Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
হাওড়া জেলা হাসপাতাল: চোখ ফিরে পেলেন বৃদ্ধা

চেন্নাইয়ের বিশেষজ্ঞকে ফোন করে চোখে জটিল অস্ত্রোপচার

ডাক্তারবাবু বুঝতে পারছিলেন, যে ধরনের অস্ত্রোপচার করতে হবে, তার পরিকাঠামো জেলা হাসপাতালে নেই। পাশাপাশি তিনি এ-ও বুঝছিলেন যে, দ্রুত অস্ত্রোপচার না হলে রোগীর চোখটাই নষ্ট হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত তাঁর? কয়েক মিনিটের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন হাওড়া জেলা হাসপাতালের চোখের চিকিত্‌সক দেবাশিস মণ্ডল। মোবাইলে রোগীর চোখের ছবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণ ভারতে এক চোখের হাসপাতালে তাঁর পরিচিত এক চক্ষু-বিশেষজ্ঞের কাছে।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:১৩
Share: Save:

ডাক্তারবাবু বুঝতে পারছিলেন, যে ধরনের অস্ত্রোপচার করতে হবে, তার পরিকাঠামো জেলা হাসপাতালে নেই। পাশাপাশি তিনি এ-ও বুঝছিলেন যে, দ্রুত অস্ত্রোপচার না হলে রোগীর চোখটাই নষ্ট হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত তাঁর? কয়েক মিনিটের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন হাওড়া জেলা হাসপাতালের চোখের চিকিত্‌সক দেবাশিস মণ্ডল। মোবাইলে রোগীর চোখের ছবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণ ভারতে এক চোখের হাসপাতালে তাঁর পরিচিত এক চক্ষু-বিশেষজ্ঞের কাছে। তার পরে সেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলা হাসপাতালেই অস্ত্রোপচার করে ফেললেন তিনি।

যেখানে কথায় কথায় রোগীকে অন্য হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দায় এড়ান ডাক্তারেরা, সেখানে এই ঘটনা অন্য এক নজির তৈরি করল বলে মনে করছে চিকিত্‌সক মহল।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে বাঁ চোখের পাতায় একটি ছোট্ট ফুসকুড়ির মতো হয়েছিল হাওড়ার ইছাপুরের বাসিন্দা, সত্তর বছরের অন্নপূর্ণা কোলের। কিছু দিনের মধ্যেই সেই ফুসকুড়ি থেকে দগদগে ঘা হয়ে বাঁ চোখের পাতা ফুলে গিয়ে চোখ ঢেকে দেয়। এর পরে সেখান থেকে রক্ত পড়তে থাকে। অন্নপূর্ণাদেবীকে নিয়ে এর পরে বাড়ির লোক কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটে বেড়ান। কিন্তু চোখ সারা তো দূরের কথা, চোখের পাতায় পচন ধরে যায়। এক সময়ে চিকিত্‌সকেরা ক্যানসার হয়েছে বলেও জানিয়ে দেন। এতে বাড়ির লোকজনও কিছুটা হতোদ্যম হয়ে পড়েন।

শেষে গত ৭ তারিখ অন্নপূর্ণাদেবী যখন তাঁর মেয়ের সঙ্গে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ওই ক্ষতবিক্ষত চোখ নিয়ে পৌঁছন, তখন সেখান থেকেও কার্যত তাঁকে বিদায় করে দেওয়াই হচ্ছিল। চোখের চিকিত্‌সক দেবাশিসবাবু তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়ে সমস্ত ঘটনা শোনেন। চোখ পরীক্ষা করে বোঝেন দ্রুত অস্ত্রোপচার করা দরকার। কিন্তু জেলা হাসপাতালে ওই ধরনের অস্ত্রোপচার হয় না। তা হলে কী করা সম্ভব? মোবাইলে ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি পাঠিয়ে দেন চেন্নাইয়ে শঙ্কর নেত্রালয়ে।

দেবাশিসবাবু বলেন, “একদম সময় ছিল না। চোখটা বাঁচাতে গেলে দ্রুত অস্ত্রোপচার জরুরি ছিল। তাই আমি মোবাইলে ছবি তুলে চেন্নাইয়ের চক্ষু-বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্ময় বিশ্বাসকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম মতামত নেওয়ার জন্য। ছবি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি জানিয়ে দেন, কী কী করতে হবে। সেই পরামর্শ মতো পরদিনই আমরা অস্ত্রোপচার করি।”

অস্ত্রোপচার করে ওই বৃদ্ধার বাঁ চোখের পাতা সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়। এর পরে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে চামড়া কেটে প্লাস্টিক সার্জারি করে নতুন চোখের পাতা তৈরি করা হয়। চিকিত্‌সকেরা জানান, যদিও পাতাটি সম্পূর্ণ তৈরি হয়নি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তা তৈরি হয়ে যাবে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই বৃদ্ধার চোখের জটিল অস্ত্রোপচার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে একটি জেলা হাসপাতালে, যেখানে চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য উন্নতমানের পরিকাঠামো প্রায় কিছুই নেই। ওই বৃদ্ধার বয়স যথেষ্ট বেশি। তার উপরে হার্টেরও সমস্যা ছিল। ফলে সব মিলিয়ে তাঁকে অজ্ঞান করাই খুব ঝুঁকির কাজ ছিল। হাসপাতাল সূত্রে খবর, খোদ জেলাশাসকের চোখের টিউমারের অস্ত্রোপচার করেও সম্প্রতি সাফল্য পেয়েছেন সেখানকার চিকিত্‌সকেরা।

এ দিকে, বুধবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন অন্নপূর্ণাদেবী। হাসিমুখে বললেন, “অনেক ঘুরেছি। কিন্তু কেউ সারাতে পারেনি। হাওড়া হাসপাতালে এসে যে চোখ ফিরে পাব, ভাবতে পারিনি। সবই ওই ডাক্তারবাবুর দয়ায় হল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

eye operation howrah zilla hospital debashis das
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE