Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রোগীদের খাবার নিয়ে দুর্নীতি, শো-কজ ঠিকাদারকে

হাসপাতালের রোগীদের খাবার নিয়ে দুর্নীতির ঘটনায় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারকে শো-কজ করেই দায় সারল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে হাসপাতালে খাবার সরবরাহে ব্যাপক দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হন একাধিক সদস্য। গত ১২ অগষ্ট রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে এই দুর্নীতি হাতেনাতে ধরেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৮
Share: Save:

হাসপাতালের রোগীদের খাবার নিয়ে দুর্নীতির ঘটনায় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারকে শো-কজ করেই দায় সারল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে হাসপাতালে খাবার সরবরাহে ব্যাপক দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হন একাধিক সদস্য। গত ১২ অগষ্ট রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে এই দুর্নীতি হাতেনাতে ধরেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা হাসপাতালে এসেছেন খবর পেয়ে রান্নাঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান ঠিকাদারের কর্মীরা। হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল বলেন, “স্বাস্থ্য কর্তার নির্দেশে রান্নাঘরের তালা ভাঙা হয়। সেদিন হাসপাতালের ২৮০ জন রোগীকে দুপুরে খাবার হিসেবে ভাত, ডাল, সব্জি, মাছ দেওয়ার কথা ছিল। স্বাস্থ্য অধিকর্তা নিজেই রান্না ঘরে ঢুকে গুনে দেখেন ১২০ পিস মাছ রয়েছে। সব্জি, ডাল যে পরিমাণে রান্না করা হয়েছিল তাতে বড়জোর শ’খানেক রোগীর খাবার হতে পারত।” এই ঘটনায় বিশ্বরঞ্জনবাবু রীতিমতো ভর্ৎসনা করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “এরপরেই রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার নির্দেশে হাসপাতালের পথ্য সরবরাহকারী ওই ঠিকাদার ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্যকে শো-কজ করা হয়েছে। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভা ডেকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জঙ্গিপুর হাসপাতালের সুপারকে।”

মঙ্গলবার ছিল রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক। সমিতির সদস্য ছাড়াও বৈঠকে ডেকে পাঠানো হয় ওই ঠিকাদারকেও। খাবার নিয়ে ওই দুর্নীতির আলোচনা শুরু হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সমিতির বেশ কয়েক জন সদস্য। রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “যে ঠিকাদারকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি নিজে কাজ না করে বকলমে অন্য এক ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করান। রোগীদের খাবার নিয়ে এত বড় দুর্নীতির পরেও ওই সব ঠিকাদারকে বাতিল করে নয়া ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে না কেন?” তিনি বলেন, “পুকুর চুরি করতে করতে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা আগাম জানিয়ে হাসপাতালে আসছেন জেনেও ২৮০ জন রোগীর জায়গায় ১২০ জনের জন্য খাবার রান্না করা হয়েছে। অর্থাৎ জঙ্গিপুর হাসপাতালে মাত্র ৪০ শতাংশ রোগী খাবার পান। বাকি ৬০ শতাংশ খাবারের টাকা বেমালুম চুরি করা হয়। অবিলম্বে তা বন্ধ হওয়া দরকার।”

ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলার বিকাশ নন্দও। তিনি বলেন, “হাসপাতালে রোগীর খাবার বরাদ্দ রয়েছে দিনে তিন বার। সকালে পাউরুটি, ২৫০ গ্রাম দুধ, ১টা ডিম। দুপুরে বরাদ্দ ৫০০ গ্রাম ভাত, মাছ ৫০ গ্রাম, ১০০ গ্রাম ডাল, ২০০ গ্রাম সব্জি, সপ্তাহে দু’দিন মাংস। রাতে ৪০০ গ্রাম ভাত, ১টা ডিম, ১০০গ্রাম ডাল, ২০০ গ্রাম সব্জি। কিন্তু রোগীরা এর অর্ধেক খাবারও পায় না। সাত দিন আগে হাসপাতালের বেশ কয়েক জন রোগী থালায় দেওয়া খাবার সুপারের অফিসে গিয়ে দেখিয়ে আসেন। তারপরেও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তা নিজে এসে হাতেনাতে দুর্নীতি ধরে ফেলেছেন। এখন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তারা শো-কজ করেই দায় সারছেন।” বৈঠকে উপস্থিত হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, “খাবার নিয়ে বহু বার অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও খাবারের মানের কোনও উন্নতি হয়নি।” ওই ঠিকাদার ইন্দ্রনীলবাবু অবশ্য বলেন, “অন্য জনকে কাজের ভার দেওয়াতেই এই ঘটনা ঘটেছে। ১৫ দিনের মধ্যে হাসপাতালে খাবারের মানোন্নয়ন ও দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” হাসপাতালের সুপার বলেন, “খাবারের মান দেখার জন্য একটি কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ২৮০ জনের জায়গায় ১২০ জনের খাবার সেদিন দেখতে পেয়েছেন। তাই ১৬০ জনের খাবারের দাম কেটে নেওয়া হবে ঠিকাদারের পাওনা থেকে।”

খাবারের এই দুর্নীতির পাশপাশি হাসপাতালের আরও বেশ কিছু বিষয়ে অভিযোগ তোলেন বৈঠকে উপস্থিত সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতাল সাফাইয়ে প্রতি মাসে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এক ঠিকাদারকে রাজ্য সরকার দিলেও হাসপাতাল ঠিকমতো সাফাই করা হয় না। ২৪ জন লোক কাজ করছে দেখানো হলেও বাস্তবে তার অর্ধেক লোকও দেখা যায় না। জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক নিখিলেশ মণ্ডল সুপারকে এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন। সেই সঙ্গে রিপোর্ট পাঠাতে বলেছেন জেলা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকেও। শনিবার রাতে অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে হাসপাতালে এক কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়েও প্রতিবাদে সোচ্চার হন সদস্যরা। সুপার বলেন, “হাসপাতালে ১২টি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। তাতে নিখরচায় প্রসূতিদের বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা ও বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। আগে ‘মাতৃযান’ নাম থাকলেও এখন নাম বদলে সেগুলি ‘নিশ্চিতযান’ হিসেবে কাজ করছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, জরুরি পরিস্থিতিতে এখন থেকে ওই অ্যাম্বুলেন্সগুলিকে রেফার করা রোগীদের বহরমপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কাজেও ব্যবহার করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE