পর্যাপ্ত দক্ষ কর্মী নেই। নানা রক্ত পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় কিটের যথাযথ সরবরাহ নেই। ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা নেই। তাই দ্রুত রোগ নির্ণয়ে সময়ে রিপোর্ট মেলারও ব্যবস্থা নেই। এতগুলি নেই নিয়েই চলছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাইক্রো বায়োলজি বিভাগ। অথচ এনসেফ্যালাইটিসের মতো রোগ নির্ণয়ে এর উপরই নির্ভর করছেন গোটা উত্তরবঙ্গের মানুষ।
প্রতি দিনই এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে জ্বরে আক্রান্ত অন্তত ৮০ রোগীর রক্ত পরীক্ষার জন্য এই ল্যাবরেটরিতে আসছে। এক দিনে ৩০ থেকে ৪০টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে জেলাগুলি থেকে আসা রক্তের রিপোর্ট পাঠাতে লেগে যাচ্ছে সাত থেকে দশ দিন। বিপাকে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসকদের। বহুক্ষেত্রে জীবন দিয়ে মাসুল গুনতে হচ্ছে আক্রান্তদের। চিকিৎসকদের একাংশ জানান, দ্রুত রক্ত পরীক্ষা রিপোর্ট পেলে সেই মতো ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়। তা না হলে আন্দাজে চিকিৎসা চালাতে হয়। তাতে বহু সময় পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে। তাঁরাও রেফার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সমস্যা নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউই। বিশেষ করে হাসপাতালের সুপারের পদ থেকে সম্প্রতি অমরেন্দ্র সরকারকে সাসপেন্ড করার পরে এখন ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে চিকিৎসক ও কর্মী মহলে। মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের প্রধান কুমকুম ভট্টাচার্য বলেন, “এ ব্যাপারে কিছু বলব না। যা বলার কলেজ কর্তৃপক্ষই বলবেন।” সোমবার রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলে গিয়েছিলেন, “২৪ ঘণ্টা ল্যাবরেটরি খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য তিন জন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।”
উত্তরবঙ্গে সাত জেলার মধ্যে শুধু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাইক্রো বায়োলজির ল্যাবরেটরিতেই রোগীর রক্ত এবং সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা করে এনসেফ্যালাইটিস নির্ণয় করা হয়। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছেন, সেখানে রয়েছেন দু’জন টেকনিশিয়ান। তারা ব্যাকটোলজি বিভাগের কর্মী। হাসপাতালে ভর্তি এবং বহির্বিভাগে রোগীর রক্ত-মল-মূত্র পরীক্ষার কাজে যুক্ত। এনসেফ্যালাইটিস নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষার কাজ ও রিপোর্ট তৈরি করেন এক জন মাইক্রো বায়োলজিস্ট। এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণে যখন লোক মারা যাচ্ছেন তখনও ব্যবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি।
জুলাই মাসের শুরুতে উত্তরবঙ্গে নানা জেলায় রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিলেন না তাঁরা। কিটেরও অভাব দেখা দেয়। এরই পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা তো আছেনই, তার উপর শিলিগুড়ির বিভিন্ন নার্সিংহোম থেকে, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুর দুয়ার, মালদহ, দুই দিনাজপুরের সব সরকারি হাসপাতাল থেকে রক্তের নমুনা পাঠানো হচ্ছে এই হাসপাতালে। দু’জন কর্মী দিয়ে যে কাজ চালানো মুশকিল তা বুঝেছেন কর্তৃপক্ষও। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি তিন জন বাড়তি কর্মী আনা হয়েছে। দিন কয়েক আগে দৈনিক চুক্তির ভিত্তিতে এক মহিলা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। কলকাতা থেকে এসেছেন এক কর্মী। আপাতত পাঁচ জনে মিলে ব্যাপারটা সামলাচ্ছেন। এনসেফ্যালাইটিস নির্ণয়ের কাজে যুক্ত থাকছেন তিন জন। প্যারা-মেডিক্যাল কোর্সের পড়ুয়াদের একাংশকে দিয়ে এ সংক্রান্ত নানা কাজ করানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy