কলকাতার যমজ শহর হাওড়া। প্রাচীন এই দুই শহরের ‘এক নম্বর নাগরিক’দের কথাতেও অনেক মিল।
কলকাতার অ-চিকিত্সক মেয়র যা বলেন, হাওড়ার চিকিত্সক মেয়রও তা-ই বলেন। যেমনটা তিনি বলেছিলেন কয়েক দিন আগেই। পুর-এলাকার একটি কলোনির ৫০টি পরিবারে এক জন করে অজানা জ্বরে আক্রান্ত হলেও তার কারণ বুঝতে পারেননি চিকিত্সক রথীন চক্রবর্তী। নিজে এক জন চিকিত্সক হয়েও জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে পরীক্ষা করে ও উপসর্গ দেখেও তিনি বুঝতে কিছুই পারেননি। তখন অ-চিকিত্সক ব্যক্তির মতো তিনিও মন্তব্য করেছিলেন “এই জ্বর ডেঙ্গি কি না জানি না।” যদিও রাজ্যে তত দিনে ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু হয়ে গিয়েছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ওই এলাকার জ্বরে আক্রান্ত ১০ জন বাসিন্দার রক্ত পরীক্ষা করার পরেই অবশ্য টনক নড়েছে চিকিত্সক মেয়রের। এখন অগত্যা নিজের কথা নিজেই ফিরিয়ে নিচ্ছেন রথীনবাবু। বুধবার হাওড়ায় এসে পৌঁছেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সেই রিপোর্ট। রক্ত পরীক্ষার সেই রিপোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছে ৭ জনের রক্তেই মিলেছে ডেঙ্গির জীবাণু।
আর এর পরে চিকিত্সক মেয়র অবশ্য বলছেন, “ডেঙ্গি হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে জায়গাটা রেলের। তাই ওঁদের বিষয়টা দেখা উচিত।” যদিও ডেঙ্গি মোকাবিলায় রেলের কী করণীয়, তা স্পষ্ট করেননি হাওড়ার মেয়র। তবে ডেঙ্গি কবলিত এলাকায় ৭০টি মশারি ও মশা মারার ওষুধ পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেছেন রথীনবাবু।
দিন দশেক আগে জানা যায়, দুর্গাপুজোর পর থেকেই হাওড়া পুরসভার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বমঙ্গলা কলোনির ৫০টি পরিবারের এক জন করে অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকী তা গোটা পরিবারেই সংক্রমিত হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টা প্রকাশ্যে আসার পরেও পুরসভা তেমন কোনও ভূমিকা গ্রহণ করেনি বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের। তত দিনে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় জ্বরে আক্রান্ত কয়েক জন বাসিন্দাকে কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখান থেকেই জানা যায়, তাঁরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। সংবাদমাধ্যমে এই অজানা জ্বর নিয়ে হইচই হতেই কিছুটা নড়েচড়ে বসেন পুর-কর্তৃপক্ষ। ঘটনাস্থলে যান চিকিত্সক তথা মেয়র রথীন চক্রবর্তী। তবে জ্বরে আক্রান্তদের পরীক্ষা করে তিনি অবশ্য ডেঙ্গির আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
অন্য দিকে, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে। সেখান থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়ে জ্বরে আক্রান্ত ১০ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এলাইজা পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে দেখা যায় সাত জনেরই ডেঙ্গি হয়েছে। বুধবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে সেই রিপোর্ট এসে পৌঁছয় হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরে। রিপোর্ট পেয়েই অবশ্য তড়িঘড়ি নড়েচড়ে বসেন সকলেই। বৈঠকে বসেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও মেয়র। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যুদ্ধকালীন তত্পরতায় ডেঙ্গি মোকাবিলা করতে হবে।
ডেঙ্গি ধরা পড়ার বিষয়টা নিয়ে বেশি মুখ খুলতে চাননি জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে পুরসভার কর্তারা। তবে বৃহস্পতিবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় বলেন, “১০ জনের মধ্যে ৭ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। পুরসভাকে তত্পরতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। জমা জল ফেলে দিতে হবে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সব কিছু নজরদারি করতে হবে। এর সঙ্গে চিকিত্সাগত দিক থেকে যে সহযোগিতা দরকার, তা আমরা করব।”
এ দিন রথীনবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফিভার ক্লিনিক চালু করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy