিল বলে মনে করছে টলিউড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE