Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ছাড়পত্র পেতে দেরি, কালনায় আয়ুর্বেদ কেন্দ্র গোটাচ্ছে সংস্থা

পুরসভার বিরুদ্ধে ট্রেড লাইসেন্স দিতে গড়িমসির অভিযোগ তুলে চিকিৎসা কেন্দ্র চালু না করার সিদ্ধান্ত নিল বেসরকারি একটি সংস্থা। কালনার ওই চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ছাড়পত্র ও নানা যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করে ফেলেছিল সংস্থাটি। কিন্তু, বারবার ওই লাইসেন্সের জন্য কালনার তৃণমূল ও কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের কাছে আবেদন জানিয়েও তা না মেলায় কেন্দ্রটি চালু করা থেকে তাঁরা পিছিয়ে আসছেন বলে রবিবার জানিয়ে দিলেন সংস্থাটির কর্তা সুশীল মিশ্র।

এই চিকিৎসা কেন্দ্রই চালু হওয়ার কথা ছিল। নিজস্ব চিত্র।

এই চিকিৎসা কেন্দ্রই চালু হওয়ার কথা ছিল। নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩১
Share: Save:

পুরসভার বিরুদ্ধে ট্রেড লাইসেন্স দিতে গড়িমসির অভিযোগ তুলে চিকিৎসা কেন্দ্র চালু না করার সিদ্ধান্ত নিল বেসরকারি একটি সংস্থা। কালনার ওই চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ছাড়পত্র ও নানা যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করে ফেলেছিল সংস্থাটি। কিন্তু, বারবার ওই লাইসেন্সের জন্য কালনার তৃণমূল ও কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের কাছে আবেদন জানিয়েও তা না মেলায় কেন্দ্রটি চালু করা থেকে তাঁরা পিছিয়ে আসছেন বলে রবিবার জানিয়ে দিলেন সংস্থাটির কর্তা সুশীল মিশ্র। পুরসভা অবশ্য গড়িমসির কথা মানতে চায়নি। লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে দাবি করেছেন কালনার পুরপ্রধান তথা তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু।

কালনা শহরে নতুন বাসস্ট্যান্ডের কাছে এসটিকেকে রোডের পাশে পুরসভার ৩৩ শতক জমি জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহারের জন্য নিতে চেয়ে ১৯৯৬ সালে আবেদন জানায় ওই সংস্থাটি। তৎকালীন পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি হয়, জমিটির জন্য মাসে সাত হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর পুরসভার সঙ্গে নতুন চুক্তি হবে। নতুন চুক্তির সময়ে ভাড়া বাড়বে দশ শতাংশ। সংস্থার দাবি, এই নিয়ম মেনে ২০০১ ও ২০০৬ সালে পুরসভার সঙ্গে তাদের নতুন চুক্তি হয়। বর্তমান বোর্ড লিখিত চুক্তির রাস্তায় না গিয়ে ২০১৪ সালের অগস্ট পর্যন্ত দু’বছরের জন্য দু’লক্ষ টাকা আগাম ভাড়া নিয়ে নেয়।

ওড়িশা-সহ দেশের নানা জায়গায় ব্যবসা রয়েছে এই মিশ্র পরিবারের। কালনায় জমিটি পাওয়ার পরে তাঁরা ছোটদের জন্য একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল তৈরি করেন। ২০০১ সালে স্কুলটি কালনা হাসপাতালের কাছে একটি বড় জায়গায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এসটিকেকে রোডের পাশের জমিটির জন্য চুক্তিমাফিক ভাড়া পুরসভাকে মিটিয়ে আসছিল সংস্থাটি। পড়ে থাকা এই জমিতে চলতি বছর সংস্থার তরফে একটি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ হয়। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে সর্বক্ষণের জন্য দু’জন চিকিৎসক রাখা, প্রতি রবিবার এক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মাসের শেষে এক দিন আসার কথা ছিল সিনিয়র আরও এক জন চিকিৎসকের। একই সঙ্গে এই ইউনিটে সপ্তাহে তিন দিন করে এক জন আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ রাখা ও যোগশিক্ষার পরিকল্পনা ছিল।

সংস্থার তরফে রবিবার জানানো হয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই চিকিৎসা ব্যবস্থার নতুন পরিকাঠামো তৈরি করছিল তারা। এতে তাদের ব্যবসায়িক লাভের পরিকল্পনা ছিল না। বরং, শহরবাসী উপকৃত হতেন। নতুন এই কেন্দ্র তৈরি চলাকালীন চলতি বছরের ১১ জুলাই পুরসভার কাছে ট্রেড লাইসেন্স চেয়ে আবেদন জানানো হয়। তা হাতে না পেয়ে ২৮ জুলাই ফের পুরসভাকে চিঠি পাঠানো হয়। সংস্থার দাবি, ১ সেপ্টম্বর তাদের পুরসভায় ডেকে নানা বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তখন দ্রুত ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়। তবে তার পরেও তা না মেলায় ২২ সেপ্টেম্বর ফের একটি চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়, কেন্দ্রটির জন্য ইতিমধ্যে ২৭ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। পড়ে থেকে যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে বসেছে। এই চিঠির প্রেক্ষিতে পুরসভা সংস্থার কাছে জমির পুরনো দলিল চেয়ে পাঠায়। ২৬ সেপ্টেম্বর তা পাঠিয়ে দেওয়ার পরে পুরসভার তরফে আর কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি বলে সংস্থাটির অভিযোগ।

শিল্পপতি সুশীলবাবু জানান, পুরসভার কাছে ট্রেড লাইসেন্স এখনও না মেলায় কেন্দ্রটি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ফলে, যে চিকিৎসকদের নেওয়ার কথা হয়েছিল, দেরির কারণে তাঁরা অন্যত্র চুক্তিবদ্ধ হয়ে গিয়েছেন। সুশীলবাবুর কথায়, “আমাদের ব্যবসা দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও কালনায় পরিবারের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এই শহরের র প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আয়ুর্বেদ ও যোগকেন্দ্র গড়ার স্বপ্ন ছিল। পুরসভার অসহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না।” তার দাবি, সম্প্রতি রাজ্যের আয়ুষ বিভাগের মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় শহরে একটি অনুষ্ঠানে এসে তাঁদের এই উদ্যোগের কথা শুনে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন। মন্ত্রীর পরামর্শে বহু ভেষজ গাছও লাগানো হয়েছে। কালনার পরিবর্তে তাঁরা কলকাতা বা ওড়িশার কোনও জায়গায় কেন্দ্রটি গড়বেন বলে এ দিন জানান সুশীলবাবু।

এ দিন ওই সংস্থার তরফে এমন ঘোষণার পরেই কালনার পুরপ্রধান বিশ্বজিৎবাবু আরও পাঁচ কাউন্সিলরকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, বর্তমান পুরবোর্ড উন্নয়নের বিরোধী নয়। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বোর্ড অল্প টাকায় সংস্থাটিকে জমি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। তার মাসুল দিতে হচ্ছে চলতি বোর্ডকে। সোমবা কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক রয়েছে। সেখানে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ট্রেড লাইসেন্স দিতে এত দেরি কেন, সে প্রশ্নে পুরপ্রধান বলেন, “বিষয়টি প্রথমে কাউন্সিলরদের বৈঠকে পাঠানো হয়। সেখানকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ব্যাপারে একটি কমিটি তৈরি হয়। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আইনি পরামর্শের পথে যাওয়া হয়েছে। সে কারণেই এখনও বিষয়টির নিষ্পত্তি করা যায়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE