Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
রামপুরহাট হাসপাতাল

অ্যাম্বুল্যান্স নেই, শুধু পড়ে থেকে মৃত্যু তরুণের

সরকারি হাসপাতাল চত্বরে ভিড় করে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সগুলো সরানো হয়েছিল প্রশাসনের উদ্যোগে। প্রতিবাদে ধর্মঘটে ব্যস্ত অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। ঠিক সেই সময়ে প্রয়োজন হলেও অ্যাম্বুল্যান্স না মেলায় মারা গেলেন ‘রেফার’ হওয়া রোগী। কারণ, হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স চার বছর ধরে বেহাল।

খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স।—নিজস্ব চিত্র।

খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৫
Share: Save:

সরকারি হাসপাতাল চত্বরে ভিড় করে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সগুলো সরানো হয়েছিল প্রশাসনের উদ্যোগে। প্রতিবাদে ধর্মঘটে ব্যস্ত অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। ঠিক সেই সময়ে প্রয়োজন হলেও অ্যাম্বুল্যান্স না মেলায় মারা গেলেন ‘রেফার’ হওয়া রোগী। কারণ, হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স চার বছর ধরে বেহাল। আর বহু ছোটাছুটি করেও বৃহস্পতিবার রাতে অন্য গাড়ি পাননি রোগীর আত্মীয়-পড়শিরা।

রামপুরহাট হাসপাতালের এই ঘটনা নিয়ে সরকারি স্তরে লিখিত অভিযোগ হয়নি। তবে বীরভূমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিক মণ্ডল খবর শুনে বলেন, “চার বছর অ্যাম্বুল্যান্স খারাপ হয়ে রয়েছে। কিন্তু আমি জানতাম না। মনে হয়, কাজ চলে যাচ্ছিল বলেই কেউ বলেনি। সুপারের জানানো উচিত ছিল। আমি ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।”

রামপুরহাটের কালিডাঙা গ্রামের সেন্টু বেসরা (২০) ডান পায়ে চোট লেগে হওয়া ক্ষততে দীর্ঘদিন ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার বাড়াবাড়ি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হন। সেপ্টিসেমিয়া ধরা পড়ে। জন্ডিসও। সেন্টুকে দ্রুত বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করার জন্য ‘রেফার’ করা হয় সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ। ওই তরুণের মা সর্বাণী বেসরার ক্ষোভ, “অ্যাম্বুল্যান্স পেলাম না। ছেলেটা পড়ে থেকেই মারা গেল!” পড়শি নিমাই লেট, বিদ্যুৎ মণ্ডলদের অভিজ্ঞতা, হাসপাতালের আধিকারিকদের অনুরোধ করে শুনতে হয়েছে, “হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স খারাপ। দেখছি।” ওই যুবকদের অভিযোগ, “বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা হাসপাতালের বাইরেই গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ধর্মঘট ভেঙে ওঁরা যেতে রাজি হলেন না।”

কীসের ধর্মঘট? স্থানীয় সূত্রের খবর, হাসপাতালের হাল দেখতে বৃহস্পতিবার দুপুরে আচমকা সেখানে যান নতুন মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস। হাসপাতাল চত্বরে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স, তার চালক-মালিকদের ভিড় দেখে তিনি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। পুলিশ গাড়িগুলিকে হাসপাতালের বাইরে বার করে দেয়। অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের ক্ষোভ, “যে কোনও বড় হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স থাকে। এসডিও তা মানতে চাননি। এর প্রতিবাদেই পরিষেবা বন্ধ ছিল।” তবে ধর্মঘটের জন্য সেন্টুর আত্মীয়দের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, মানতে চাননি তাঁরা। অন্য দিকে, এসডিও বলেন, হাসপাতাল চত্বরে অবৈধ পার্কিং দেখে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। অ্যাম্বুল্যান্স চালক-মালিকদের বৃহস্পতিবার আলোচনার জন্য ডেকেছিলেন। তাঁরা আসেননি। উল্টে পরিষেবা বন্ধ রেখেছিলেন।

দু’ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে না পেরে সেন্টুর পরিবার হাসপাতাল সুপার সুবোধকুমার মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনিও অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে পারেননি। শেষে রাত ৯টার পরে সুপার যখন পরিবারটিকে নিজের একটি গাড়ি ব্যবহারের জন্য দেন, ততক্ষণে সেন্টুর লড়াই শেষ।

এলাকারই বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “কেন এত দিন অ্যাম্বুল্যান্স খারাপ হয়ে পড়ে আছে, সুপারকে জবাব দিতে হবে।” হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স বা প্রসূতি পরিষেবার জন্য চালু হওয়া নিশ্চয় যান প্রকল্পের গাড়িগুলির (ন’টি) কী হল? সুপারের বক্তব্য, “নিশ্চয়-যান ও ডাক্তারদের জন্য নির্দিষ্ট একটি গাড়ির ভরসাতেই বোধ হয় অ্যাম্বুল্যান্সের দিকে কারও নজর পড়েনি। ওই রোগীকে সরানো নিয়ে সমস্যার সময়ে ছ’টি নিশ্চয়-যান বাইরে ছিল। বাকি তিনটির চালকও ধর্মঘটে সামিল হন।” এই ঘটনায় ‘শিক্ষা নিয়ে’ দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স সারানোর প্রতিশ্রুতি দেন সুপার। সেন্টুর মা-র আর্তনাদ কিন্তু থামছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ambulance rampurhat hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE