Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অদৃশ্য শত্রু ইবোলা, আতঙ্কে চিকিত্‌সকরা

শত্রু ঠিক কোথায় আছে, তা জানা থাকলে তার সঙ্গে যুদ্ধ করা সহজ। কিন্তু সে যদি সব জায়গাতেই ছড়িয়ে থাকে তা হলে তো বিপদ! ইবোলা চিকিত্‌সা সম্পর্কে আজ এমন মন্তব্যই করলেন জার্মানির এক শিশু চিকিত্‌সক। সিয়েরা লিওনের কেনিমা শহরে একটি ইবোলা চিকিত্‌সা শিবির চালান তিনি। চিকিত্‌সা করতে করতে ক্লান্ত ও আশঙ্কিত বহু চিকিত্‌সকের গলাতেই শোনা গেল এক সুর। বিভিন্ন সময়ে নানা কঠিন রোগ সামলালেও ‘অদৃশ্য’ এই শত্রুটিকে সকলেই সমঝে চলছেন।

সংবাদ সংস্থা
সিয়েরা লিওন শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৪৬
Share: Save:

শত্রু ঠিক কোথায় আছে, তা জানা থাকলে তার সঙ্গে যুদ্ধ করা সহজ। কিন্তু সে যদি সব জায়গাতেই ছড়িয়ে থাকে তা হলে তো বিপদ! ইবোলা চিকিত্‌সা সম্পর্কে আজ এমন মন্তব্যই করলেন জার্মানির এক শিশু চিকিত্‌সক। সিয়েরা লিওনের কেনিমা শহরে একটি ইবোলা চিকিত্‌সা শিবির চালান তিনি। চিকিত্‌সা করতে করতে ক্লান্ত ও আশঙ্কিত বহু চিকিত্‌সকের গলাতেই শোনা গেল এক সুর। বিভিন্ন সময়ে নানা কঠিন রোগ সামলালেও ‘অদৃশ্য’ এই শত্রুটিকে সকলেই সমঝে চলছেন।

জোহাকিম গার্ডম্যান। ২০ বছর ধরে রেড ক্রস সোসাইটির সঙ্গে রোয়ান্ডা, বসনিয়া, সিরিয়ায় সামলেছেন বহু বিপর্যয়। ভয় পান না মৃত্যুকেও। কিন্তু এই ভয়ানক জীবাণুটি তাঁর মনেও জাগিয়ে তুলেছে আশঙ্কা। আসলে, অসুস্থদের সারিয়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে যে এ রোগের নির্মূল ঘটছে তা নয়। বরং এক ইবোলা আক্রান্ত জন্ম দিচ্ছে আরও কয়েক জন আক্রান্তের। আর তীব্র গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস।

তাই ছাড় পাচ্ছেন না চিকিত্‌সকরাও। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাহায্যের জন্য পশ্চিম আফ্রিকায় উড়ে এসেছেন অনেক চিকিত্‌সক ও স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁরাও একে একে ভাইরাসটির কবলে পড়ছেন। যেমন, সিয়েরা লিওনে আসা কিউবার এক ডাক্তারকে চিকিত্‌সার জন্য বৃহস্পতিবার জেনিভায় পাঠানো হয়েছে। আবার নিরাপত্তার খাতিরে স্পেনের এক ডাক্তারকে শুক্রবার তাঁর নিজের দেশেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

“সুনামি, বন্যা, ভূমিকম্প বহু বিপর্যয় সামলেছি। কিন্তু এ রকম...”, বলেই খানিক ঢোঁক গিললেন এক চিকিত্‌সাকর্মী। গার্ডম্যানের ৬০ শয্যার চিকিত্‌সা শিবিরে কাজ করেন তিনি। ভাইরাসটি থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য একটি অদ্ভুত পোশাক পরে কাজ করতে হয় এই স্বাস্থ্যকর্মীদের। রবারের তৈরি এই পোশাক আর সঙ্গে থাকে মুখ ঢাকা একটি মাস্ক। যার ভিতর তাপমাত্রা প্রায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বভাবতই যা বেশ অস্বস্তিকর। কিন্তু উপায় যে আর নেই। এমনকী, ইবোলা আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা হওয়ার শেষে সেই বিশেষ পোশাক খোলার পর তাঁদের ক্লোরিন যুক্ত জলে স্নানও করতে হয়। কিন্তু এত সাবধানতা সত্ত্বেও ঠেকানো যায় না মৃত্যু। সোমবারই ইবোলা আক্রান্ত হয়ে আমেরিকায় সিয়েরা লিওন ফেরত এক চিকিত্‌সকের মৃত্যু হয়েছে।

মানসিক ভাবেও সব সময় একটা চাপের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। যাঁকে দেখে গেলেন সকালে দিব্যি রয়েছেন, ভাবলেন হয়তো সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরবেন দু’দিন বাদেই, কিন্তু এক ঘণ্টা বাদেই পেলেন তাঁর মৃত্যু সংবাদ। এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেছেন, “সব চেয়ে কষ্ট হয় যখন এই মারণ ব্যাধির থেকে নিস্তার পায় না ১৮ মাসের শিশুও।”

অন্য দিকে, রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন শুক্রবার আবার বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য চেয়েছেন। কিছু কিছু এলাকায় ইবোলা আক্রান্তের সংখ্যা কমে এলেও এখনও পর্যন্ত ভাইরাসটিকে সমূলে উপড়ে ফেলা যায়নি। যেমন মালিতে ইবোলা আক্রান্ত ছ’জনেরই মৃত্যু হয়েছে।

কিন্তু তাঁর আশা সকলে মিলে হাত মেলালে ২০১৫ সালের মাঝামাঝির মধ্যে এই পরিস্থিতিকে কাটিয়ে ওঠা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ebola siera leon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE