Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শহরে বাড়ছে অজানা জ্বর, চিন্তায় পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা

সারা গায়ে ব্যথা। হাল্কা জ্বর। কারও কপালে, কারও বা মাথার পিছনে যন্ত্রণা। প্যারাসিটামল খেলে জ্বর যাচ্ছে বটে, কিন্তু তিন-চার দিনের জন্য ব্যথা থেকে যাচ্ছে। সঙ্গে ঘুম ঘুম ভাব। রক্ত পরীক্ষায় মিলছে না কিছুই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৪৮
Share: Save:

সারা গায়ে ব্যথা। হাল্কা জ্বর। কারও কপালে, কারও বা মাথার পিছনে যন্ত্রণা। প্যারাসিটামল খেলে জ্বর যাচ্ছে বটে, কিন্তু তিন-চার দিনের জন্য ব্যথা থেকে যাচ্ছে। সঙ্গে ঘুম ঘুম ভাব। রক্ত পরীক্ষায় মিলছে না কিছুই।

এমনই অদ্ভুত জ্বরে কাবু কলকাতা। কোনও ক্ষেত্রে জ্বর এত বেড়ে যাচ্ছে যে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। ওই জ্বরের উপসর্গের সঙ্গে যেমন ডেঙ্গির মিল আছে, তেমনই মিল রয়েছে চিকুনগুনিয়ার। কিন্তু রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না ওই দু’টি রোগের একটিরও জীবাণু। পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা ওই রোগ নিয়ে বিভ্রান্ত। তাঁদের এক জনের কথায়, “উপসর্গ দেখে মনে হচ্ছে হামলাকারী কোনও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া। কিন্তু তারা কোন প্রকারের বুঝতে না পারায় মানুষকে ঠিক পরামর্শ দিতে পারছি না।”

জুলাই-অগস্টে এমনই অজানা জীবাণুর প্রকোপে উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে উপসর্গ ছিল এনসেফ্যালাইটিসের, কিন্তু সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড বা রক্ত পরীক্ষায় কোনও জীবাণুই পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য ভবন রোগটির নামকরণ করে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম (এইএস)। সেই রোগে দক্ষিণবঙ্গেও কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জোরদার বর্ষা নামায় সেই সংক্রমণ কমে এসেছে। কিন্তু বর্ষার তীব্রতা কিছুটা কমতেই কলকাতা ও তার আশপাশে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির সংক্রমণ ধরা পড়েছে। হেমারেজিক ডেঙ্গি এবং ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে বেশ কয়েক জনের মৃত্যুও হয়েছে। কিন্তু পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা উদ্বিগ্ন কলকাতার ঘরে ঘরে হানা দেওয়া জ্বরের উত্‌স খুঁজে বের না হওয়ায়।

এক পরজীবী বিশেষজ্ঞের মন্তব্য, “এ ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে ঢুকে কিডনির কাজ দ্রুত নষ্ট করে দিতে পারে। তাই আক্রান্তদের বেশি করে জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। তাতে কিডনি-আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে। আর জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খেতে বলছি। আর কিছুই করার নেই।”

স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিনের এক পরজীবী বিশেষজ্ঞ বলেন, “প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ভাবে তাদের জীবনচক্র, জিনের গঠন বদলে নিচ্ছে যার নাগাল আমরা পাচ্ছি না। বিজ্ঞান যত উন্নত হচ্ছে, ওই জীবাণুরা তার থেকেও দ্রুত নিজেদের বদলে ফেলছে। এটাই চিন্তার।” ট্রপিক্যালের প্রাক্তন অধিকর্তা পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী এই সব অজানা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াদের নিয়ে খুবই শঙ্কিত। তিনি বলেন, “আমার কাছে এক জন রোগী এসেছিলেন তাঁর শরীরে ডেঙ্গির সব উপসর্গ ছিল। রক্তের প্লেটলেটস্‌ও দ্রুত কমছিল। সব পরীক্ষা করেও ডেঙ্গি চিহ্নিত করা যায়নি। ওই রোগীকে বাঁচাতে পারিনি। তাঁর পরিবারকে জানাতে পারিনি মৃত্যুর কারণ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fever unknown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE