Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল ছাদ চুঁইয়ে নোংরা জল, বন্ধ ওটি

ছাদ চুঁইয়ে উপর তলার বাথরুমের জল পড়ছে অপারেশন টেবিলের কাছেই। সংক্রমণের আশঙ্কায় শেষে অস্ত্রোপচারই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের স্বল্পক্ষত অস্ত্রোপচার বিভাগের (ল্যাপারস্কোপি) ঘটনা।

অপারেশন থিয়েটারের ছাদের হাল এমনই।— নিজস্ব চিত্র

অপারেশন থিয়েটারের ছাদের হাল এমনই।— নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৫৪
Share: Save:

ছাদ চুঁইয়ে উপর তলার বাথরুমের জল পড়ছে অপারেশন টেবিলের কাছেই। সংক্রমণের আশঙ্কায় শেষে অস্ত্রোপচারই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের স্বল্পক্ষত অস্ত্রোপচার বিভাগের (ল্যাপারস্কোপি) ঘটনা। একই ছবি স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারেও। এখানেও ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ায় বিভাগের একাংশে অস্ত্রোপচার বন্ধ প্রায় মাসখানেক ধরে।

পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার দোতলায়। তিন তলায় ঠিক উপরেই রয়েছে বাথরুম। সেখানকার জলই নীচের তলার ছাদ চুঁইয়ে গড়িয়ে পড়ছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, অপারেশন থিয়েটারের স্ত্রীরোগ বিভাগে ৪টি অপারেশন টেবিল রয়েছে। তার মধ্যে ২টি টেবিলে অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে প্রায় মাস খানেক ধরে। কারণ অপারেশন থিয়েটারের ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ছে ওই ওটি টেবিলগুলির পাশেই। পাশাপাশি ওটির দেওয়ালও স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে রয়েছে। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, এই অবস্থার মধ্যে অস্ত্রোপচার করা হলে রোগিণীর সংক্রমণের ভয় থাকে। সে কারণেই ওই ওটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

ফলে এখন শুধুমাত্র দু’টি অপারেশন টেবিলে অস্ত্রোপচারের কাজ চলছে। যে কারণে কাজের গতি কমে গিয়েছে অর্ধেকে। এমনিতেই পুরুলিয়া সদর হাসপাতালই লাগোয়া ঝাড়খণ্ড-সহ কার্যত পুরো জেলার ভরসা। সেখানে চারটি অপারেশন টেবিলের বদলে দু’টি টেবিলে অস্ত্রোপচার হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রোগিণীদের। ফলে অস্ত্রোপচারের দিন আরও পিছিয়ে যাচ্ছে। এই ওটিতেই গর্ভবতীদের সিজার করে সন্তান প্রসব করানো হয়। স্ত্রীরোগের অস্ত্রোপচারও করা হয় এখানেই। ফলে ওই সব ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারে সমস্যা চলছে। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এখন অস্ত্রোপচার করানোর রোগিণীর চাপ কম থাকায় কোনওরকমে সামলে দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু চাপ বাড়লে কী বলে যে রোগিণীদের সামলানো যাবে জানি না।’’

বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছায় যদি বা স্বল্পক্ষত অপারেশন থিয়েটার চালু হয়েছিল, কিন্তু তা বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। এখানেও সেই ভিজে ছাদ। সংক্রমণের আশঙ্কায় কয়েকদিন আগে থেকেই ওই বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতেই পুরুলিয়ার মতো পিছিয়ে পড়া জেলায় গত বছর জুন মাসে এই বিভাগটি চালু করা হয়। তবে এই বিভাগের সমস্যার সূত্রপাত গোড়া থেকেই। বিভাগটি চালুর আগে যন্ত্রপাতি এসে দীর্ঘদিন পড়েছিল হাসপাতালে। কিন্তু চালু করা যায়নি। কারণ ওই বিভাগে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয় সংযোগই দেওয়া হয়নি। বেশ কিছুদিন পরে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়। তারপর ওই বিভাগ চালু করা যায়। কিন্তু কিছুদিন পরেই ফের ছাদ থেকে জল পড়ায় অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখনকার মতো ছাদ সারানোর পরে ফের বিভাগটি চালু করা হয়। কিন্তু জল পড়া বন্ধ না হওয়ায় অস্ত্রোপচার আপাতত বন্ধ। ছাদের প্লাস্টার খসে গিয়ে রড বেরিয়ে পড়েছে। যে কোন সময়ই চাঙড় ভেঙে পড়তে পারে রোগীর উপরেই। যাঁরা এই বিভাগে কাজ করেন। তাঁদের কথায়, ‘‘অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছিল। যে কোনও সময়েই বিপত্তি ঘটতে পারত।’’

হাসপাতালের সুপার শিবাশিস দাস বলেন,‘‘ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ায় স্বল্পক্ষত বিভাগের অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে স্ত্রীরোগ বিভাগের অস্ত্রোপচার একাংশে চালু রয়েছে। আমরা অন্যত্র অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করছি।’’ সুপার জানান, এই সমস্যার কথা তিনি পূর্ত দফতরকে জানিয়েছেন। পূর্ত দফতরের প্রতিনিধিরা অবস্থা দেখেও গিয়েছেন।

কিন্তু স্ত্রীরোগ বিভাগের ওটি-র একাংশ কেন মাসখানেক ধরে বন্ধ হাসপাতাল সূত্রে তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। পূর্ত দফতরের বক্তব্য, তাঁরা প্রায় ছয় মাস আগে হাসপাতালের নিকাশি ব্যবস্থার হাল দেখে পুরো নিকাশি ব্যবস্থার খোলনলচে পাল্টাতে একটি পরিকল্পনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও সেই পরিকল্পনার টাকা বরাদ্দের ব্যাপারে পূর্ত দফতরকে কিছু জানায়নি। অন্যদিকে সুপারের বক্তব্য, ‘‘আমি সবে এসেছি। ওই পরিকল্পনার ব্যাপারে আমার জানা নেই। আমরাও নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর জন্য একটি পরিকল্পনা স্বাস্থ্য ভবনে পাঠিয়েছি।’’

জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘ঘটনাটি সবে শুনেছি। যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা দায় এড়াতে পারেন না। স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এ ভাবে উদাসীন থাকা যায় না। কী ভাবে দ্রুত সমাধান করা যায় সে জন্য আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE