Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এএসভি অমিল, চেয়ে পাচ্ছে না স্বাস্থ্যকেন্দ্র

বরাবাজারের সিন্দরি গ্রামের বাসিন্দা চিত্ত মাহাতো সাতসকালেই জমি দেখতে বেরিয়েছিলেন। জমির আলে সাপ ঘাপটি মেরে ছিল বুঝতে পারেন নি। তাঁর পায়ে সাপ ছোবল মারে। সাত তাড়াতাড়ি আত্মীয়েরা তাঁকে মানবাজার গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, সাপে কাটার প্রতিষেধক ‘অ্যান্টি স্নেক ভেনম’ বা এএসভি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভান্ডারে নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৮
Share: Save:

বরাবাজারের সিন্দরি গ্রামের বাসিন্দা চিত্ত মাহাতো সাতসকালেই জমি দেখতে বেরিয়েছিলেন। জমির আলে সাপ ঘাপটি মেরে ছিল বুঝতে পারেন নি। তাঁর পায়ে সাপ ছোবল মারে। সাত তাড়াতাড়ি আত্মীয়েরা তাঁকে মানবাজার গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, সাপে কাটার প্রতিষেধক ‘অ্যান্টি স্নেক ভেনম’ বা এএসভি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভান্ডারে নেই। ফাঁপরে পড়ে যান চিত্তবাবুর আত্মীয়েরা। শেষে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন মানবাজার ২ ব্লকের বারি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিছু এএসভি রয়েছে। গাড়ি নিয়ে তাঁরা সেখানেই ছুটলেন।

সাম্প্রতিক এই ঘটনার পরে জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে খোঁজ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ছবিটা প্রায় সর্বত্র একই। সাপে কাটার রোগীর সংখ্যা যেখানে বেশি, এই ভরা বর্ষায় সেই পুরুলিয়া জেলায় সাপে কাটার প্রতিষেধক কেন পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত করা নেই, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। পুরুলিয়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষও স্বীকার করে নিয়েছেন, জেলা সদর হাসপাতাল-সহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এএসভি অমিল। তিনি বলেন, “আমরা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে এএসভি চেয়ে পাঠিয়েছি। দফতর সূত্রে জেনেছি কয়েকদিনের মধ্যে জেলায় এএসভি চলে আসবে। আশাকরি শীঘ্রই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে এএসভি পাঠানো যাবে।”

মানবাজারের বিএমওএইচ অরুণাভ ঘোষ বলেন, “দু’মাস আগেই আমরা এএসভি চেয়ে আবেদন জানিয়েছি। এখনও পাইনি। সাপে কাটা রোগীদের তাই বাধ্য হয়ে অন্যত্র যেতে বলছি।” তিনি জানান, মানবাজারে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকায় আশপাশের ব্লকের রোগীরাও সেখানে যান। ফলে অন্য ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র অপেক্ষা মানবাজারে রোগীর চাপ বেশি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠকে এই বিষয়টি জানিয়ে তিনি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র অপেক্ষা মানবাজারে কিছু বেশি সাপে কাটার প্রতিষেধক চেয়েছেন। পুঞ্চার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁদের কাছেও খুবই কম প্রতিষেধক রয়েছে। মানবাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কয়েকটি অ্যাম্পুল চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু মজুত কম থাকায় তাদের দেওয়া যায়নি। বান্দোয়ানের বিএমওএইচ অবিনাশ বেসরা জানান, মাস তিনেক আগে এএসভি-র শেষ সরবরাহ পেয়েছিলাম। সামান্য যে টুকু অ্যাম্পুল রয়েছে তাতে একজন সাপে কাটা রোগীর পক্ষেও যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, “১১ জুলাই ১০০ অ্যাম্পুল চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলাম। এক মাস হয়ে গেলেও সরবরাহ পাইনি।”

জেলার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের মতে, ফি বছর পুরুলিয়ায় বর্ষায় সাপে কাটার ভরা মরসুমে প্রচুর সাপে কাটা মানুষ আসেন। তবে সবাইকে যে বিষধর সাপে কাটে এমন নয়। যে পরিমাণ সাপে কাটা রোগী আসেন, তার মধ্যে শতকরা ৩০ জন রোগীকে সাপে কাটার প্রতিষেধক দিতে হয়। বাকিদের পর্যবেক্ষণের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি রাখতে হয়। বিষহীন সাপে কাটলেও অনেকসময় রোগী এবং তাঁর আত্মীয়েরা আতঙ্কে থাকেন বলে সাহস ফিরিয়ে আনতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে এএসভি না থাকায় যাঁদের বিষধর সাপে ছোবল মারছে, তাঁদের চিকিৎসা সঙ্কটে পড়েছে।

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া শাখার সম্পাদক মধুসূদন মাহাতোর মতে, “জল, জমি ও জঙ্গল নিয়ে পুরুলিয়ার বাসিন্দাদের জীবন। ফি বছর অন্তত ৩০-৪০ জন সাপের ছোবলে মারা যান। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালেও এএসভি নিয়ে সঙ্কট চলছে। অথচ এই সময় জেলার প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এএসভি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা উচিত। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই এর কারণ।” তাঁর আশঙ্কা, জেলায় এখনও কিছু মানুষ সাপে কাটা রোগীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না নিয়ে গিয়ে ওঝা, গুণীনের কাছে নিয়ে যান। তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচার চালানো হয়। অথচ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে যদি তাঁরা চিকিৎসা না পান, তাহলে কুসংস্কার ভাঙার লড়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষের কাছেও ভুলবার্তা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

manbazar snake bite chitto mahato lack of asv
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE