এমন ভাবেই দেওয়া হয় খাবার। নিজস্ব চিত্র।
দেশের সর্বত্র যখন প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ শুরু হয়েছে, তখন খাস সরকারি হাসপাতালেই রোগীদের খাওয়া দেওয়া হচ্ছে ওই প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে।
ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে খাবার দেওয়ার এই ব্যবস্থা চলে আসছে ২০১৩ সালের মার্চ মাস থেকে। তিন বেলা ওই ক্যারিব্যাগেই ডাল-সব্জির সঙ্গে ভাত মেখে খাওয়ার জন্য দেওয়া হয় কাগজের তৈরি হালকা থালা। যে থালাতে খাওয়াও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বলে স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন। কিন্তু সদ্যোজাত শিশুর মা থেকে শুরু করে শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সব রোগী সেই খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন। সচেতন অনেক রোগী অবশ্য সেই খাবার খান না। তাঁদের দাবি, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ যে ব্যবহার করা ক্ষতিকর তা কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রচার করছে সরকারই। তারপরেও এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই।
জ্বর নিয়ে ভর্তি এক রোগী শ্যামল সরকার যেমন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “প্লাস্টিকের ব্যাগে খাবার দিচ্ছে দেখে আমি প্রতিবাদ করি। হাসপাতালের খাবার খাইও না।’’ শ্যামলবাবুর কথায়, ‘‘চিকিৎসকেরা তো জানেন ওই ব্যাগ কতটা ক্ষতিকর। তবু কেন তাঁরা তাতেই ভাত ও অন্য খাবার দিচ্ছেন?’’
ডায়েরিয়া নিয়ে ভর্তি হওয়া এক মহিলা রঞ্জিনা বেগম বলেন, “কাগজের হালকা থালায় প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগে দেওয়া ভাত, সব্জি, ডাল ইচ্ছে না থাকলেও খিদের জ্বালায় খেতে বাধ্য হচ্ছি। আমার বাড়ি অনেক দূর। তাই বাড়ি থেকে খাবার আনতে পারি না।”
ধূপগুড়ি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বিধায়ক মমতা রায় বলেন, “প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে রোগীদের খাবার পরিবেশন করা নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকরা আমার সঙ্গে কখনও পরামর্শ করেনি। সারা বিশ্বে যখন প্লাস্টিকের অপকারিতার জন্য তা বর্জন করার উদ্যোগ চলছে তখন খোদ হাসপাতালে এই ব্যবস্থা খুবই খারাপ। আমি আজই জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব । এই প্রথা চলতে পারে না।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে অবশ্য এই দিন ফোনে পাওয়া যায়নি।
ধূপগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সব্যসাচী মণ্ডল বলেন, “আমি এই হাসপাতালে আসবার আগে থেকেই এই ব্যবস্থা চালু ছিল। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে ক্যারিব্যাগে রোগীদের খাবার সরবরাহ বন্ধ করে অন্য ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। বিশদে জানতে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলুন।”
৮২ শয্যার হাসপাতাল হওয়ার কথা থাকলেও পরিমাঠামোর অভাবে বর্তমানে ধূপগুড়ি হাসপাতালে ৬০টি শয্যা আছে। রোগীর চাপ বেশি হলে একটি শয্যায় দু’জন করে রোগী থাকেন। গড়ে ৬০ জন রোগীর খাদ্য তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে রোগীদের খাদ্য পরিবেশন করা যে খারাপ, তা জানেন ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও। ওই গোষ্ঠীর সদস্যা মমতা দেবনাথ, প্রতিমা রায়-রা জানান, চার বছর ধরে হাসপাতালে রান্না করছেন তাঁরা। প্রায় তিন বছর ধরে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে রোগীদের খাবার দিচ্ছেন। অনেক রোগী অভিযোগ করেন। মমতাদেবী বলেন, ‘‘রোগীদের অভিযোগ আমরা চিকিৎসকদের জানিয়েছি, কিন্তু অবস্থা বদলায়নি। আমরা চিকিৎসকদের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছি।” এই হাসপাতালে সকালের খাবারের জন্য বরাদ্দ ১৪টাকা ৫৩ পয়সা, দুপুরের জন্য ২০টাকা ৬২ পয়সা, রাতের জন্য ১১টাকা ৬৭ পয়সা। কোনও কোনও কর্মীর অভিযোগ, সুস্থ হতে আসা রোগীরা ভবিষ্যতের জন্য শরীরে বিষ বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy