অবস্থান-বিক্ষোভ। ছবি: সামসুল হুদা।
রাজ্য সরকার সম্প্রতি ক্যানিং হাসপাতালকে সাপে কামড়ানো রোগীদের মডেল হাসপাতাল বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ সেই হাসপাতালেই একের পর এক মৃত্যু হচ্ছে সাপে কাটা রোগীর। এমন কী ৮০টি এভিএস দিয়েও বাঁচানো যায়নি রোগীকে, এমন নজিরও একাধিক। ক্যানিং হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক মাসে ১০ জন সাপে কামড়ানো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মধ্যে ৪ জন মারা গিয়েছেন। তিনজনকে কলকাতায় রেফার করা হয়েছে।
ক্যানিঙে সাপে কামড়ানো রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করে মানুষকে হাসপাতালমুখী করার চেষ্টা করছি আমরা। এ বার এভিএসের গুণগত মান নিয়ে আন্দোলন শুরু করতে হবে। হাসপাতালে যে এভিএস দেওয়া হয়েছে, তার গুণগত মান এবং কার্যক্ষমতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।’’সাপের কামড়ে জীবনদায়ী ওষুধ এভিএস-র গুনগত মান পরীক্ষা করার দাবিতে সোমবার মহকুমাশাসক এবং ক্যানিং হাসপাতালের সুপারকে স্মারকলিপি দিল যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা। এই সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে ওঝা, গুনিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। সাপে কামড়ালে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে সঠিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে বলে এই সংস্থা। বিজনবাবু বলেন, ‘‘অতীতে দেখা গিয়েছে গড়ে ৩০ থেকে ৪০টি এভিএসেই রোগী সুস্থ হয়ে যেত। আর এখন এতগুলি এভিএস দিয়েও রোগীকে বাঁচানো যাচ্ছে না। তাই এভিএসের গুনগত মান পরীক্ষা করার দাবি জানাচ্ছি।’’ মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, ‘‘এভিএসের গুনগত মান নিয়ে একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’
কেন উঠছে এমন সন্দেহ?
জয়নগর থানার পূর্ব গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা অর্জুন হালদারকে শুক্রবার ভোররাতে ঘুমের মধ্যে কালাচ সাপে কামড়ায়। সকাল ৬টার মধ্যে তাঁকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বুকে যন্ত্রণা, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, গলায় ব্যথা, মুখে লালা জমার মতো নানা উপসর্গ ছিল। চিকিৎসকেরা তাঁকে দফায় দফায় মোট ৮০টি এভিএস দেওয়ার পরেও রোগীর অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসার পথেই মারা যান বছর আঠাশের ওই রোগী।
অর্জুন হালদারের দাদা পার্বতী হালদার বলেন, ‘‘ভাইকে সাপে কামড়ানোর পরে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। চিকিৎসাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু বাঁচানো গেল না।’’ হাসপাতালের সাপে কামড়ানো রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমর রায় বলেন, ‘‘সাধারণত সাপে কামড়ানো রোগীদের ৪০-৫০টি এভিএস দিলেই রোগী চিকিৎসায় সাড়া দিতে থাকেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ৭০-৮০টি এভিএস দেওয়ার পরেও কেন রোগী কোনও সাড়া দিলেন না, তা দেখতে হবে।’’
শুক্রবার বিকেলেই অর্জুনের আত্মীয়া প্রতিমা মণ্ডলকে সাপে কামড়ায়। তিনি কাঠের ঘরে কাঠ সরাতে গিয়ে সাপের কামড় খান। তাঁকেও ক্যানিং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২০টি এভিএস দেওয়ার পরে তাঁর অবস্থা অবশ্য স্থিতিশীল। শনিবার ভোর রাতে বাসন্তীর কলহাজরা গ্রামের বাসিন্দা জ্ঞানেন্দ্র রায়কে ঘুমের মধ্যে কালাচ সাপে কামড়ায়। সকালে তাঁকে ক্যানিং হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে ৭০টি এভিএস দেওয়া হয়। তারপরেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পাঠানো হয় কলকাতার এম আর বাঙুর হাসপাতালে। হাসপাতালসূত্রে খবর, তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সরকারি হাসপাতালে সাধারণত তরল অথবা পাউডার জাতীয় এভিএস সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি সরকারি ভাবে হাসপাতালে শুধু তরল এভিএস সরবরাহ করা হচ্ছে। ওই এভিএস কোল্ড স্টোরেজে রাখতে হয়। কিন্তু পাউডার জাতীয় এভিএস সাধারণ তাপমাত্রায় রাখা যায়। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি তাপমাত্রা যথাযথভাবে রক্ষা করা যায়নি বলেই ওষুধের মান নষ্ট হচ্ছে?
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সে কথা মানতে চাননি। সুপার ইন্দ্রনীল সরকার বলেন, ‘‘আমরা এভিএস দিয়ে রোগীর সঠিক চিকিৎসা করেছিলাম। ওই রোগীকে ভেন্টিলেশনের জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়েছিল।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম দাস মালাকার বলেন, ‘‘এভিএসের গুণগত মান নিয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করেন, তা হলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখব।’’ মন্তব্য করেননি রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীও। তিনি বলেন, ‘‘খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। তদন্ত না করে কিছু বলা যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy