অবাধে ঘুরছে শুয়োরের পাল। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাই সার। শহর জুড়ে এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বরাহবাহিনী। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, স্থানীয় পুরসভা ও প্রশাসনের সতর্কবার্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রবিবরাও জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জের অলিগলি, রাজপথে দেখা মিলেছে তাদের।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন শহর থেকে শুয়োর সরিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু ‘কে ধরবে শুয়োর’-- সেই বিতর্কে হাত ধুয়ে ফেলেছে পুরসভা, প্রশাসন ও পুলিশ সকলেই।
শহর থেকে ১০ মাইল দুরে সাগরদিঘির গাঙ্গাড্ডা গ্রামে কিশোরের মৃত্যুর কারণ এনসেফ্যালাইটিস না মেনেনজাইটিসেতা নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের মধ্যে বিতর্ক যাই থাক, শহর জুড়ে শুয়োরের অবাধ বিচরণে রীতিমত আতঙ্ক দানা বেঁধেছে জঙ্গিপুরের বাসিন্দাদের মধ্যে।
গত বুধবারই স্বাস্থ্য দফতর থেকে জঙ্গিপুর পুরসভাকে নোটিস ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সতর্ক করে দু’দিনের মধ্যে লোকালয় থেকে শুয়োর সরাতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারপরে কেটে গিয়েছে ৪ দিন। জঙ্গিপুর পুরসভা সেই সতর্কবার্তা মাইক ও হ্যান্ডবিলের মাধ্যমে দুই শহরে ছড়িয়ে দিয়েই দায় সেরেছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের শহর কমিটির সভাপতি প্রাক্তন পুর কাউন্সিলার গৌতম রুদ্র বলেন, “শহর জুড়ে শুয়োরদের দাপট নিয়ে পুরসভা সব জেনেও নীরব। কারণ শহরে শুয়োরের ব্যবসা করছে কিছু পুরকর্মীরাই। জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের আবাসনে শুয়োর পোষা হচ্ছে। এইভাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার ফলেই বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য বিপন্ন করে শুয়োরের পাল অবাধে ঘুরছে শহরে।”
কেন এত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শহর জুড়ে শুয়োরের পালের এই অবাধ বিচরণ? জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান সিপিএমের মোজাহারুল ইসলামের সাফ কথা, শহর থেকে শুয়োর সরাবার মত কোনও পরিকাঠামোই নেই পুরসভার। শুয়োর ধরার যন্ত্রপাতি নেই। নেই প্রশিক্ষণও। তাঁর প্রশ্ন, “পুরকর্মীরা খালি হাতে পথে পথে ঘুরে শুয়োর ধরে বেড়াবে নাকি? আর অত শুয়োর ধরে রাখবই বা কোথায়? তাই আমাদের পক্ষে শুয়োর সরানো সম্ভব নয়।” পুরসভার তরফে মাইক ও হ্যান্ডবিল ছড়িয়ে শহরে প্রচার করা হয়েছে। পুরবাসীদের সতর্ক করে বলা হয়েছে নিজেদের শুয়োর নিজেদেরই সরিয়ে নিতে হবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। কিন্তু তাঁরা শুয়োর না সরালে তাঁর মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে কে? ঠিক কী শাস্তিই বা হওয়া উচিত তা জানা নেই পুরপ্রধানের। পুরসভার হাতে এ রকম কোনও ক্ষমতা নেই। এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে প্রশাসন ও পুলিশকে।
এ দিকে জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক নিখিলেশ মণ্ডল আবার সব দায় চাপিয়ে দিয়েছেন পুরসভার উপর। তিনি বলেন, “শহরকে শুয়োরমুক্ত করতে যা করার পুরসভাকেই করতে হবে। কারণ শহরের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায় পুরসভার। আমি জঙ্গিপুরের পুরপ্রধানকে বলেছি, প্রশাসনের কাছে কোনও রকম সাহায্য চেয়ে প্রস্তাব দিলে সব রকম ভাবে সাহায্য করা হবে।” জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “পুলিশ তো আর শুয়োর ধরে বেড়াবে না। এসব কাজ পঞ্চায়েত ও পুরসভার। শুয়োর ধরতে গিয়ে আইনগত কোনও সমস্যা হলে তখন পুলিশ হস্তক্ষেপ করবে।”
এ সবের মাঝে আতঙ্কিত বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন, তাহলে শহর থেকে শুয়োর সরাবেটা কে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy