অবিশ্বাস্য!
সোমবার মনদীপ সিংহকে যে ক্যাচটায় ফেরাল ঋদ্ধিমান, টিভিতে দেখার পরে এই শব্দটাই মনে আসছে।
ক্রিকেটে টেস্ট-ওয়ান ডে হোক বা টি-টোয়েন্টি, অনেক দুরন্ত ক্যাচই আমরা দেখতে পাই। কিন্তু কতগুলো ক্যাচ মনে একেবারে গেঁথে যায়। ১৯৮৩-র বিশ্বকাপে মদনলালের বলে ডিপ মিড উইকেট থেকে অনেকটা পিছনে দৌড়ে কপিল দেবের সেই অবিস্মরণীয় ক্যাচের কথা তো ইতিহাস। বলা হয় এই ক্যাচটাই আমাদের প্রথম বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিল। কারণ সেটা ছিল ভিভ রিচার্ডসের ক্যাচ! ঋদ্ধি আজ কপিল দেবের সেই ক্যাচটার কথা মনে করিয়ে দিল। আমি তো বলব ঋদ্ধির ক্যাচটা আরও কঠিন ছিল। ওকে অনেকটা পিছনের দিকে দৌড়ে গিয়ে শেষ মুহূর্তে বাঁ দিক থেকে আবার ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচটা ধরতে হয়েছে। তবে হ্যাঁ, একটা ব্যাপারে কপিলের ধরা ভিভের সেই ক্যাচ বরাবর এগিয়ে থাকবে। সেটা ছিল বিশ্বকাপ। ওই ক্যাচটা না ধরলে হয়তো ’৮৩-তে আমাদের প্রথম বিশ্বকাপই ফস্কে যেত।
বরুণ অ্যারনের শর্ট পিচ্ড বলে ব্যাটসম্যান মনদীপ সিংহ পুল করতে গেলে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পিছনের দিকে ক্যাচটা ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই দৌড়তে শুরু করে ঋদ্ধি। ক্যাচটা যে জায়গায় ছিল সাধারণত থার্ডম্যান বা ফাইন লেগ ফিল্ডাররাই সেটা ধরার চেষ্টা করবে। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে উইকেটকিপার চেষ্টাই করবে না ওই ক্যাচ নেওয়ার। ঋদ্ধি কিন্তু পিছনের দিকে দৌড়ে প্রায় বাউন্ডারি লাইনের কাছে গিয়ে ক্যাচটা ধরল। শুধু তাই নয়, বলটা শেষ মুহূর্তে বাঁক নেয়। তার জন্য ডানদিকে ঘুরে ঝাঁপাতে হল। ডাইভ দিয়ে দু’হাতে অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে তালুবন্দি করল ক্যাচটা। অসাধারণ অনুমান ক্ষমতা, রিফ্লেক্স, ফিটনেস এবং ভারসাম্য না থাকলে এ ভাবে উড়ে গিয়ে এই ক্যাচ ধরা যায় না। এটা শুধু ‘সুপারম্যান’ ঋদ্ধির পক্ষেই সম্ভব।
আরও পড়ুন: সুপারম্যান ঋদ্ধির ক্যাচ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে
শুধু ক্যাচ ধরা নয়, কিংগস ইলেভেন পঞ্জাবের ফিল্ডারদের ঋদ্ধির ওপর কী গভীর ভরসা রয়েছে লক্ষ্য করছিলাম ম্যাচটা দেখতে দেখতে। মাঠের যে কোনও প্রান্ত থেকে বল ধরেই ফিল্ডার উইকেট কিপারের প্রান্তে ছুড়ে দিচ্ছে। হয়তো ঋদ্ধি তখনও বলটা ধরার মতো জায়গায় নেই, তা-ও। মানেটা হল, চোখ বুজে বল ছুড়ে দাও, ঋদ্ধি ঠিক সামলে নেবে।
সতীর্থদের এই ভরসাটা ঋদ্ধি আদায় করে নিতে পেরেছে ওর আত্মবিশ্বাসের জোরে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের পরে যেটা এসেছে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দুটো অনবদ্য ক্যাচ নিয়ে যে ভাবে ক্রিকেট দুনিয়ার ‘সুপারম্যান’ হয়ে উঠেছিল শিলিগুড়ির পাপালি, তারই আরও একটা রূপ দেখলাম আজ ইনদওরে। উইকেটকিপিং সঙ্গে ব্যাট হাতে সাফল্যই ঋদ্ধিকে এই আত্মবিশ্বাসটা জুগিয়েছে যে, আমি পারব। তাই এই অঙ্ক করে ঝুঁকি নিতে পারছে।
মনদীপের ক্যাচটা ধরার পর দেখলাম সতীর্থরা ওকে নিয়ে আহামরি উচ্ছ্বাস কিন্তু দেখাল না। ঋদ্ধির এটা একটা বিরাট প্রাপ্তি। মানেটা হল এ আর এমন কী ক্যাচ! শুধু অধিনায়ক ম্যাক্সওয়েলকে দেখে মনে হল যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না। কয়েক দিন আগে এই ম্যাক্সওয়েলই দেখেছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ঋদ্ধির কামাল। তখন ও প্রতিপক্ষ ছিল। এখন ঋদ্ধির সুফল পাচ্ছে।
এমন ক্যাচ দেখার জন্য বহুদূর হেঁটে আসা যায়। আমি নিশ্চিত তিরিশতম আইপিএল যখন হবে তখনও এমন কোনও ক্যাচ উঠলে শিলিগুড়ির পাপালির কথা মনে পড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy