তিনটিই সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু এক ব্যক্তি কতটা প্রতিবন্ধী অর্থাৎ তাঁর শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মাত্রা ঠিক কতটা, তিন হাসপাতালে তার মেডিক্যাল পরীক্ষার ফলাফল তিন রকম!
ওই তিন সরকারি হাসপাতাল হল আর জি কর, এসএসকেএম এবং বনগা।ঁ তিন হাসপাতালে তাঁর প্রতিবন্ধকতা পরীক্ষার তিন রকম ফলাফল নিয়ে বিপদে পড়ে গিয়েছেন স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অমর ঢালি। প্রতিবন্ধী প্রার্থী হিসেবে স্কুলে তাঁর নিয়োগ আটকে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি দ্বারস্থ হয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের। এক জন দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীকে পরীক্ষা করে দু’টি সরকারি হাসপাতাল দু’রকম রিপোর্ট দেওয়ায় বিচারপতি বিস্ময় প্রকাশ করেন। প্রশ্ন তোলেন, কোন রিপোর্টের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে? তিনি তৃতীয় সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে বলেন দেন এবং তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই প্রার্থীকে চাকরিতে নিয়োগের নির্দেশ দেন এসএসসি-কে।
অমরবাবুর আইনজীবী মনিরুজ্জমান বলেন, ১৯৯২ সালের ১০ জুন বনগাঁ হাসপাতাল পরীক্ষা করে জানায়, তাঁর মক্কেল ৬০ শতাংশ দৃষ্টিহীন। প্রতিবন্ধী প্রার্থী হিসেবে তিনি ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেন। পাশও করেন। এসএসসি তাঁকে উত্তর ২৪ পরগনার গোপালপুর বিদ্যালয়ে ভূগোলের শিক্ষক-পদে নিয়োগের সুপারিশ করে। তিনি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে, ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর এসএসসি জানায়, ফের মেডিক্যাল তাঁর পরীক্ষা করাতে হবে। এ বার সেই পরীক্ষা হয় আর জি করে। পরীক্ষার পরে আর জি কর জানায়, অমরবাবু ৩০ শতাংশ প্রতিবন্ধী।
নিয়ম অনুযায়ী ৪০ শতাংশের কম হলে প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরি পাওয়া যায় না। আর জি করের রিপোর্টের ভিত্তিতে অমরবাবুর চাকরির সুপারিশ খারিজ করে দেয় এসএসসি। তার পরেই অমরবাবু মামলা করেন।
অমরবাবুর আবেদন পড়ে বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত বলেন, প্রতিবন্ধকতা পরীক্ষা করে দু’টি সরকারি হাসপাতাল দু’রকম রিপোর্ট দিচ্ছে। কোনটিকে ঠিক রিপোর্ট বলে ধরা হবে? বিচারপতি তৃতীয় বার অমরবাবুর প্রতিবন্ধকতা পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন এবং সেই পরীক্ষা করতে বলেন এসএসকেএম হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে। এসএসকেএম পরীক্ষা করে জানিয়ে দেয়, অমরবাবুর ৪০ শতাংশের বেশি প্রতিবন্ধী। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরে বিচারপতি এসএসসি-কে নির্দেশ দেন, অমরবাবু যাতে অবিলম্বে কাজে যোগ দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
হাইকোর্টের নির্দেশে অমরবাবু ৫ এপ্রিল গোপালপুর বিদ্যালয়ে ভূগোলের শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়েও মানুষকে এ ভাবে হয়রান হতে হবে কেন? তিনটি সরকারি হাসপাতালে প্রতিবন্ধকতার পরীক্ষায় ফলাফল তিন রকম হয় কী ভাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছেও পরিষ্কার নয়। কেউ কেউ বলছেন, পরিকাঠামোর অভাবে পরীক্ষার ফল ঠিকঠাক না-ও হতে পারে। দৃষ্টি-প্রতিবন্ধকতার পরীক্ষা যেখানে করানো হবে, সেখানে চোখের চিকিৎসার যথেষ্ট পরিকাঠামো থাকতে হবে। কারণ, এই পরীক্ষার সঙ্গে অনেক দিক জড়িত। সমস্ত দিক যথাযথ ভাবে যাচাই করতে না-পারলে পরীক্ষার ফল অন্য রকম হতে পারে। চোখের চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ-সব তো আছেই। সেই সঙ্গে অন্য একটি দিকও পরিষ্কার হওয়া জরুরি। তা হল নতুন সরকারি নির্দেশিকা। একেই তো সেটা এখনও সকলের কাছে পৌঁছয়নি। সকলের তা হাতে পাওয়া দরকার। দ্বিতীয়ত ওই নির্দেশিকা খুব অস্পষ্ট। সেটা স্পষ্ট হওয়াটাও খুব জরুরি।” তিনি জানান, ওই নির্দেশিকা ব্যবহার করে পরীক্ষা করার জন্য চাই উপযুক্ত প্রশিক্ষণও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy