ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র।
চলতি মাসেই জেলা সফরে পশ্চিম মেদিনীপুরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১৪ জুলাই মেদিনীপুরের গোদাপিয়াশালে প্রশাসনিক সভামঞ্চ থেকেই ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সিটি স্ক্যান বিভাগের উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। অথচ ওই হাসপাতালের রোগীদের অভিযোগ, প্রায় দেড় বছর ধরে মিলছে না আলট্রা সোনোগ্রাফি (ইউএসজি) পরিষেবা। তাই চিকিৎসার জন্য বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে ইউএসজি করাতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীর পরিবারের সদস্যরা।
আলট্রা সোনোগ্রাফি মেশিন না থাকার ফলে কী সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জননী সুরক্ষা যোজনার আওতায় প্রসূতিদের গর্ভস্থ শিশুর অবস্থান জানার জন্য অন্ততপক্ষে দু’বার ইউএসজি করানো জরুরি। এ ছাড়া পেটের যন্ত্রণার উপসর্গ থাকলে সংশ্লিষ্ট রোগীর ইউএসজি করা হয়। সরকারি হাসপাতালে বিনা খরচে ইউএসজি করানো যায়। কিন্তু ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে সেই ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের যেতে হয় বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্রে। প্রসূতিদের গর্ভস্থ শিশুর অবস্থান জানার জন্য বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্রে ইউএসজি করালে পাঁচশো-ছ’শো টাকা খরচ হয়। আর পুরো পেটের ইউএসজি করালে খরচ পড়ে আটশো থেকে এক হাজার টাকা।
রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, গত দেড় বছর ধরে ইউএসজি পরিষেবা মিলছে না। কেন নতুন মেশিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নেরও মিলছে না কোনও সদুত্তর। হাসপাতালের একটি সূত্রের বক্তব্য, ইচ্ছাকৃত ভাবে নতুন ইউএসজি মেশিন কেনার ব্যাপারে গরজ দেখানো হচ্ছে না। কারণ, হাসপাতালেরই এক রেডিওলজিস্টের বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্রে ইউএসজি করানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া অরণ্যশহরের আরও একাধিক বেসরকরি নির্ণয় কেন্দ্রে ইউএসজি করা হয়। যার ফলে, রোগীরা ওই সব বেসরকারি কেন্দ্রে মোটা টাকা দিয়ে ইউএসজি করাতে বাধ্য হন। অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ, নির্দিষ্ট নির্ণয় কেন্দ্রে ইউএসজি করানোর জন্য রোগীর পরিজনদের প্রভাবিত করেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালটিকে জেলা হাসপাতালে ‘উন্নীত’ করা হয়। ঝাড়গ্রামকে পৃথক স্বাস্থ্য জেলা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আড়াই বছর পরেও সর্বত্রই বেহাল পরিকাঠামোর ছবি। রোগীদের অভিযোগ, ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে শুধু ইউএসজি পরিষেবাই ব্যাহত নয়। এই হাসপাতালে নেই-এর তালিকা দীর্ঘ। এই পরিস্থিতিতে যে উদ্দেশ্য নিয়ে ঝাড়গ্রামের সরকারি মহকুমা হাসপাতালটিকে জেলা স্তরের হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছিল তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে বিধানসভার গত অধিবেশনে সোচ্চার হয়েছিলেন বিনপুরের সিপিএম বিধায়ক দিবাকর হাঁসদা। তাঁর বক্তব্য, “ঝাড়গ্রাম মহকুমার সিংহভাগ বাসিন্দা দরিদ্র আদিবাসী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের। তাঁদের পক্ষে গড়ে ছ’শো থেকে হাজার টাকা খরচ করে ইউএসজি করানো সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, জেলা হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার আড়াই বছর পরেও ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন কিছুই তো হয়নি।”
ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৮টি ব্লকের পাশাপাশি, পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্য ও বাঁকুড়া জেলা থেকেও রোগীরা আসেন। হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “পুরনো মেশিনটি অচল হয়ে যাওয়ায় প্রায় দেড় বছর ধরে হাসপাতালে ইউএসজি করা যাচ্ছে না। মাস পাঁচেক আগে আমি সুপার পদে যোগ দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি আমি নিজে স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করে নতুন ইউএসজি মেশিন বরাদ্দ করার জন্য অনুরোধ করেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy