Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Political Alliance

ইয়েচুরির জন্য প্রদীপ বাদ? ফের এক বাম-হাত, নাকি রাহুল-মমতায় মোদী কাত?

কলকাতার এক নামী কংগ্রেস নেতা তথা দাপুটে আইনজীবীর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান। আসর বসেছে পার্ক স্ট্রিটের অভিজাত হোটেলে। কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম, রাম— সব দলের নেতারাই একে একে হাজির হচ্ছেন।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৬:৪৯
Share: Save:

কলকাতার এক নামী কংগ্রেস নেতা তথা দাপুটে আইনজীবীর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান। আসর বসেছে পার্ক স্ট্রিটের অভিজাত হোটেলে। কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম, রাম— সব দলের নেতারাই একে একে হাজির হচ্ছেন। নৈশভোজ সেরে লবিতে বেরিয়ে রাজ্যসভার এক তরুণ সিপিএম সাংসদ কংগ্রেসের এক অধ্যাপক নেতাকে সতর্ক করলেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভায় নির্বাচিত এক সাংসদ ইদানীং তৃণমূলের সঙ্গে খুব যোগাযোগ রাখছেন, দাবি তরুণ সিপিএম সাংসদের। পার্লামেন্ট চত্বরে বাম সাংসদদের সঙ্গে দেখা হলে আগে যেমন গল্পগাছা জুড়ে দিতেন, আজকাল নাকি সে সব এড়িয়ে যান। ডাকলেও নাকি কাছে আসেন না।

প্রদেশ কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদকও এ আলোচনার অংশ। তিনি বললেন, ‘‘আমি অনেক দিন আগেই তো বলেছিলাম, ওঁর শরীরটা কংগ্রেসে রয়েছে, মনটা তৃণমূলে। এ বার তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভায় যেতে চান।’’

২০১৬-র ডিসেম্বরের এই কথোপকথনটাই ইঙ্গিত দিয়েছে, ২০১৭ সালে বাংলার রাজ্যসভা নির্বাচন বেশ উৎসাহব্যঞ্জক হয়ে উঠতে চলেছে। বাংলা থেকে রাজ্যসভায় যে ১৬ জন সাংসদ রয়েছেন, এ বছর তাঁদের মধ্যে ৬ জনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। চার জন তৃণমূলের, এক জন বামেদের, এক জন কংগ্রেসের। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ছবিটা যে রকম, তাতে কংগ্রেস এবং বামেরা আলাদা আলাদা লড়ে দু’জন প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে পারবেন না। ৬টি আসনে নির্বাচন হলে, ৫টিতে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত। আর কংগ্রেস এবং বামেরা যদি আলাদা আলাদা প্রার্থী দেয়, তা হলে ষষ্ঠ আসনও তাঁদের জন্য অনিশ্চিত। কারণ ক্রস ভোটিং-এর সম্ভাবনা প্রবল। অর্থাৎ অন্তত একটি আসন নিশ্চিত রাখার জন্য বাম ও কংগ্রেসকে পরস্পরের পাশে দাঁড়াতে হবে।

আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রের খবর, বাংলার রাজ্যসভা ভোট নিয়ে বাম-কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সমঝোতার ফর্মুলা খুঁজতে শুরু করেছে। এই বিধানসভার মেয়াদে তিন বার রাজ্যসভা নির্বাচনের মুখোমুখি হবে বাংলা। তার মধ্যে এক বার বামেদের জন্য আসন ছেড়ে দেবে কংগ্রেস এবং বাকি দু’বার বামেরা ছেড়ে দেবে কংগ্রেসকে— এমনই সমঝোতা সূত্র নাকি আলোচিত হচ্ছে। এই রফাসূত্র যদি শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষই মেনে নেয়, তা হলে কোন বার বামেদের জন্য কংগ্রেস আসন ছাড়বে? প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রের খবর, প্রথম বারই বামেদের রাজ্যসভার আসনটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। কারণ বাংলা থেকে নির্বাচিত যে বাম সাংসদের মেয়াদ এ বার ফুরোচ্ছে, তাঁর নাম সীতারাম ইয়েচুরি। এ বারের নির্বাচনে যদি কংগ্রেস প্রার্থী দেয়, তা হলে সীতারামের পক্ষে এ রাজ্য থেকে নির্বাচিত হওয়া অসম্ভব। কিন্তু বাংলার সিপিএম চাইছে, সাধারণ সম্পাদক যেন এ রাজ্য থেকেই রাজ্যসভায় যান এবং তাঁর মেয়াদে যেন ছেদ না পড়ে। বাংলার সিপিএম নেতাদের আর্জি মেনে নিয়ে যদি কংগ্রেস এ বার প্রার্থী না দেয় এবং সীতারাম ইয়েচুরির জন্য আসনটি ছেড়ে দেয়, তা হলে যে কংগ্রেস সাংসদের মেয়াদ এ বার ফুরোচ্ছে, সেই প্রদীপ ভট্টাচার্য আপাতত আর রাজ্যসভায় ফিরতে পারছেন না।

এক দিকে জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের কাছাকাছি আসছে তৃণমূল আর দূরে সরে যাচ্ছে সিপিএম, অন্য দিকে বাংলা থেকে সিপিএম সাধারণ সম্পাদককে ফের রাজ্যসভায় পাঠাতে নিজেদের সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যকে আর টিকিট দিচ্ছে না কংগ্রেস— এমন দৃশ্যপট কি তৈরি হওয়া সম্ভব? যদি তা হয়, তা হলে কি প্রদীপ ভট্টাচার্যকে তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভায় প্রবেশ করতে দেখা যেতে পারে? এমন নানা সমীকরণ আর জল্পনা এখন থেকেই ঘনিয়ে উঠতে শুরু করেছে এ বছরের রাজ্যসভা নির্বাচনকে ঘিরে। অতএব নজর রাখতেই হবে সে দিকে।

তবে শুধু বাংলার রাজনীতি নয়, গোটা দেশের রাজনীতিই অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চলেছে এ বছর। সাতটি রাজ্য ২০১৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনের মুখোমুখি হচ্ছে।

উত্তরপ্রদেশ: জাতীয় রাজনীতির বহু পুরনো প্রবাদ হল, দিল্লি পৌঁছনোর সব রাস্তা উত্তরপ্রদেশ হয়ে যায়। অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশ যাঁর, দিল্লিও তাঁর। লখনউয়ের তখত এখনও সমাজবাদী পার্টির দখলে। কিন্তু ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে সে রাজ্যের ৮০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩টির দখল নিয়েছিল বিজেপি। অতএব দিল্লির মসনদও বিজেপির হস্তগতই হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের সেই সাফল্য ধরে রেখে বিজেপি যাতে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার দখল এ বার না নিতে পারে, তার জন্য কংগ্রেস, সপা, বসপা প্রবল ভাবে সক্রিয়। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে এ বার রুখে দেওয়া গেলে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন বিরোধীদের পক্ষে অনেক সহজ হবে। তাই বিজেপিকে রোখার চেষ্টা বিরোধী শিবিরে প্রবল। কিন্তু অখিলেশ-মুলায়মে তুমুল দ্বন্দ্ব, মায়াবতীর একলা চলো নীতি, কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতাকে হাতিয়ার করে বিজেপি-ও দীর্ঘ দিন পরে লখনউয়ের তখতে ফিরতে মরিয়া। অতএব, রঙিন হয়ে উঠতে চলেছে উত্তরপ্রদেশের ভোট।

পঞ্জাব: এ বছর বিধানসভা নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চলেছে পঞ্জাবও। সাধারণত পাঁচ বছর অন্তর অকালি-বিজেপি জোট এবং কংগ্রেসের মধ্যে ক্ষমতার হাতবদল দেখতে অভ্যস্ত পঞ্জাব। কিন্তু সে পরম্পরা ভেঙে গত ১০ বছর টানা ক্ষমতায় অকালি-বিজেপি। ফলে ক্ষমতা বিরোধিতার হাওয়াও অন্য যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে তীব্র এ বার। কিন্তু বিরোধিতার ময়দান আর শুধু কংগ্রেসের নয়, ভাগ বসিয়েছে আম আদমি পার্টিও। কী হতে চলেছে পঞ্জাবের ফল? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও নিশ্চিত নন।

উত্তরাখণ্ড: উত্তর ভারতের এই পাহাড়ি রাজ্য অনেক ঝাড়-ঝাপটা সামলে এ বছর ভোটের মুখে। প্রথমে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জেরে ভয়াল বিপর্যয়। তার পর অপ্রতুল ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্গতদের ক্ষোভ এবং বিজয় বহুগুণাকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রিত্বে হরীশ রাওয়াতের অভিষেক। পরে কংগ্রেসে বিদ্রোহ, রাওয়াতকে হঠিয়ে সরকারের দখল নেওয়ার চেষ্টা বিজেপির। সব শেষে আদালতের হস্তক্ষেপ, আস্থা ভোট এবং সরকার পুনরুদ্ধার কংগ্রেসের। গত পাঁচ বছরে এমন উত্তাল সময়ের সাক্ষী থাকা উত্তরাখণ্ড এ বার কী রায় দেবে? লক্ষ্য রাখছে গোটা দেশ।

মণিপুর: টানা ১৫ বছর উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে ক্ষমতায় কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী পদে ১৫ বছর ধরেই ওকরাম ইবোবি সিংহ। ফলে বিরোধী শক্তিগুলির হাতে ইস্যু নেহাৎ কম নয়। মণিপুরের ভোট ময়দানে সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে উঠতে চলেছে সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি। দীর্ঘ দিন ধরেই এই আইন প্রত্যাহার করার দাবিতে মণিপুরে আন্দোলন চালাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন। রাজ্যের কংগ্রেস সরকার সে দাবি মানেনি, কেন্দ্রের কাছে আফস্পা প্রত্যাহারের কোনও সুপারিশ রাজ্য সরকার জমা দেয়নি। তাই এই ইস্যুতে কংগ্রেসকে নাজেহাল হতে হবেই। উত্তর-পূর্ব ভারতে ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে বিজেপি। অসম এবং অরুণাচল প্রদেশের সরকার ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর, মণিপুরের নির্বাচনকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখছে তারা। আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি দীর্ঘ দেড় দশক অনশন চালিয়ে গোটা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করা ইরম চানু শর্মিলাও নিজের অনুগামীদের নিয়ে এ বার মণিপুরের ভোট ময়দানে হাজির। লড়াই জমে উঠতে চলেছে, বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

আরও পড়ুন, কণা থেকে ব্রহ্মাণ্ড, বিজ্ঞানে মাইলস্টোন হতে যাচ্ছে ২০১৭

গোয়া: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠদের অন্যতম তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের নিজের রাজ্য গোয়া। দু’বার গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন পর্রীকর। ২০১৪ সালে বিজেপি যখন লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হল, পর্রীকর তখনও গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদী তাঁকে নিজের মন্ত্রিসভায় ডেকে নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ভার দেওয়ায় গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন লক্ষ্মীকান্ত পারসেকর। তবে গোয়ার রাজনৈতিক মহল বলে, মুখ্যমন্ত্রী পদে পারসেকর থাকলেও, গোয়া সরকারের আসল চাবিকাঠিটা এখনও পর্রীকরের হাতেই। নিজের রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখা মনোহর পর্রীকরের কাছে কিন্তু মর্যাদার লড়াই। তবে সে লড়াই খুব একটা

সহজ নয়। গোয়ায় এমনিতেই কংগ্রেস সাংগঠনিক ভাবে বেশ মজবুত। তা ছাড়া, বিজেপির পর পর দু’বার ক্ষমতায় আসার ঘটনা গোয়ায় কখনও ঘটেনি। অসহিষ্ণুতা ইস্যুতে আরব সাগরের তীরবর্তী এই ছোট্ট রাজ্যটিতে বিজেপির সমর্থনভিত্তি কিছুটা ধাক্কাও খেয়েছে। তাই পর্রীকর দুর্গ রক্ষা করতে পারবেন, নাকি রাহুল গাঁধীর দল হারানো গড় পুনরুদ্ধার করবে, সে দিকে নজর রাখতেই হবে ২০১৭ সালে।

গুজরাত: ১৯৯৫ সাল থেকে টানা এই রাজ্যে ক্ষমতায় বিজেপি। প্রথমে কেশুভাই পটেল, তার পরে নরেন্দ্রভাই মোদী মুখ্যমন্ত্রিত্ব করেছেন। সেখান থেকে নরেন্দ্র মোদী আজ প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে দিল্লি চলে আসা ইস্তক গাঁধীনগরে তাঁর দল নড়বড় করতে শুরু করেছে। পতিদার আন্দোলনের ধাক্কা এবং স্থানীয় স্তরের বেশ কিছু নির্বাচনে ভরাডুবির জেরে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে আনন্দীবেন পটেলকে সরিয়ে বিজয় রূপাণিকে আনতে হয়েছে। ২০১৭-র শেষ দিকে বিধানসভা নির্বাচনের মুখোমুখি হবে মোদীর রাজ্য। এ বছরের সবচেয়ে বড় মর্যাদার লড়াই কিন্তু গুজরাতের ভোটই। প্রধানমন্ত্রী কি পারবেন নিজের খাসতালুক রক্ষা করতে? গোটা দেশ উত্তরের অপেক্ষায়।

হিমাচল প্রদেশ: উত্তর ভারতের এই পাহাড়ি রাজ্যেও ভোট ২০১৭-র শেষ দিকে। কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সুর চড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পিকে ধুমল এবং তাঁর পুত্র তথা তরুণ সাংসদ ও ক্রিকেট প্রশাসক অনুরাগ ঠাকুর বিজেপির নির্বাচনী অভিযানের নেতৃত্বে থাকছেন। বীরভদ্র সিংহের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েই সবচেয়ে সরব বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও সিবিআই হানা দিয়েছিল তদন্তের নামে। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতি নিয়ে অনুরাগ ঠাকুরের গায়েও এখন কালির ছিটে। তাই হিমাচল প্রদেশের লড়াই কোনও পক্ষের জন্যই খুব সহজ হবে না।

২০১৭ সালের রাজনীতিতে কয়েক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপরেও বিশেষ নজর থাকবে গোটা দেশের।

১. নরেন্দ্র মোদী: মুদ্রা বাতিলের মতো এক বিরাট পদক্ষেপ করেছেন তিনি ২০১৬-র শেষ লগ্নে। কালো টাকা, জাল টাকা শেষ করতে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থেই এই পদক্ষেপ, বলছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এই সিদ্ধান্তের ফল ২০১৭ সালেই বোঝা যাবে, প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন সে কথা। আদৌ কি কোনও লাভ হল দেশের, নাকি হয়রানিই সার হল? বলে দেবে এই বছরটাই। তার উপর অনেকটা নির্ভর করবে নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক ভবিষ্যতও।

২. রাহুল গাঁধী: ‘অপরিণত’ বলে তাঁকে কটাক্ষ করত তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা যে তাঁর রয়েছে, তেমনটা রাহুল নিজেও প্রমাণ করতে পারেননি এত দিন। কিন্তু নোট বাতিল উত্তর পরিস্থিতিতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যে ভাবে ধারাবাহিক সংগ্রামে কংগ্রেস সহ-সভাপতি, তাতে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বিরোধী শিবিরের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন রাহুল। তিনি কতটা উঠে আসতে পারবেন মোদীর প্রধান প্রতিপক্ষ হিবেসে, বলে দেবে এই বছরটাই। অতএব নজর থাকবে রাহুল গাঁধীর দিকেও।

৩. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: জাতীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত বড় ভূমিকা নিতে পারেন তিনি। ২০১৯ লক্ষ্য তাঁর, আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন অনেক বার। নোট বাতিলের পর বিরোধী আন্দোলন যে ভাবে জমাট বেঁধেছে দেশ জুড়ে, তার সিংহভাগ কৃতিত্বই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করতে পারেন। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে এই ইস্যুতে সুর চড়িয়েছিলেন সর্বাগ্রে তিনিই। কংগ্রেস এবং অন্য বিরোধী দলগুলিকে একত্র করার প্রাথমিক উদ্যোগটাও তাঁরই ছিল। জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কি বড় ভূমিকা নিতে চলেছেন মমতা? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কিন্তু তেমনই মনে করছেন। ২০১৭ সাল জুড়ে তাই নজর থাকবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেও।

৪. শশিকলা নটরাজন: দেশের দক্ষিণতম প্রান্তে আচমকাই ক্ষমতার অলিন্দের নিয়ন্ত্রক তিনি। জয়ললিতার মৃত্যুর পর তাঁর দল এআইএডিএমকে-র নেতৃত্ব কার হাতে যাবে, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা শুরু হয়েছিল। জয়ার প্রয়াণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন পনীরসেলভম। পরে শোনা যায়, শশিকলার ইচ্ছাতেই তেমনটা হয়েছে। কারণটাও স্পষ্ট হয় ধীরে ধীরে, যখন পনীরসেলভম ও তাঁর অনুগামীরা বলতে শুরু করেন, ‘আম্মা’র দীর্ঘ দিনের সঙ্গী শশিকলার মধ্যেই তাঁরা ‘আম্মা’র ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। অচিরেই ‘আম্মা’র ছায়াসঙ্গিনী ‘চিন্নাম্মা’ হয়ে উঠেছেন এবং এআইএডিএমকে-র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এ হেন শশিকলাকে নিয়ে বিতর্কও কিন্তু বিস্তর। দুর্নীতির অভিযোগ তো রয়েইছে। জয়া নিজে কখনও শশিকলাকে দল বা সরকারের কোনও পদ কেন দেননি, তা নিয়েও নানা চর্চা রয়েছে। এ বার জয়ললিতার মৃত্যুর কারণ নিয়ে আদালত সংশয় প্রকাশ করায়, জল আরও ঘোলা হতে শুরু করেছে। শশিকলা পারবেন জয়ার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিজের হাতে রাখতে? তামিল রাজনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক কি তিনি হয়ে উঠতে পারবেন? স্পষ্ট হয়ে যাবে এই ২০১৭ সালেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE