Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রোগীকে ভুল ইঞ্জেকশন, নার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ

পরিবারের লোকজনের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে চিকিৎসাধীন এক রোগীকে ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের কর্তব্যরত এক নার্সের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৫ ০২:১৭
Share: Save:

পরিবারের লোকজনের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে চিকিৎসাধীন এক রোগীকে ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের কর্তব্যরত এক নার্সের বিরুদ্ধে। সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে। অভিযুক্ত নার্সের শাস্তির দাবিতে ওই রোগীর পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা প্রায় ঘন্টা খানেক বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভে সামিল হন ওই ওয়ার্ডে চিকিত্সাধীন অন্য রোগীর পরিজনেরাও। বেগতিক বুঝে ওই নার্স কোনওমতে হাসপাতাল ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। ওই রোগীর পরিবারের তরফে হাসপাতাল সুপার ও রায়গঞ্জ থানায় অভিযুক্ত নার্সের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার প্রদীপ মন্ডল বলেন, ‘‘গুরুতর অভিযোগ। চিকিত্সকের লিখিত পরামর্শ, রোগীর নাম ও শয্যা নম্বর ভাল করে মিলিয়ে কর্তব্যরত নার্সদের রোগীদের ইঞ্জেকশন দেওয়া উচিত। অভিযুক্ত নার্সের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তী জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। কোনও প্রমাণ মিললে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হবে।

অভিযুক্ত নার্স এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার জানান, অভিযুক্ত নার্স ওই রোগীকে অন্য রোগীর অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ভিটামিন ইঞ্জেকশন দিয়েছেন বলে অভিযোগ। তবে তাঁর দাবি, চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া কোনও রোগীকে ওই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়ে থাকলে, তাতে ভয়ের কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ওই রোগীকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি।’’

হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই রোগীর নাম বৈদ্যনাথ সিংহ। ৬২ বছর বয়সী পেশায় দর্জি বৈদ্যনাথবাবুর বাড়ি রায়গঞ্জের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের দেবীনগর এলাকায়। বৈদ্যনাথবাবুর দুই ছেলে সোমনাথবাবু ও শিবশঙ্করবাবু জানান, গত শুক্রবার বৈদ্যনাথবাবুর মাথা ব্যথা শুরু হয়। প্রস্রাবও বন্ধ হয়ে যায়। ওই দিন বেলা ১১টা নাগাদ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিত্সক সুশীল বিশ্বাসের অধীনে তাঁরা বৈদ্যনাথবাবুকে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের ২২ নম্বর বেডে ভর্তি করেন। গত রবিবার সকালে বৈদ্যনাথবাবুর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় চিকিত্সক সুশীলবাবু তাঁকে ছুটি দিয়ে দেন। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার সময়ে ওয়ার্ডের মধ্যেই বৈদ্যনাথবাবু ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁরা তাঁকে আবার ভর্তি করেন।

সোমনাথবাবু ও শিবশঙ্করবাবুর দাবি, রবিবার রাতে চিকিত্সক রাউন্ডে এসে বৈদ্যনাথবাবুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বেশ কিছু ওষুধ লিখে দিলেও নার্সদের কোনও ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরামর্শ দেননি। তাঁদের অভিযোগ, এ দিন সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ অভিযুক্ত নার্স ২৫ নম্বর বেডে হৃদরোগে আক্রান্ত চিকিত্সাধীন এক বৃদ্ধকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার বদলে বৈদ্যনাথবাবুর ডান হাতে ইঞ্জেকশন দিয়ে দেন। শিবশঙ্করবাবু বলেন, ‘‘নার্সকে আমি ও আমার স্ত্রী বারবার বলি বাবাকে চিকিত্সক কোনও ইঞ্জেকশন দেওয়ার নির্দেশ দেননি, কিন্তু আমাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে তিনি জোর করে বাবাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে সিস্টাররুমে ফিরে যান।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পরে নথি মিলিয়ে দেখার পর ওই নার্স বুঝতে পারেন, পাশের বেডের রোগীর ইঞ্জেকশন তিনি ভুল করে বাবাকে দিয়েছেন। কিন্তু সেই সময় তিনি ভুল স্বীকার না করে উল্টে আমাদের কাছে দাবি করেন, ভুল হতেই পারে।’’ তাঁরা জানিয়েছেন, এরপরেই তাঁরা ওই নার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের দাবি, ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর বৈদ্যনাথবাবুর রক্তচাপ বেড়ে যায়। তিনি কথা বলা বন্ধ করে দেন। চিকিত্সকেরা তড়িঘড়ি ছুটে এসে তাঁর চিকিত্সা শুরু করলে সঙ্কট কাটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE