Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আমেরিকা-তোষণেই কোপ ওষুধের দামে, বলল কংগ্রেস

গত কাল আমেরিকা রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার ২৪ ঘণ্টা আগেই জীবনদায়ী কিছু ওষুধের ওপর থেকে যে ভাবে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়েছে সরকার, তা নিয়ে আজ নতুন বিতর্ক তৈরি হল। কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, আমেরিকাকে খুশি করতেই এই পদক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যার গুণাগার দিতে হবে ক্যানসার, এড্স, মধুমেহ বা রক্তচাপে ভোগা রোগীদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫১
Share: Save:

গত কাল আমেরিকা রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার ২৪ ঘণ্টা আগেই জীবনদায়ী কিছু ওষুধের ওপর থেকে যে ভাবে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়েছে সরকার, তা নিয়ে আজ নতুন বিতর্ক তৈরি হল। কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, আমেরিকাকে খুশি করতেই এই পদক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যার গুণাগার দিতে হবে ক্যানসার, এড্স, মধুমেহ বা রক্তচাপে ভোগা রোগীদের। কারণ, এই রোগে দীর্ঘদিন ধরে ও কিছু ক্ষেত্রে আজীবন ওষুধ খেতে হয়। ফলে এই ওষুধগুলির দামের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ উঠে গেলে সাধারণ মানুষ চাপে পড়বেন।

কেন্দ্রীয় রসায়ন মন্ত্রকের এই পদক্ষেপের সময়টা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিরোধীরা। কারণ, ভারতে ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ওপর নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি অনেক দিনই সরব। মেধাসত্ত্ব আইনের অস্বচ্ছতা নিয়েও তাঁদের আপত্তি রয়েছে। নরেন্দ্র মোদী মার্কিন মুলুকে পা রাখার আগেই সে দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছে যে তাঁদের উদ্বেগের বিষয়গুলি যেন নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনায় তোলা হয়। প্রধানমন্ত্রী আমেরিকা সফরে যাওয়ার আগে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধীরা স্বাভাবিক ভাবেই দু’য়ে দু’য়ে চার করছেন।

কেন্দ্রে ইউপিএ জমানায় ওষুধের মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত জাতীয় প্রতিষ্ঠান এনপিপিএ-র মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধের দামের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছিল সরকার। তৎকালীন কেন্দ্রীয় রসায়ন মন্ত্রী শ্রীকান্ত জেনার দাবি, এমন কিছু ওষুধের দামের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল যেগুলি ‘ন্যাশনাল লিস্ট অব এসেনশিয়াল মেডিসিন’ তথা অত্যাবশক ওষুধের তালিকাভুক্ত না হলেও জীবনদায়ী ওষুধ হিসেবে পরিচিত। এতে ক্যান্সার, মধুমেহ, হৃদ্রোগ ও রক্তচাপ-জনিত সমস্যার প্রতিকারে ব্যবহৃত ওষুধের দাম এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে গিয়েছিল। উদাহরণ দিয়ে জেনা বলেন, “গ্লেভেক নামে ক্যানসারের যে ওষুধের দাম ছিল ১ লক্ষ ৮ হাজার টাকা। তা কমিয়ে সাড়ে ৮ হাজার টাকা করা হয়। বহু অ্যান্টিবায়োটিকের দামও কমিয়ে প্রায় অর্ধেক করা হয়।

কিন্তু গত পরশু কেন্দ্রীয় রসায়ন মন্ত্রকের নির্দেশে এনপিপিএ জানিয়ে দিয়েছে, তারা ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিচ্ছে। একমাত্র দেশে আপৎকালীন পরিস্থিতি বা মহামারীর মতো সমস্যা দেখা দিলে তবেই মূল্য নির্ধারণের উপরে নিয়ন্ত্রণ আরোপ হবে। যদিও সরকারের একটি শীর্ষ সূত্র বলছে, জুলাই মাসের ১০ তারিখ এনপিপিএ অ্যান্টি-ডায়াবেটিক এবং হৃদ্রোগ সংক্রান্ত আরও ১০৮টি ওষুধের ওপরেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। সেগুলি অত্যাবশক ওষুধের তালিকায় নেই। এনপিপিএ-র এই সিদ্ধান্তে কিছু বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা আপত্তি জানাচ্ছিল। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে এনপিপিএ-র জুলাই মাসের নির্দেশিকা তথা সেই মোতাবেক নিয়ন্ত্রণও খারিজ হয়ে গেল।

কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, ভারতের ওষুধের বাজার বিপুল। সরকার ওষুধের দামের ওপরে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিলে মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। কেন্দ্রের নীতির কারণে দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক ছোট সংস্থাগুলিও বিপন্ন হতে পারে। শ্রীকান্ত জেনার অভিযোগ, মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি যাতে এ দেশে বিনিয়োগ করে বাজার ধরতে পারে, সেই কারণেই মোদী সুবিধা করে দিলেন।

জেনার কথায়, “ভারতে ৪.১ কোটি মধুমেহ রোগে আক্রান্ত, হৃদ্রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪.৭ কোটি, ১১ লক্ষ মানুষ ক্যানসারে ও প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ এড্সে ভুগছেন। সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে এই রোগীরা ও তাঁদের পরিবার দুর্দশায় পড়বেন। তিনি জানান, জীবনদায়ী ওষুধের দাম বেড়ে কোথায় দাঁড়ায় তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে কংগ্রেস। তার পর দেশ জুড়ে এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামবে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

medicine america congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE