ডেবরার স্বাস্থ্য শিবিরে ম্যাজিকের মাধ্যমে চলছে প্রচার। নিজস্ব চিত্র।
একহাত মাপের বড় তাস। এইচআইভি সংক্রমিত তাসের ছোঁয়া পেয়ে সেই তাস ছোট হয়ে গেল। এরপর জাদুকরের হাতে এল ছাতা। তার গায়ে উজ্বল এইচআইভি সচেতনতার বার্তা। এইচআইভি যে ছোঁয়াচে নয় সেই বার্তাও গানে গানে দিলেন জাদুকর। ম্যাজিকের মাধ্যমে এ ভাবেই এডস্ প্রতিরোধী সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
কর্মসূত্রে জেলার বহু মানুষই ভিন্ রাজ্যে থাকেন। উৎসবের মরসুমে ঘরে ফেরেন তাঁরা। তাঁদের মাধ্যমে যাতে মারণ রোগের জীবাণু সংক্রমণ না হয়, মূলত সে জন্যই পুজোর মুখে এই উদ্যোগ। রাজ্য এডস্ প্রতিরোধ সংস্থার সহযোগিতায় জেলার দশটি ব্লকে সচেতনতা প্রচার ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির। গত ১ অক্টোবর কেশপুর দিয়ে শুরু হয়েছিল এই কর্মসূচি। ইতিমধ্যে পিংলা, সবংয়ে শিবির হয়েছে। শুক্রবার শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল ডেবরা ব্লকের বাহাদুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শুধু এইচআইভি নয়, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির মতো অন্য সংক্রমণজনিত রোগের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয় ওই শিবিরে। উপস্থিত ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা, উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা সংক্রমণজনিত রোগের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান, বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি প্রমুখ। শিবিরে হাজির ছিলেন রাজ্য এডস্ প্রতিরোধ সংস্থার অনুমোদিত জাদুকর বৈদ্যনাথ ঘোষ। এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, শিশুর টিকাকরণের বার্তা নিয়ে নানা ম্যাজিক দেখান তিনি। জাদুকর বৈদ্যনাথবাবুর কথায়, ‘‘শুধু এইচআইভি নিয়ে ম্যাজিক দেখালে সব মানুষ আসবেন না। তাই সামগ্রিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়েই ম্যাজিক দেখানো হচ্ছে। এতে মানুষ সচেতন হবেন। সঙ্গে শিবিরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে রোগীদের খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।’’
ডেবরার এই স্বাস্থ্য শিবিরে মুম্বই থেকে ঈদে বাড়ি আসা আতাবুল রহমান, দুর্গাপুজো উপলক্ষে গ্রামে ফেরা কলকাতার কাঠমিস্ত্রি অজিত সিংহদের মতো অনেকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে আটশো জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চার চিকিৎসক। শিবিরে অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, অপরীক্ষিত রক্ত, ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের পুনর্ব্যবহার, গর্ভবতীর এইচআইভি থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। করমর্দন, আলিঙ্গন, এক শৌচাগার ব্যবহার, পুকুরে স্নান ও মশা-মাছি থেকে যে এডস্ ছড়ায় না, সেই সম্পর্কেও সচেতন করা হচ্ছে।
জেলার বহু মানুষ কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অভিবাসীরা সংক্রমণজনিত নানা রোগের জীবাণু শরীরে নিয়ে ফেরেন। এডসের মতো মারণরোগও ছড়ায় এতে। উৎসবের মরসুমে বাড়ি ফেরার প্রবণতা বাড়ায় এই সময়ে শিবির করতে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। জেলার সংক্রমিত রোগের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “ঈদ, দুর্গাপুজো, মহরমের মতো উৎসবের মরসুমে গ্রামে ফেরেন ভিন্ রাজ্যে কর্মরতেরা। এঁদের শরীরে সংক্রমণের লক্ষণ সব থেকে বেশি। এঁদের মাধ্যমে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায় তাই স্বাস্থ্য শিবির করছি। কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণ ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
জেলায় যে সব ব্লকে আড়াইশো জনের বেশি বাইরে থাকেন, তেমনই দশটি ব্লককে এই কর্মসূচির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এই দশটি ব্লকের মোট ৫,৪৮০ জন অন্যত্র থাকেন। এর মধ্যে শুধু দাসপুর-২ ব্লকেরই ১,২৬০ জন ভিন্ রাজ্যে থাকেন। এ ক্ষেত্রে ‘লিঙ্ক ওয়ার্কার স্কিমে’র মাধ্যমে জেলার ১০০টি গ্রামকে বাছাই করে স্বাস্থ্য শিবির হচ্ছে। সেখানে রক্তচাপ, দুর্বলতা, যৌনরোগ, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, এইচআইভি-র পরীক্ষা হচ্ছে।
দুর্গাপুজোর পরে ২৯ অক্টোবর খড়্গপুর-২ ব্লক দিয়ে ফের শিবির শুরু হবে। ক্রমে ঘাটাল, দাসপুর-১, দাসপুর-২, নয়াগ্রাম ব্লকে হবে স্বাস্থ্য শিবির। ৫ নভেম্বর ঝাড়গ্রাম সদর ব্লক দিয়ে কর্মসূচি শেষ হবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘প্রবাসীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এই শিবির করা হচ্ছে। সংক্রমণ জনিত রোগ রয়েছে কিনা দেখার পাশাপাশি সুগার, চক্ষুপরীক্ষাও চলছে। মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। ভাল সাড়া পাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy