নতুন তৈরি হওয়া মেডিক্যাল কলেজগুলির জন্য ঠিকঠাক পরিকাঠামো ও চিকিৎসকের ব্যবস্থা হচ্ছে না বলে ইতিমধ্যেই ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’র (এমসিআই) কাছে ভর্ৎসিত হয়েছে রাজ্য। একের পর এক কলেজে স্নাতক স্তরে প্রথম বর্ষে ছাত্র ভর্তির অনুমোদন বাতিলের সুপারিশ করেছে এমসিআই। এই রকম একটা জটিল অবস্থায় ফের নতুন করে হাওড়ায় ১০০ আসনের একটি ‘যোগ ও নেচারোপ্যাথি’ মেডিক্যাল কলেজ চালুর ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে রাজ্য। ফলে সমালোচনার ঢেউ উঠেছে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই।
বেলুড় স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে এই নতুন মেডিক্যাল কলেজ হবে বলে জানিয়ে সপ্তাহ দু’য়েক আগেই দিল্লির স্বাস্থ্য মন্ত্রকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। চিঠিতে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতায় তারা কলেজটি গড়তে চায়। তবে নির্মাণ সংস্থা নিয়োগ থেকে শুরু করে চিকিৎসক ও অন্য কর্মীদের নিয়োগ এবং পরিকাঠামোর সব দায়িত্ব রাজ্যই নেবে। মৌখিক ভাবে কেন্দ্র এই প্রস্তাবে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে এবং এ-ও জানিয়েছে, তারা ওই কলেজের জন্য সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত দিতে পারে। বাকি ব্যবস্থা রাজ্যকেই করতে হবে।
এখানেই প্রশ্ন উঠেছে— সাড়ে তিন বছরের এই স্নাতক পাঠ্যক্রমে শিক্ষক চিকিৎসক কোথা থেকে পাওয়া যাবে? কারণ, রাজ্যে এর আগে কোনও যোগ ও নেচারোপ্যাথি কলেজ ছিল না। ফলে ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসকও নেই।
স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্মসচিব (আয়ুষ) মিসবাউল হক বলেন, “এটা আমাদেরও মনে হয়েছিল। তখন যোগ ও নেচারোপ্যাথি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট তুষার শীল আমাদের জানিয়েছেন, কর্নাটক, তামিলনাড়ুর মতো কিছু রাজ্যে এই কলেজ আছে। সেখান থেকে শিক্ষক চিকিৎসক নিয়ে আসা হবে।”
কিন্তু তাঁরা যদি এ রাজ্যে আসতে না চান, তখন? তাঁদের বাছাই করার প্রক্রিয়াই বা কী হবে?
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাস এর জবাবে বলেন, “সে সব ভেবে পিছিয়ে আসাটা বোকামি।
তা ছাড়া, আমাদের রাজ্যে অস্বীকৃত কিন্তু প্রাচীন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে যোগ ও নেচারোপ্যাথির শিক্ষা দেওয়া হয়। সেখান থেকে পাশ করা অনেক অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তাঁদের একটা বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে বাছাই করে ওই কলেজে পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া যায় কি না সে ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা চলছে।”
স্বাস্থ্য দফতরেরই একাংশের বক্তব্য, শিক্ষক কারা হবেন ঠিক না-করে এই রকম একটা মেডিক্যাল কলেজের প্রস্তাব দেওয়া হল কেন? যোগ ও নেচারোপ্যাথি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট তুষার শীল এর উত্তরে বলেন, “একটা সময় তো শূন্য থেকে শুরু করতে হবেই। যোগ ও নেচারোপ্যাথির দু’একজন শিক্ষক হলেই আমাদের চলে যাবে। বাকি অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, প্যাথোলজি প্রভৃতি বিষয়গুলি অ্যালোপ্যাথি বা হোমিওপ্যাথির শিক্ষক-চিকিৎসকেরাই পড়িয়ে দিতে পারবেন।”
স্বাস্থ্যকর্তারা যেন তেন প্রকারেণ সমস্যার সমাধান বার করতে চাইলেও প্রশ্ন ওঠা অবশ্য থামছে না। স্বাস্থ্য দফতরের একাংশই বলেছেন, যদি এই কলেজ চালুও হয় তা হলে ডিগ্রি পাওয়ার পর অত ছাত্রছাত্রী কোথায় চাকরি পাবেন? এমনিতে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরাই চাকরির আকাল নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অভিযোগ করছেন।
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাসের কথায়, “স্বাস্থ্য মন্ত্রক নতুন একটি নির্দেশিকা বার করেছে। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি হাসপাতালে অন্তত এক জন যোগ বা নেচারোপ্যাথির চিকিৎসক থাকতেই হবে। ফলে কিছু নিয়োগ হতে পারে। স্কুলশিক্ষা দফতরের সঙ্গেও আমাদের কথা চলছে। সেখানেও যোগ-নেচারোপ্যাথি শিক্ষক হিসাবে এই পাশ করা চিকিৎসকেরা চাকরি পেতে পারেন। বেসরকারি বহু ক্ষেত্রেও এখন যোগ-বিশেষজ্ঞদের অনেক কদর।”
কিন্তু আদৌ এই কলেজের পরিকাঠামো কতটা ঠিকঠাক হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য দফতরের একটা বড় অংশ। কারণ, রাজ্যের তিনটি চালু আয়ুর্বেদ কলেজের পরিকাঠামোই এখনও তথৈবচ।
সেখানে অর্থ বরাদ্দ হয় না, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেই, চিকিৎসা-সহায়ক নেই, ওষুধ সরবরাহ এবং ওষুধ তৈরি প্রায় বন্ধ, তুলো-গজ থেকে শুরু করে ওষুধ সবই প্রায় বাইরে থেকে কিনতে হয়। এই অবস্থায় আবার একটা কলেজ তৈরি করলে তার পরিণতি কী হবে তা নিয়ে সংশয় কাটছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy