Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বি সি রায় শিশু হাসপাতাল

ডাক্তার নেই, চারটে বাজলে বন্ধ অস্ত্রোপচার

বিকেল চারটের পরে গুরুতর অসুস্থ কোনও শিশুকে ফুলবাগানের বি সি রায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার অস্ত্রোপচার হবে না। তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ২৪ ঘণ্টা। কারণ, প্রায় ন’মাস ধরে সেখানে চিকিৎসকের অভাবে পেডিয়াট্রিক সার্জারির ২৪ ঘণ্টার ইমার্জেন্সি পরিষেবা বন্ধ। তাই বিকেল চারটের পরে সেখানে কোনও ইমার্জেন্সি সার্জারি হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৩
Share: Save:

বিকেল চারটের পরে গুরুতর অসুস্থ কোনও শিশুকে ফুলবাগানের বি সি রায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার অস্ত্রোপচার হবে না। তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ২৪ ঘণ্টা। কারণ, প্রায় ন’মাস ধরে সেখানে চিকিৎসকের অভাবে পেডিয়াট্রিক সার্জারির ২৪ ঘণ্টার ইমার্জেন্সি পরিষেবা বন্ধ। তাই বিকেল চারটের পরে সেখানে কোনও ইমার্জেন্সি সার্জারি হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

অথচ রাজ্যে শিশুদের একমাত্র রেফারাল হাসপাতাল এটি। যে কোনও জটিল ইমার্জেন্সি কেসে দ্রুত অস্ত্রোপচারের জন্য গোটা রাজ্য থেকে এখানেই রোগীকে রেফার করা হয়।

বি সি রায় হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই জানান, জরুরি অস্ত্রোপচার দরকার এমন শিশু বিকেলের পরে এলে তাকে হয় অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়, অথবা পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করে বিনা অস্ত্রোপচারে ফেলে রাখা হয়। পরের দিন সকাল ৯টার পরে সেই শিশুকে পেডিয়াট্রিক সার্জারিতে রেফার করার কথা। চিকিৎসকদের একাংশের আক্ষেপ, বহু ক্ষেত্রেই ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি সার্জারি কেস পেডিয়াট্রিক মেডিসিন থেকে পেডিয়াট্রিক সার্জারিতে রেফার করতেই ৪-৫ দিন পেরিয়ে যায়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ডিসেম্বরে এই ভাবেই ২ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য ভবনে সে সংক্রান্ত রিপোর্টও জমা পড়েছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, খাদ্যনালীতে পচন ধরে বাঁকুড়ার এক প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বি সি রায়ের ইমার্জেন্সিতে মৃতপ্রায় শিশুটিকে নিয়ে এসেছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু পৌঁছতে বিকেল পাঁচটা বেজে যায়। ফলে সে দিন ওই শিশুর অস্ত্রোপচার না করে মেডিসিনে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ, ধুঁকতে থাকা শিশুটিকে সার্জারিতে না পাঠিয়ে টানা পাঁচ দিন পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগে ফেলে রাখা হয়। পাঁচ দিন পরে তার অস্ত্রোপচার হয় এবং পরের দিন শিশুটির মৃত্যু হয়।

হাসপাতালের খাতায় গত এক মাসের তালিকা থেকে জানা যাচ্ছে, শুভম বিশ্বাস, নবাব হোসেন, শ্রীপর্ণা মুন্সি, মেহদি হাসান মণ্ডল, আলি হাসান বিশ্বাস, বিজলি মণ্ডল, সোনালি শিকদার, প্রিয়ঙ্কা দাস, তপশ্রী শিকদার, সায়ক বারিক— এমন বহু শিশুর জরুরি অস্ত্রোপচার দরকার ছিল। এদের ক্ষেত্রে যে সব সমস্যা ছিল তা হল— অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যাওয়া, আঘাত লেগে লিভার ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়া, মূত্র বন্ধ, ডায়ারিয়ায় খাদ্যনালী জড়িয়ে যাওয়া, জন্মের পর মলত্যাগের রাস্তা শরীরে তৈরি না হওয়ায় মল জমে সেপটিক হয়ে প্রাণসংশয় হওয়া। কিন্তু বিকেল ৪টের পর বি সি রায় হাসপাতালে নিয়ে আসায় তাদের জরুরি অস্ত্রোপচার হয়নি। ২ থেকে ৫ দিন পেরিয়ে অস্ত্রোপচার হয়। দেরি সত্ত্বেও এরা অবশ্য ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে।

বি সি রায়ের অধ্যক্ষা মালা ভট্টাচার্য অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সুপার দিলীপ রায় বলেন, “জরুরি অস্ত্রোপচার হচ্ছে।

শুধু বিকেলের পরে একটু অসুবিধা রয়েছে।”

হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, বছরখানেক আগে পেডিয়াট্রিক সার্জারিতে চিকিৎসক কমতে কমতে এক জনে এসে ঠেকে। তখন সব সার্জারি বন্ধ হয়ে যায়। তড়িঘড়ি কয়েক জন চিকিৎসককে অন্য হাসপাতাল থেকে বি সি রায় হাসপাতালে বদলি করা হয়। কিন্তু তাতেও অভাব পুরো মেটেনি।

পেডিয়াট্রিক সার্জনদের অভিযোগ, লোকের অভাবে বেশির ভাগ দিন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের সহযোগী হিসাবে নিয়ে অস্ত্রোপচার করতে হয়। জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় ওটি-র লাইট খারাপ, মনিটর কাজ করে না, পাল্স অক্সিমিটার নেই। অস্ত্রোপচারের পরে রোগীদের কিছু দিন নজরদারিতে রাখার মতো অবজার্ভেশন ওয়ার্ড নেই, ব্লাডব্যাঙ্ক নেই। তাঁদের কথায়, স্বাস্থ্য ভবনে বার বার জানিয়েও ফল হয়নি।

শিশু স্বাস্থ্যে নজরদারির জন্য গঠিত স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “এরকম অসুবিধা বহু জায়গায় রয়েছে। ডাক্তার নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ডাক্তার নিয়োগ হলেই সমস্যা মিটে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

parijat bandyopadhyay doctors bc roy child hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE