Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শুধু দৌড়ঝাঁপ নয়, ছোটদেরও ব্যায়াম জরুরি

শরীর ও মন ঠিক রাখতে ছোটদেরও প্রয়োজন ব্যায়াম করা। অনেকের মনে ভুল ধারণা আছে। তাঁরা ভাবেন, ব্যায়াম করলে ছোটদের নানা সমস্যা হতে পারে। সেই ভুল ভাঙিয়ে দিলেন চিন্ময় রায়।শরীর ও মন ঠিক রাখতে ছোটদেরও প্রয়োজন ব্যায়াম করা। অনেকের মনে ভুল ধারণা আছে। তাঁরা ভাবেন, ব্যায়াম করলে ছোটদের নানা সমস্যা হতে পারে। সেই ভুল ভাঙিয়ে দিলেন চিন্ময় রায়। শুধুমাত্র আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের জন্য।

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

স্কুলব্যাগের ভারে কাঁধে ব্যথা। বইয়ের পাতায় সারা দিন মুখ গুঁজে। ছোটদের অভিধানে আজ শুধুই ‘অল ওয়ার্ক অ্যান্ড নো প্লে’। প্রতিযোগিতার বাজারে ছোট থেকেই সন্তান পড়াশোনায় তুখোড় হোক, বাবা-মায়েরা এটাই চান। মনে রাখতে হবে এ ভাবে চললে ছোটদের শরীর আর মনে নানা রোগ বাসা বাধাতে পারে। শরীর-মন দুটোই চাঙ্গা রেখে ছোটদের প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে শরীরচর্চা দারুণ অস্ত্র হতে পারে।

শরীরকে মজবুত করে

পেশির আর বন্ধনীর জোর বাড়িয়ে শরীরকে শক্তপোক্ত করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।

স্টেবিলিটি-র ব্যায়াম পশ্চার ঠিক করে, কাঁধ-কোমরের ব্যথা থেকে রক্ষা।

স্বতঃস্ফূর্ততা বাড়ায় আর রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে।

মনের মেঘ কাটছে

দৌড়ঝাঁপ করলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। ১০ সপ্তাহের ব্যায়ামের পরে দেখা গিয়েছে অতি চঞ্চল বা অবসাদে ভোগা বাচ্চাদের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

ক্লাসে কথা কম বলা, লিখিত কোনও কাজ, সৃজনশীল কাজে উন্নতি।

ভুল ধারণা

বাবা-মায়েরা ভাবেন ব্যায়াম মানে শুধু দৌড়ঝাঁপ। ওজন নিয়ে ব্যায়ামে করলে চোট লাগতে পারে, বেঁটে হয়ে যাবে ইত্যাদি। ডাহা ভুল। বরং হাল্কা ওজন নিয়ে ব্যায়ামে অনেক লাভ। বোন মাস বাড়ে। হাঁটু, কাঁধ শক্তিশালী হয়, পেশি বাড়ে, কমে ফ্যাট সেল। আমেরিকার ‘কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন’ জানিয়েছে, ১০-১৪ বছরের বাচ্চাদের নিশ্চিন্তে জোর বাড়ানোর ব্যায়াম করানো যায়।

বুঝে শুরু

সার্টিফায়েড এক জন ট্রেনারের পরামর্শ নিয়ে শুরু করান। জোর বাড়ানোর ব্যায়ামের কায়দাটা ভাল করে জেনে নিন। শুরুর মাসটা একটু নজরদারিতে রাখুন।

সাপ্তাহিক প্রোগ্রাম

সপ্তাহে তিন দিন জোর বাড়ানোর ছ’টা ব্যায়াম খুব কাজের। সপ্তাহে আরও দু’দিন করুক দৌড়ঝাঁপ। মোট পাঁচ দিনের রুটিন।

জোর বাড়ানোর ব্যায়াম

প্ল্যাংক: ছোটরা ঝুঁকে পড়াশোনা করে, তাই ঘাড়ে, কোমরে ব্যথা হয়। মেরুদণ্ডের আকার ঠিক রাখা, কোমর আর ঘাড়ের ব্যথা থেকে ভাল থাকতে দারুণ ব্যায়াম। দুই কনুই আর দু’পায়ের পাতায় ভর রেখে শরীরটা মেঝের সমান্তরালে রাখা। সমান্তরাল রাখার সহজ উপায় হল মাথা-পিঠ-কোমর এক সরলরেখায় রাখা। ১০ সেকেন্ড করে মোট তিন বার। করতে কষ্ট হলে হাঁটুতে ভর রেখে মডিফায়েড প্ল্যাংক করা যায়।

সাইড প্ল্যাংক: আগের ব্যায়ামের মতো মেরুদণ্ডের জন্য ভাল ব্যায়াম। পশ্চার ভাল হয়। চকিতে ঘুরতে গেলে কোনও আঘাত পাওয়া থেকে বাঁচায়। প্ল্যাংক যেমন দুই কনুইয়ে ভর রেখে, এটায় কনুই থাকবে পাশাপাশি। বাকি সব নিয়ম এক। করতে কষ্ট হলে হাঁটু ভেঙে হাঁটুতে ভর রেখে মডিফায়েড সাইড প্ল্যাংক করা যায়।

পুশ আপ: একেবারে প্ল্যাংকের কায়দায় শরীরটা টানটান রেখে হাতের তালুতে ভর দিয়ে শরীর নামিয়ে বুক মাটি স্পর্শ করে আবার তুলে নেওয়া। যারা পারবে না তারা হাঁটু ভেঙে হাঁটুতে ভর দিয়ে মডিফায়েড পুশ আপ করুক। ১০ বার করে। ৩ বার রিপিট। বুক আর কাঁধের পেশির জোর বাড়ে।

টিউব রো: টিউব হল ছোটদের জোর বাড়ানোর ব্যায়ামের জন্য দারুণ সরঞ্জাম। দু’টি হ্যান্ডেলওয়ালা এই টিউব খেলার সরঞ্জামের ভাল কোনও দোকানে পাওয়া যায়। ওটা গ্রিলে আটকে হাঁটু সামান্য ভাঁজ করে রেখে দু’হাত দিয়ে বগল চেপে নিজের দিকে টানতে আর ছাড়তে হবে। ১০ বার করে। তিন বার রিপিট। এই টিউব দিয়ে আরও অনেক ব্যায়াম করা যায়। টিউব না থাকলে দুটো জলভর্তি বোতল একই ভাবে দাঁড়িয়ে একটু সামনে ঝুঁকে নীচের দিক থেকে বগল চেপে তুলতে নামাতে হবে। এতে পিঠের পেশির জোর বাড়ে। বুক আর পিঠের পেশির ভারসাম্যও আসে।

স্কোয়াট: প্রথমে নিজের শরীরের ওজন নিয়ে শুরু করুক। হিপ-এর কাছে একটা চেয়ার রেখে তাতে বসার ভঙ্গিতে হোক স্কোয়াট। হাঁটু দুটো মাটির সঙ্গে সমান্তরাল হলেই উঠে দাঁড়াতে হবে। মালাইচাকি পায়ের পাতার পিছনে থাকবে। তিন সপ্তাহ পরে দুটো ১ লিটারের জলের বোতল ধরে করুক।

লাঞ্জ: আগের ব্যায়ামের মতো গোড়াতে শরীরের ওজন নিয়ে। এক পা আগে আর এক পা পিছনে করে দাঁড়িয়ে পিছনের পা-টা হাঁটু থেকে ভেঙে মাটিতে স্পর্শ করে আবার তুলে নিতে হবে। মেরুদণ্ড একদম টানটান। মাসখানেক বাদে হাতে নিক ১-২ লিটারের জলের বোতল। ভারসাম্য রাখতে কষ্ট হলে এক হাতে দেওয়াল ধরে করা যায়। স্কোয়াট আর লাঞ্জ হাঁটুর স্টেবিলিটি এনে ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।

অন্য দৌড়ঝাঁপ

আজকাল ছোটদের খেলার পার্ক বা মাঠ খুব কম। সুতরাং দৌড়ঝাঁপের সুযোগ সবার নেই। তাই বুদ্ধি করে বাড়িতে দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। ছোটরা মজা পায় খেলা দিয়ে দৌড়। এ জন্য ফুটবল বা ব্যাডমিন্টনের মতো খেলা খেলতে পারে। সুযোগ না থাকলে হাল্কা একটা বল কিনে বাড়িতে নীচের ড্রিলগুলি করতে পারে।

বল ড্রিল-১: এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অল্প লাফিয়ে বলটা ড্রপ খাওয়াতে হবে। লাফানোর সঙ্গে ড্রপ খাওয়ানোর তালমিল চাই। একটু সড়গড় হলে ড্রপ দিয়ে দিয়ে ঘরের বিভিন্ন প্রান্তে দৌড়ে যাক। এক মিনিট করে তিন বার রিপিট।

ড্রিল-২: যখন এটাও রপ্ত করে ফেলবে তখন বলটা দেওয়ালে আস্তে ছুড়ে মারবে আর বলটা লেগে ফেরত আসার আগে উল্টো দিকের দেওয়াল ছুঁয়ে এসে বল ধরতে হবে। ১৫-২০ বার দেওয়ালে মারতে হবে। তিন বার রিপিট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chinmoy roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE