তিন দিন আগে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল বছর এগারোর বালিকা। হেমারেজিক ডেঙ্গি, প্লেটলেট হুহু করে কমছে। সব সরকারি হাসপাতাল ঘুরেও এক ইউনিট প্লেটলেট জোগাড় করতে পারেননি বাড়ির লোক। সর্বত্র ভাঁড়ার শূন্য। শেষমেশ এক বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে ১৮০০ টাকায় তিন ইউনিট প্লেটলেট কিনে প্রাণ বাঁচানো হয় মেয়েটির।
মধ্য কলকাতার এক নার্সিংহোমে এক দিন আগে ডেঙ্গি নিয়ে ভর্তি হন এক যুবক। শহরের প্রায় সব ক’টি সরকারি হাসপাতাল এমনকী, মানিকতলার কেন্দ্রীয় ব্লাডব্যাঙ্কে গিয়ে বিফল হয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁর পরিজনেরাও বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে অনেক বেশি টাকায় কয়েক ইউনিট প্লেটলেট কিনেছেন।
ডেঙ্গির মরসুমে পরপর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন আক্রান্তেরা। সরকারি হিসেবে এখনও পর্যন্ত শুধু কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭০০-র বেশি। মারা গিয়েছেন দু’জন। যদিও বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। আক্রান্তদের বাঁচাতে যখন প্লেটলেট দরকার পড়ছে, ঠিক তখন শহর জুড়ে ছবিটা এমনই। পূর্বাঞ্চলের ‘মডেল ব্লাডব্যাঙ্ক’ হিসেবে চিহ্নিত মানিকতলা ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে মেডিক্যালের ব্লাডব্যাঙ্ক কোথাও প্লেটলেট নেই। কোথাও আবার প্লেটলেট আসামাত্র শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদিও এই পরিস্থিতির কথা মানতে নারাজ স্বাস্থ্য ভবন।
রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত দীপঙ্কর মিত্র-অপূর্ব ঘোষদের অভিযোগ, যাঁদের সামর্থ্য আছে তাঁরা বেসরকারি জায়গা থেকে দ্বিগুণ, চার গুণ টাকায় প্লেটলেট কিনছেন। দরিদ্রদের তা সম্ভব নয়। সরকারি হাসপাতালে রক্তের কার্ড দেখালে বিনামূল্যে প্লেটলেট পাওয়ার কথা। কার্ড না-থাকলেও ফ্রি-বেডের রোগীদের মাত্র ৫০ টাকায় এবং পেয়িং বেডে মাত্র ১০০ টাকায় প্লেটলেট পাওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না।
ন্যাশনাল মেডিক্যাল ছাড়া কলকাতার অন্য সবক’টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং কেন্দ্রীয় ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের পৃথকীকরণ ইউনিট রয়েছে। সেখানে নিয়মিত প্লেটলেট তৈরি হওয়ার কথা। তা হলে এই অবস্থা কেন?
কেন্দ্রীয় ব্লাডব্যাঙ্কের অধিকর্তা স্বপন পাল জানান, পুজোর মরসুমে এমনিতেই রক্তদান শিবির কমে যায়। তার উপরে রক্ত সংগ্রহের ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে তার থেকে প্লেটলেট তৈরি করতে হয়। কিন্তু সম্প্রতি তাঁরা যে ক’টি শিবির পেয়েছেন, সবক’টি থেকে রক্ত ব্লাডব্যাঙ্কে আনতেই ৬ ঘণ্টার বেশি লেগে যাচ্ছে। ফলে প্লেটলেট বানানো যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্লাডব্যাঙ্ক শেষ রক্তদান শিবির পেয়েছে গত রবিবার, ১২ অক্টোবর। সে দিন ১৪০ ইউনিট প্লেটলেট তৈরি হলেও চাহিদা এতই ছিল যে, সোমবারের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তার পরে আর শিবির হয়নি। ফলে ব্লাডব্যাঙ্কে প্লেটলেট নেই।
এসএসকেএমে শেষ শিবির হয়েছে গত রবিবার। ৩৬টি প্লেটলেট তৈরির দিনেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত হাসপাতালে প্লেটলেট নেই। শনিবার একটি শিবির রয়েছে বসিরহাটে। কিন্তু সেখান থেকে রক্ত আনতে ৬ ঘণ্টার বেশি লাগবে বলে আশঙ্কা। ফলে প্লেটলেট তৈরি করা যাবে না। অগত্যা রবিবারের শিবিরের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
আরজিকর-ও গত এক সপ্তাহ ধরে শিবির পাচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে গত বৃহস্পতিবার চিকিৎসক-নার্সদের নিয়ে শিবির হয়। সেই রক্ত থেকে তৈরি ২৪ ইউনিট প্লেটলেট সে দিনই নিঃশেষিত। ফলে এখন তাদের ভাঁড়ারও শূন্য।
এই মুহূর্তে সাকুল্যে ৯ ইউনিট প্লেটলেট আছে এনআরএসে। যে কোনও মুহূর্তে তা শেষ হবে। সেখানকার ব্লাডব্যাঙ্কের প্রধান দিলীপ পণ্ডাও জানান, শিবির না হলে রক্ত সংগ্রহ বা পৃথকীকরণ কিছুই সম্ভব নয়। যদিও ওই ব্লাডব্যাঙ্কের চিকিৎসকদের একাংশ জানান, তাঁদের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ না হওয়ায় ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ আপত্তি তুলেছিল। সেই ঝামেলা মেটাতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ গত এক সপ্তাহ রক্তদান শিবির পেয়েও যাননি। দিলীপবাবু তা মানতে চাননি।
রাজ্যে ব্লাডব্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য ভবনের অফিসার অরবিন্দ বালা অবশ্য বলেন, “প্লেটলেটের আকাল চলছে, এমন কোনও খবর জানি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy