Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পদে ফিরলেন প্রাক্তন প্রধান, আইনি নোটিস শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তাকে

রাজ্যে শিক্ষক-চিকিৎসকের আকাল মেটাতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-চিকিৎসকদের পুনর্নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যকর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, এতে যাঁরা চাকরিতে রয়েছেন তাঁদের পদোন্নতি কোনও ভাবে ধাক্কা খাবে না। কিন্তু ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এক অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধানকে পুনর্নিয়োগের পর ফের প্রধানের পদেই বহাল করায় গোলমাল শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

রাজ্যে শিক্ষক-চিকিৎসকের আকাল মেটাতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-চিকিৎসকদের পুনর্নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যকর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, এতে যাঁরা চাকরিতে রয়েছেন তাঁদের পদোন্নতি কোনও ভাবে ধাক্কা খাবে না। কিন্তু ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এক অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধানকে পুনর্নিয়োগের পর ফের প্রধানের পদেই বহাল করায় গোলমাল শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই।

ন্যাশনালের চক্ষুবিভাগের ওই শিক্ষক-চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্তের অবসরের পরে বিভাগেরই এক মহিলা চিকিৎসক কেতকী বাগচি অভিজ্ঞতা ও বয়সের নিরিখে বিভাগীয় প্রধানের পদ পেয়েছিলেন। কিন্তু জ্যোতির্ময়বাবু পুুনর্নিযুক্ত হওয়া মাত্র ওই মহিলা বিভাগীয় প্রধানকে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার এক লিখিত নির্দেশের ভিত্তিতে রাতারাতি পদচ্যূত করা হয়েছে। জ্যোতির্ময়বাবুকেই ফের চক্ষু বিভাগের প্রধান করা হয়েছে। কেতকীদেবী গত শুক্রবার এর বিরুদ্ধে আইনি নোটিস ধরিয়েছেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

ওই নোটিসে জানতে চাওয়া হয়েছে, কোনও অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান চাকরিতে ফিরলে তাঁকে সঙ্গে-সঙ্গে বিভাগীয় প্রধান করা হবে, এটা কোন আইনে রয়েছে? এর জন্য যিনি ইতিমধ্যে ওই পদে উন্নীত হয়েছেন তাঁকে কি বিনা কারণে সেই পদ থেকে নামিয়ে দেওয়া যায়? তা হলে তো চাকুরিরত চিকিৎসকদের পদোন্নতি আটকে যাবে। অবসরপ্রাপ্তরা ফের কাজে যোগ দিয়ে বছরের পর বছর প্রধানের পদ ভোগ করবেন। সেটা কি আইনসঙ্গত? বামপন্থী চিকিৎসক সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’ এর সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ চক্রবর্তীর কথায়, “অবসরপ্রাপ্তদের পুনর্নিয়োগের সিদ্ধান্তে যাঁরা চাকরিতে রয়েছেন তাঁদের পদোন্নতি আটকে গেলে তাঁরা কাজ করবেন কেন? তাঁরা বরং চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে। এতে ভুগবেন রোগীরা।”

সুশান্তবাবুকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর উত্তর, “আমাদের তরফে কোনও ভুল হয়েছে বলে মনে করি না। জ্যোতির্ময়বাবু সবে মাত্র অবসর নিয়েছিলেন। দেড় মাসের মধ্যে তাঁর পুনর্নিয়োগের পরে সিনিয়রিটির ভিত্তিতেই আবার বিভাগীয় প্রধানের পদ দেওয়া হয়েছে। আইনগত ভাবে কোনও বাধা যদি প্রমাণিত হয় তখন আবার ভাবা যাবে।” কিন্তু স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা যে নিজেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অবসরপ্রাপ্তদের পুনর্নিয়োগে চাকুরিরতদের পদোন্নতি ধাক্কা খাবে না? সুশান্তবাবুর উত্তর, “অযথা বিষয়টাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে। কারও উন্নতি আটকাবে না। সব ক্ষেত্রে যে পুনর্নিযুক্তদের বিভাগীয় প্রধান করা হবে তা-ও নয়।” কেতকীদেবীকে তা হলে কেন বিনা দোষে পদ থেকে সরানো হল? স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা বলেন, “যা ভাল মনে হয়েছে আমরা তাই করেছি।”

যাঁর পুনর্নিয়োগ নিয়ে এত সমস্যা সেই জ্যোর্তিময় দত্ত অবসর নেন ৩০ এপ্রিল। এর পর চাকরিতে পুনর্নিযুক্ত হন ১৩ জুন। তাঁকে যোগ দিতে বলা হয় সেই ন্যাশনালেই। তত দিনে কেতকীদেবী বিভাগীয় প্রধান হয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, যোগ দিয়েই জ্যোতির্ময়বাবু ফের বিভাগীয় প্রধান হওয়ার জন্য তদ্বির শুরু করেন। ১৪ জুন তাঁকে বিভাগীয় প্রধান করার চিঠি দেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা। জ্যোতির্ময়বাবু অবশ্য বলছেন, “আমি প্রধান হতে চাইনি। কিন্তু অধ্যক্ষ আর স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা আমাকে অনুরোধ করতে না করিনি। এখন মনে হচ্ছে বরং ইস্তফা দিয়ে দিই।” কেতকীদেবীর কথায়, “আমার সঙ্গে যা হল তা কহতব্য নয়। আমি আইনি নোটিস দিয়েছি। আশা করছি সুবিচার পাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE