Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভোগান্তি রোগীদেরও

নার্স-নিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে ঘেরাও আন্দোলনের জেরে প্রায় ৪ ঘণ্টা ভোগান্তি হল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের রোগীদের। এই হাসপাতালে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা আসেন। সঙ্গে আসেন তাঁদের বাড়ির লোকজনও।

সুপারের ঘরের সামনে পরিষেবা পাননি বলে ক্ষোভ আইএনটিটিইউসি নেতা-কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।

সুপারের ঘরের সামনে পরিষেবা পাননি বলে ক্ষোভ আইএনটিটিইউসি নেতা-কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৩৯
Share: Save:

নার্স-নিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে ঘেরাও আন্দোলনের জেরে প্রায় ৪ ঘণ্টা ভোগান্তি হল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের রোগীদের। এই হাসপাতালে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা আসেন। সঙ্গে আসেন তাঁদের বাড়ির লোকজনও। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই চার ঘণ্টা রোগীরা অবহেলিত হয়েছেন। ডাক্তার বা নার্সদের কেউই রোগীর পরিজনদেরও কোনও কথা শুনতে চাননি। তবে নার্সদের দাবি, তাঁরা পালা করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাই রোগীরা অবহেলিত হননি।

কোচবিহারের সঞ্জয় সূত্রধর জানান, তাঁর বাবা পুরুষ সার্জিক্যাল বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। সঞ্জয়বাবুর অভিযোগ, ‘‘সকাল থেকে বাবার ব্যান্ডেজ বদলানোর জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। দুপুর বেরিয়ে বিকেল হলেও ওয়ার্ড থেকে কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি।’’ দার্জিলিং জেলা আইএনটিটিইউসির এক সদস্য সুদেব সরকার পায়ে ঘা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন বৃহস্পতিবার বিকেলে। তখন প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়েছিল। তারপর থেকে শুক্রবার দুপুর দু’টো পর্যন্ত সুদেববাবুকে কেউ দেখতে যাননি বলে তাঁর পরিজনদের দাবি।

জরুরি বিভাগেই ভর্তি রয়েছেন গোপাল কর্মকার। তাঁর দাদা নেপালবাবুর অভিযোগ, তাঁর বিপিএল কার্ড রয়েছে। ভাইয়ের সিটি স্ক্যান করাতে হবে। বিনা মূল্যে সেই স্ক্যান করাতে সুপারের কাছ থেকে অনুমতিপত্র নিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিক্ষোভের জন্য সকাল থেকে তিন বার সুপারের কাছে যাওয়ার পরেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। রাজ্য স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হাসপাতালে পরিষেবাটাই মুখ্য। যাই হয়ে থাকুক না কেন, পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়া উচিত নয়। ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয়, তার জন্য সুপারের সঙ্গে কথা বলব।’’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত নার্স ও হাসপাতালের কর্মচারীরা বিক্ষোভ দেখানোর সময় বিভিন্ন ওয়ার্ডে যত জন নার্সের থাকার কথা, অনেক জায়গাতেই তা ছিল না। ফলে শিকেয় উঠেছিল পরিষেবা। রোগীর আত্মীয়দের অনেকেই দীর্ঘক্ষণ পরিষেবা না পেয়ে শেষে হাসপাতাল সুপারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষুব্ধদের মধ্যে যেমন সাধারণ রোগীদের সঙ্গে আইএনটিটিইউসির কোর কমিটির সদস্যও পরিষেবা পাননি বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও নার্সরা বা হাসপাতাল সুপার কেউই পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে বলে স্বীকার করেননি। তাঁদের দাবি, পরিষেবা স্বাভাবিকই ছিল। কোনও রকম সমস্যা হয়নি।

এদিন সকাল দশটায় প্রসূতি বিভাগের একজন স্টাফ নার্সকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন কর্মীরা। সাড়ে দশটা নাগাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপরেই বিভিন্ন বিভাগ থেকে নার্সদের একটা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিক্ষোভে সামিল হন। যোগ দেন বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরাও। মেডিক্যাল কলেজ সুপার নির্মল বেরাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি পরিষেবায় বিঘ্নের কথা স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘‘নার্স থেকে অন্য কর্মীরা ঘেরাওতে থাকলেও একটা বড় অংশ কাজ করেছেন। ফলে কোনও সমস্যা হয়নি। যাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁদের অভিযোগ ঠিক নয়।’’ আইএনটিটিইউসি-র অভিযোগও ঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি। সুপার বলেন, ‘‘ওই রোগী ভাল আছেন। তাঁর চিকিৎসা হয়েছে।’’ প্রসূতি বিভাগের নার্সিং ইনচার্জ জয়িতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘আমরা কাজ বন্ধ রাখিনি। পালা করে বিক্ষোভে সামিল হয়েছি। অভিযোগ ঠিক নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE