Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অনুপস্থিত, শো-কজ দুই চিকিৎসককে

ছুটির আবেদন মঞ্জুর না হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকা ও ছুটি বাতিল করে কাজে যোগ দেওয়ায় নির্দেশ অগ্রাহ্য করার অভিযোগে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের দুই স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞকে শো-কজ করল স্বাস্থ্য দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৪৪
Share: Save:

ছুটির আবেদন মঞ্জুর না হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকা ও ছুটি বাতিল করে কাজে যোগ দেওয়ায় নির্দেশ অগ্রাহ্য করার অভিযোগে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের দুই স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞকে শো-কজ করল স্বাস্থ্য দফতর।

বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী ওই দুই চিকিত্সককে চিঠি পাঠান। কেনও তাঁরা সরকারি নিয়ম অমান্য করে দীর্ঘদিন কাজে যোগ দেননি, তা সাত দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার একথা জানিয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রঞ্জনকুমার মজুমদার।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই দুই চিকিত্সকের নাম কেশবচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপসকান্তি ঘোষ। কেশববাবু অবশ্য গত ৬ নভেম্বর কাজে যোগ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তার শো-কজের চিঠি হাতে পাওয়ার পর এ দিন কাজে যোগ দিয়েছেন তাপসবাবু।

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রঞ্জনবাবুর দাবি, তাপসবাবুকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে ছুটি না নিয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। কেশববাবুর ছুটি বাতিল করে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি নির্দিষ্ট দিনে কাজে যোগ দেননি। রঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের অভাবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে জেলা হাসপাতালের পরিষেবা ভেঙে পড়েছিল। সেকথা আমি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়ে হস্তক্ষেপ চেয়েছিলাম। সেইমতো দফতরের অধিকর্তা ওই দুই চিকিত্সকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন।’’

ছুটির আবেদন মঞ্জুর না হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন কাজে যোগ না দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তাপসবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘যা জানানোর স্বাস্থ্য অধিকর্তাকেই জানাব।’

কেশববাবুর দাবি, মেয়ের অসুস্থতার কারণে তিনি নির্দিষ্ট দিনের দু’দিন পর কাজে যোগ দিয়েছেন। তথ্য-প্রমাণ সহ তা তিনি স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে জানিয়ে দিয়েছেন।

রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে মোট চার জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক চিকিত্সক গত জানুয়ারি মাস থেকে ছুটি না নিয়ে অনুপস্থিত থাকায় কিছুদিন আগে তাঁর বেতন বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। অভিযোগ, ছুটির আবেদন মঞ্জুর না হওয়া সত্ত্বেও গত প্রায় দু’মাস ধরে হাসপাতালে অনুপস্থিত ছিলেন তাপসবাবু। মেয়ের চিকিত্সার কারণ দেখিয়ে গত ২৩ অক্টোবর ছুটিতে চলে যান কেশববাবুও। তারপর থেকে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দীপ সরকার একাই কোনওমতে জেলা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের পরিষেবা স্বাভাবিক রেখেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে গত ১ নভেম্বর দীপবাবু অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওইদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে সকাল ১০টা থেকে টানা সাতঘণ্টা প্রসূতি বিভাগে ভর্তি বন্ধ রাখতে হয়। পরিষেবা স্বাভাবিক করতে ওইদিন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কেশববাবুর ছুটি বাতিল তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিলেও, তিনি সেই নির্দেশ অমান্য করে ৩ নভেম্বর কাজে যোগ দেন বলে অভিযোগ। ৬ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁর ছুটি নেওয়া ছিল। এই পরিস্থিতিতে অসুস্থ অবস্থাতেই ওইদিন বিকাল পাঁচটা নাগাদ দীপবাবু কাজে যোগ দিলে প্রসূতি বিভাগে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, তাপসবাবু ও কেশববাবু বেআইনিভাবে দীর্ঘদিন হাসপাতালে অনুপস্থিত থেকে শহরের একাধিক নার্সিংহোমে পরিষেবা দিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানতে পারেন। সেইমতো জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে তাঁদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট পাঠানো হয়। তিনি জানান, হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে প্রায় দু’সপ্তাহ আগে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর অতিরিক্ত দু’জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিত্সককে নিয়োগ করেছে।

এ দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসবের কাজ শুরু করতে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক দীপ সরকারকে কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে বদলির নির্দেশ দিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বৃহস্পতিবার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রঞ্জনবাবু লিখিতভাবে দীপবাবুকে দ্রুত ওই হাসপাতালের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞের অভাবে পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও গত প্রায় পাঁচ বছর ওই হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসবের কাজ বন্ধ ছিল। ফলে প্রতিদিনই বহু প্রসূতিকে ২৫ কিলোমিটার দূরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে রেফার করে দিতেন কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে জেলা হাসপাতালের উপর চাপ বাড়ছিল। কালিয়াগ়়ঞ্জ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। তিনি আবার স্থানীয় কুনোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকায় তাঁর পক্ষে অস্ত্রোপচার করে প্রসবের দায়িত্ব সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE