Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ক্যানসার কি শুধু তামাক থেকেই, বিতর্কে সাংসদ

সিগারেটের প্যাকেটের ৮৫ শতাংশ জায়গা জুড়েই রাখতে হবে স্বাস্থ্যহানি সংক্রান্ত বিধিসম্মত সতর্কীকরণ এবং ছবি। যাতে সিগারেট কেনার সময়ে সেই ছবি দেখে মানুষ ধূমপানের কুফল সম্পর্কে আরও বেশি করে ওয়াকিবহাল হতে পারেন। মঙ্গলবার রাত পোহালেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই নতুন নির্দেশিকা জারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শাসক দলেরই এক সাংসদের মন্তব্য জল ঢেলে দিল কেন্দ্রের ধূমপান বিরোধী পদক্ষেপে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১০
Share: Save:

সিগারেটের প্যাকেটের ৮৫ শতাংশ জায়গা জুড়েই রাখতে হবে স্বাস্থ্যহানি সংক্রান্ত বিধিসম্মত সতর্কীকরণ এবং ছবি। যাতে সিগারেট কেনার সময়ে সেই ছবি দেখে মানুষ ধূমপানের কুফল সম্পর্কে আরও বেশি করে ওয়াকিবহাল হতে পারেন। মঙ্গলবার রাত পোহালেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই নতুন নির্দেশিকা জারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শাসক দলেরই এক সাংসদের মন্তব্য জল ঢেলে দিল কেন্দ্রের ধূমপান বিরোধী পদক্ষেপে।

ওই সাংসদ আবার যে সে নন, দেশ জুড়ে ধূমপানের অভ্যাস ঠেকাতে গঠিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানও বটে। দিলীপ কুমার গাঁধী নামে ওই সাংসদ কার্যত তাঁর নিজের দলের নীতিগত সিদ্ধান্তকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ক্যানসার শুধু তামাকের জন্যই হয় না। এ নিয়ে এ দেশে তো এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি। যা হয়েছে, সব বিদেশে। তা হলে কীসের ভিত্তিতে এমন নির্দেশ দেওয়া হবে?’’ তাঁর দাবি, এমন প্রচারে মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও ছত্তীসগঢ়ে অন্তত চার কোটি বিড়ি-শ্রমিক বিপন্ন হয়ে পড়বেন। সিগারেট প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে এই সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়ার আগে এ নিয়ে আরও অনেক ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি। সব বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে এগোনো দরকার।

মহারাষ্ট্রের আহমদনগরের সাংসদ দিলীপকুমার গাঁধীর এ হেন মন্তব্যে সিগারেট প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি সাময়িক ভাবে স্বস্তির শ্বাস ফেলেছে। যদিও সব মহলেই এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সাংসদের ওই মন্তব্য গোটা প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে কয়েক ধাপ পিছিয়ে দিল বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরাও। তাঁদের মতে, যে দেশে প্রতি বছর তামাকসেবন সংক্রান্ত নানা অসুখে প্রায় ন’লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়, সেখানে এই মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। চাপের মুখে পড়ে ওই সাংসদ অবশ্য মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘তামাক ক্ষতিকারক, এই ব্যাপারে কোনও দ্বিমত নেই। আমাদের দেশে এ নিয়ে সমীক্ষা হওয়া দরকার, আমি এটাই বলেছি।’’ কিন্তু তাতে বিতর্ক থামেনি।

সাংসদের মন্তব্য শুনে ক্যানসার শল্যচিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তামাক থেকে যে ক্যানসার হয় এ নিয়ে প্রচুর গবেষণা রয়েছে। টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালও অনেক কাজ করেছে। মেডিক্যাল পাঠ্য বইয়েও তথ্য রয়েছে। তার পরেও এমন মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। যিনি ওই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি গোটা বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নন। কাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি এত বড় একটা মন্তব্য করলেন, জানা দরকার। এমন গুরুতর একটা বিষয়ে কোনও জনপ্রতিনিধির এমন লঘু মন্তব্য করা শোভন নয়।’’

গত নভেম্বরে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয়, কিছু দিনের মধ্যেই প্যাকেট ছাড়া খোলা সিগারেট বিক্রি করা হবে না এবং সিগারেট কেনার ন্যূনতম বয়স করা হবে ২৫ বছর। দেশ জুড়ে স্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মীরা এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। যদিও তা গত চার মাসে বাস্তবায়নের পথে এক চুলও এগোয়নি। এখন সিগারেটের প্যাকেটের ৮৫ শতাংশ জুড়ে ছবির সতর্কবার্তার পরিকল্পনাও পিছিয়ে গেলে তা খুবই ক্ষতিকর হবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মীরাও। ক্যানসার ফাউন্ডেশনের তরফে সুতপা বিশ্বাস বলেন, ‘‘ধূমপানে রাশ টানতে না পারলে মুখ ও গলার ক্যানসার ঠেকানো সম্ভব নয়। ভারতে সাক্ষর মানুষের সংখ্যা অনেকটাই কম। সেখানে বড়সড় ছবি দিয়ে সতর্ক করার পন্থাই সেরা। সাংসদ নিজের কথা বলছেন নাকি সিগারেট প্রস্তুতকারক সংস্থার বক্তব্য ওঁর মুখ দিয়ে বলানো হচ্ছে, সেটাই প্রশ্ন।’’

ধূমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সিগারেটের প্যাকেটে ‘বিধিসম্মত সতর্কীকরণ’ থাকে। কিন্তু তা মানুষের মনে কতটা প্রভাব ফেলে, প্রশ্ন রয়েছে। যাতে এপ্রিল মাস থেকেই সমস্ত সিগারেটের প্যাকেটের ৮৫ শতাংশ জুড়ে সতর্কীকরণের লেখা এবং ছবি থাকে, সে ব্যাপারে গত বছর ডিসেম্বরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা। এ ব্যাপারে সংসদীয় কমিটিও তৈরি হয়েছিল। নাড্ডা জানিয়েছিলেন, ১ এপ্রিল থেকেই এই নিয়ম চালু করতে আগ্রহী তাঁরা। কিন্তু দিলীপ গাঁধী গোটা প্রক্রিয়াটার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন। বিষয়টি নিয়ে এ দিন কিছু বলতে চাননি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা। দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘আমরাও অন্ধকারে। নির্দেশিকা জারি নিয়ে অনেকটা এগোনো হয়েছিল। এখন সব বিশ বাঁও জলে। কারণ যিনি ওই কথাগুলো বলেছেন নতুন নিয়ম তৈরির পুরোধা হওয়ার কথা ছিল তাঁরই।’’

বিরোধী নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে জানিয়েছেন, এই মন্তব্যে তিনি স্তম্ভিত। তাঁর কথায়, ‘‘ক্যানসার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই দিলীপ গাঁধীর। আমি ওঁর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, ‘‘বিজ্ঞানকে অস্বীকার করা যায় না। আমি ওই মন্তব্যের পুরোপুরি বিরোধিতা করছি।’’

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন গোড়া থেকেই তামাক বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কী ভাবে সিগারেট, গুটখা সহ অন্য তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমানো যায়, সে ব্যাপারে গোড়া থেকেই উদ্যোগী হন তিনি। তাঁর পরে দফতরের দায়িত্ব পেয়ে জে পি নাড্ডাও ধূমপান বিরোধিতার কথা বলেছেন। এখন সেই সরকারেরই ধূমপান ঠেকাতে গঠিত সংসদীয় কমিটির নেতার এমন আচমকা মন্তব্য সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE