Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রায়নার মুখে আগে দলই

সুনীল নারাইন ও রবিন উথাপ্পাকে কোলে তুলে নিয়ে নাচছেন তাঁদের সতীর্থরা। হোটেলে গিয়ে একপ্রস্থ কেক মাখামাখিও হচ্ছে দু’জনের মধ্যে। শুক্রবার রাতে ছবিটা এমনই হতে পারত। কিন্তু সুরেশ রায়নাই সব মাটি করে দিলেন।

নায়ক: কলকাতার স্বপ্নভঙ্গ ঘটিয়ে ম্যাচ নিয়ে চলে গেলেন গুজরাত অধিনায়ক রায়না। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নায়ক: কলকাতার স্বপ্নভঙ্গ ঘটিয়ে ম্যাচ নিয়ে চলে গেলেন গুজরাত অধিনায়ক রায়না। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

রাজীব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:১৪
Share: Save:

সুনীল নারাইন ও রবিন উথাপ্পাকে কোলে তুলে নিয়ে নাচছেন তাঁদের সতীর্থরা। হোটেলে গিয়ে একপ্রস্থ কেক মাখামাখিও হচ্ছে দু’জনের মধ্যে।

শুক্রবার রাতে ছবিটা এমনই হতে পারত। কিন্তু সুরেশ রায়নাই সব মাটি করে দিলেন। মাঝরাতে কেকেআর কোচ জাক কালিস সাংবাদিক বৈঠকে এসে আর না বলে পারলেন না, ‘‘রায়নার মতো ব্যাটসম্যানকে আউট করতে পারলে তো ম্যাচ হারতেই হবে। কিছু করার নেই।’’

রাজকোটেও এই রায়নাই ব্যাটে ঝড় তুলেছিলেন কেকেআরের বিরুদ্ধে। ৫১ বলে ৬৮। এ বার ইডেনে এসেও সেই একই রণমূর্তি দেখালেন তিনি। ফলে প্রশ্নটা উঠেই গেল, কেন সেই রায়নার জন্য কোনও অস্ত্র তৈরি রাখল না নাইট শিবির? হয়তো অস্ত্রটা তৈরি ছিল, কিন্তু সেটা ঠিক জায়গায় প্রয়োগ করতে পারলে শেষে হার দেখতে হত না গম্ভীরদের। সুনীল নারাইন আর রবিন উথাপ্পার পরিশ্রম বিফলে যেত না। সন্ধ্যায় নারাইনের ব্যাটে যখন ঝড় উঠেছিল, তখন কমেন্ট্রি বক্সে ছিলেন মাইকেল ক্লার্ক। প্রথম তিন ওভারের মধ্যেই ক্যারিবিয়ান স্পিনারের ব্যাট থেকে ন’টা বাউন্ডারি ও একটা বিশাল ছয় এবং তাঁর ইনিংস শেষে প্রায় ২৬০-এর স্ট্রাইক রেট দেখে রীতিমতো বিস্মিত অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক।

কমেন্ট্রি বক্স থেকে বেরিয়ে প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ‘‘আপনারা ওকে রহস্য স্পিনার বলেন? আমার তো মনে হয় সুনীল নারাইন এখন রহস্য ব্যাটসম্যানও।’’ ক্লাব হাউসের তিনতলায় দাঁড়িয়ে সই ও সেলফি শিকারিদের আবদার মেটাতে মেটাতে বলছিলেন, ‘‘নারাইন কিন্তু বাউন্ডারিগুলো মারছিল ‘এফর্টলেস’। বাজে শট মারার প্রবণতাও দেখলাম না। ওর এবার বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিংয়েও মন দেওয়া উচিত।’’

কেকেআরের সানিকে বড়সড় সার্টিফিকেট দেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। বলেন, ‘‘ব্যাটিংয়ে উন্নতির জন্য ও যা-ই করে থাকুক, সেটা যে একেবারে ঠিকঠাক হয়েছে, তা তো ওর এই পারফরম্যান্স দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কেন গম্ভীর ওকে দিয়ে ওপেন করাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে এ বার।’’

তখন কি আর ওঁরা জানতেন যে সুরেশ রায়নার ব্যাট নাইটদের জোড়া কীর্তিকেও ম্লান করে দেবে?

নাইটদের ঘরের মাঠে এসে গুজরাতি সিংহদের প্রায় একা হাতে ম্যাচটা জিতিয়ে রায়না বলেন, ‘‘ভাল ক্রিকেটীয় শট খেলাটা আজ খুব জরুরি ছিল। ক্রস ব্যাটে খেলা বা অনর্থক শট খেলব না ঠিক করেই নিয়েছিলাম।’’

তবে একাই যে ম্যাচ জিতিয়েছেন, তা মানতে রাজি নন লায়ন্স অধিনায়ক। বললেন, ‘‘আমি, বাজ আর জাড্ডুর পার্টনারশিপটা যেমন ফ্যাক্টর হয়ে গিয়েছে, তেমনই আমাদের বোলিংও খারাপ হয়নি। বাসিল ভাল বোলিং করেছে। ফকনার গম্ভীরকে আউট করল। এটা টিম এফর্ট ছাড়া আর কী?’’

ইনিংসের শেষে যে রানটা নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন, সেই ১৮৭ খুব একটা মানতে রাজি নন গৌতম গম্ভীর। বললেন, ‘‘এই রানটা নিয়ে লড়াই করাই যেত। কিন্তু ফিঞ্চ আর ম্যাকালাম তো ওদের মিডল অর্ডারের ওপর থেকে চাপটাই কমিয়ে দিল। ওরা এমনিতেই ব্যাটিংনির্ভর দল। তার ওপর সুরেশ রায়না ফর্মে থাকলে কিছু করার নেই।’’

এক হারেই বিচলিত নন গম্ভীর। বললেন, ‘‘এখনও আমরা ভাল জায়গায় আছি। দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এই ম্যাচ থেকে পজিটিভগুলো নিয়েই পরের ম্যাচে নামব আমরা।’’ গম্ভীর যখন কথাগুলো বলছেন, তখন তাঁর রবিবারের বিপক্ষ সেনাপতি শহরেই।

নাইটদের পজিটিভগুলোকে নেগেটিভ করার ছক কষা শুরু করে দিলেন নিশ্চয়ই বিরাট কোহালি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE