নেই-এর তালিকা। নিজস্ব চিত্র।
দৈনিক চাহিদা কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ বোতল রক্তের। মজুত আছে এবি নেগেটিভ গ্রুপের একটি মাত্র বোতল! রবিবার থেকে গত তিন দিন ধরে ওই একটি বোতলই পুঁজি কাঁথি মহকুমা ব্লাড ব্যাঙ্কের।
মঙ্গলবার মোটরবাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত কাঁথি ৩ ব্লকের বহিত্রকুন্ডার সুজিত পন্ডার জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্যে দ্রুত তিন বোতল রক্তের ব্যবস্থা করতে বলেন চিকিৎসকেরা। শোনার সঙ্গে সঙ্গেই পরিমরি করে ব্লাড ব্যাঙ্কে ছুটেছিলেন পরিজনেরা। কিন্তু, যাওয়াই সার। পড়ে রয়েছে এক বোতল রক্ত! তা-ও আলাদা গ্রুপের। একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন ইসাই গ্রামের গৃহবধূ মমতা বেরার আত্মীয়েরাও। আসন্ন প্রসবা মমতাদেবীর জন্যে বাইরে থেকে রক্ত জোগার করেন তাঁরাও।
ব্লাড ব্যাঙ্কের টেকনিশিয়ান শেখ মফিজুদ্দিন জানালেন, “ওই একটি মাত্র বোতলই রয়েছে। বাধ্য হয়ে আমরা রোগীর পরিজনদের ফেরাচ্ছি।” এমন রক্তশূন্যতার কথা মানছেন মহকুমা হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তীও। কেন এমন অবস্থা? তাঁর সাফাই, “লোকসভা নির্বাচন, অত্যধিক গরমের জন্যে রক্তদান শিবির বা ক্যাম্প কম হয়েছে। ফলে ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের জোগান কমেছে।” সব্যসাচীবাবুর কথায়, “আগামী দিনে এই সমস্যা আর থাকবে না। নতুন করে একাধিক জায়গায় রক্তদান শিবির বা ক্যাম্প করার চেষ্টা চলছে।”
এই অবস্থায় রোগীর নিকট আত্মীয়েরাই রক্ত দিয়ে পরিস্থিতির সামাল দিচ্ছেন। মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে পরিজনেরা রক্ত দিচ্ছেন হাসপাতালে গেলেই এমন দৃশ্য চোখে পড়বে। কিন্তু, সে তো রক্তের গ্রুপ মিলে গেলে। না মিললে! পরিজনদের সঙ্গে রোগীর রক্তের গ্রুপ না মিললে ফের ভোগান্তি। সেক্ষেত্রে ভরসা তমলুক জেলা হাসপাতাল অথবা কলকাতা।
ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তসঙ্কট চলায় প্রবল সমস্যার রয়েছেন থ্যালাসেমিয়া রোগীরাও। হাসপাতাল সূত্রে খবর, কাঁথি ও এগরা দুই মহকুমা হাসপাতাল-সহ ১৩টি ব্লকের ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি এবং দুই মহকুমার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলি রক্তের ব্যাপারে কাঁথি মহকুমা ব্লাড ব্যাঙ্কের উপরেই নির্ভরশীল। সঙ্কটে রয়েছে এই কেন্দ্রগুলিও।
এই সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এক শ্রেণির দালালরা। অভিযোগ, দালালদের মদতে সুযোগ বুঝে চড়া দামে রক্ত বিক্রি চলছেই।
এর পাশাপাশি কর্মী-সংকটেও ভুগছে কাঁথি মহকুমা ব্লাড ব্যাঙ্ক। দীর্ঘ দিন ধরে ব্লাডব্যাঙ্কে কোনও স্থায়ী চিকিৎসক নেই। নেই পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান-সহ অন্য কর্মী। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বর্তমানে অস্থায়ী চুক্তিতে দু’জন চিকিৎসক আর পাঁচজন টেকনিশিয়ান দিয়েই ব্লাড ব্যাঙ্কের কাজ চালানো হচ্ছে। আবার এই পাঁচজন টেকনিশিয়ানের মধ্যে চারজনই রয়েছেন অস্থায়ী চুক্তিতে। একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, দু’জন চিকিৎসক আর পাঁচজন টেকনিশিয়ান দিয়ে এক দিকে ব্লাড ব্যাঙ্ক সামলানো, আর অন্য দিকে দুই মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ব্লাড ব্যাঙ্ক যেহেতু ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে, তাই এই মুহূর্তে অন্তত চারজন চিকিৎসক ও আট থেকে ন’জন টেকনিশিয়ান প্রয়োজন। মহকুমা হাসপাতালের পক্ষ থেকে বারবার এ ব্যাপারে উচ্চমহলে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ।
কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারীও সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “সমস্যা তো রয়েছেই। তার মধ্যেও যতটা সম্ভব পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।” তাঁর কথায়, “ব্লাডব্যাঙ্কের জন্যে একজন স্থায়ী চিকিৎসক অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্য দফতরেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।” একই বক্তব্য সুপারেরও।
বিধায়ক এবং সুপার যাই বলুন না কেন, ভুক্তভোগীদের কথায়, মুমূর্ষ রোগীদের মতোই কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাঙ্কেরও আশু চিকিৎসা প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy