শিশুকে পাল্স পোলিও টিকা খাওয়ালে মিলতে পারে এক গ্রামের একটি সোনার কয়েন!
রবিবার রাজ্যের বেশ কয়েকটি মহকুমায় শূন্য থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের জন্য পোলিও নির্মূল কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ওই কর্মসূচি সফল করতে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন রামপুরহাটের মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস। বীরভূমে একমাত্র ওই মহকুমাতেই এ বার শিশুদের পোলিও খাওয়ানো হয়েছে। কোনও সরকারি প্রকল্পের খাত থেকে নয়, এই উদ্যোগের সমস্ত খরচটাই বহন করছেন মহকুমার বিভিন্ন সরকারি কর্মী ও আধিকারিকেরা। এসডিও বলছেন, “জেলায় এই মহকুমা এখনও ১০০ শতাংশ পোলিও মুক্ত বলে ঘোষিত হয়নি। অতীতে ওই কর্মসূচি পালনে কিছু ক্ষেত্রে বাধাও এসেছে। সব কিছু মাথায় রেখে মানুষকে এ নিয়ে আরও সচেতন করে তুলতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, আগের থেকে ভাল সাড়া মিলবে।”
এ দিন মহকুমার ৬৫টি পঞ্চায়েত ও দু’টি পুরসভায় পোলিও টিকা খাওয়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে, সোনার কয়েন কেবল পঞ্চায়েত স্তরেই দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে প্রথমে প্রত্যেকটি পঞ্চায়েতের বুথগুলির মধ্যে থেকে লটারির মাধ্যমে একটি বুথকে নির্বাচিত করা হবে। ওই বুথ থেকে পোলিও কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া শিশুদের মধ্যে থেকেই ফের লটারি করে একটি নাম বেছে নেওয়া হবে। এ ভাবে পঞ্চায়েতগুলি থেকে ভাগ্যবান ৬৫টি শিশুর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে ওই এক গ্রামের সোনার কয়েন। আগামী সাত দিন ধরে পোলিও কর্মসূচি চলার পরে পরের সপ্তাহেই বিডিও ও অন্যদের উপস্থিতিতে মূল পর্বের লটারি করা হবে। উমাশঙ্করবাবু জানান বিডিও, পঞ্চায়েত, বিএমওএইচ এবং অন্যান্য কিছু সরকারি অফিসের কর্মীদের সঙ্গে সহমত হয়েই এলাকায় পোলিও রোগ সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করতেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কয়েন কিনতে মোট দু’লক্ষ টাকা প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই ১১ হাজার টাকা দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন মহকুমা বাজার নিয়ন্ত্রণ সমিতির কর্মীরা। সবার থেকে টাকা আসার পরে বাকি টাক এসডিও-ই পূরণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বছর পাঁচেক আগে এই মহকুমারই মুরারই থানার পাইকরে পোলিও আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। তাই এ বারও রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় পাল্স পোলিও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আগামী সাত দিনে শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ২২টি শিশুকে পোলিও খাওয়ানো হবে। প্রতিটি পঞ্চায়েতে ৮০-১০০টি বুথ গড়া হয়েছে। রাজ্য সরকারি ঘোষিত ‘স্বাস্থ্যজেলা’ রামপুরহাটে গত এপ্রিলেও একই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। এ দিকে, পাল্স পোলিও কনর্মসূচিকে ঘিরে মহকুমাশাসকের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মহকুমার সহকারী ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিত রায়চৌধুরী। তাঁর মন্তব্য, “সোনা শুভ কাজের লক্ষণ। অভিভাবকরা শিশুদের পোলিও টিকা খাওয়ানোর বিষয়ে বেশি বেশি করে উৎসাহিত হবেন। আমার আশা, এমন উদ্যোগে সত্যিকারের সোনা ফলবে!”
সোনা যে ফলছে, এ দিনই তার খবর মিলেছে। অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীরা পোলিও টিকা খাওয়াতে গিয়ে মুরারই ২ ব্লকে বাধার মুখে পড়েন। সেখানে ১৩টি শিশুকে পোলিও খাওয়ানোর ব্যাপারে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না তাদের বাবা-মায়েরা। প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এলাকায় গিয়ে পরিবারকেগুলিকে পোলিও টিকার গুরুত্ব বোঝান। সেই সঙ্গে সোনার কয়েনের কথাও জানান। এ দিনই অভিভাবকেরা ওই ১৩টি শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়াতে দিব্যি রাজি হয়ে যান বলে মহকুমাশাসক জানান। তবে, এ দিনই নলহাটি ২ ব্লকে দু’টি শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়ানো যায়নি। নারাজ বাবা-মাকে আজ, সোমবারই গিয়ে বুঝিয়ে আসবেন প্রশাসনের লোকেরা। সেখানে তাঁদের লটারির কথাও জানানো হবে।
এত কিছুর পরেও অবশ্য প্রশ্ন উঠছে, এ ভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সোনা কিনে তা কি কোনও সরকারি প্রকল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত করা যায়? এসডিও আগেই এই পরিকল্পনার কথা জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীকে জানান। তিনি এমন উদ্যোগে কোনও দোষ খুঁজে পাচ্ছেন না। ডিএম-এর ব্যাখ্যা, “অন্য মহকুমার তুলনায় রামপুরহাট পোলিও কর্মসূচিতে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। পিছিয়ে পড়া এলাকায় সফল হতে গেলে বিশেষ নজর দিতে হয়। তখন অনেক ক্ষেত্রে এ রকম পরিকল্পনা নেওয়া যেতেই পারে।” অন্য দিকে, রামপুরহাটের তরুণ এসডিও বলছেন, “সমস্ত শিশুই যাতে পোলিও টিকা খায়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে জোর করে কাউকে খাওয়ানোও যাবে না। মানুষকে বুঝিয়ে কিংবা এ রকম লটারির ব্যবস্থা করেই তা করা সম্ভব বলে মনে হয়েছে। আসলে যেখানে যেমন টোটকা লাগে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy