Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
পটাশপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জরুরি বিভাগ বন্ধের নোটিস

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাকুল্যে একজনই চিকিৎসক! তাই রোগীদের ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফের চিকিৎসক না আসা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে শুধুমাত্র বহির্বিভাগ। পটাশপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টাঙানো এমনই নোটিসের জেরে হাসপাতালে এসেও ফিরে যাচ্ছেন বিপন্ন রোগীরা। হাসপাতালের মতো জরুরি পরিষেবা এভাবে বন্ধ রেখে নোটিস দেওয়া নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

পটাশপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লাগানো হয়েছে নোটিস। ছবি: কৌশিক মিশ্র।

পটাশপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লাগানো হয়েছে নোটিস। ছবি: কৌশিক মিশ্র।

কৌশিক মিশ্র
পটাশপুর শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৫৬
Share: Save:

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাকুল্যে একজনই চিকিৎসক! তাই রোগীদের ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফের চিকিৎসক না আসা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে শুধুমাত্র বহির্বিভাগ। পটাশপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টাঙানো এমনই নোটিসের জেরে হাসপাতালে এসেও ফিরে যাচ্ছেন বিপন্ন রোগীরা। হাসপাতালের মতো জরুরি পরিষেবা এভাবে বন্ধ রেখে নোটিস দেওয়া নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

শুধু এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, আড়গোয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রতাপদিঘি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থাও বেহাল। আড়গোয়াল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিৎসক নেই। আর প্রতাপদিঘি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক রয়েছেন সাকুল্যে একজন। পটাশপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও পাঁচ জন চিকিৎসক থাকার কথা। রয়েছেন একজন মেডিক্যাল অফিসার। তিনিও বর্তমানে অসুস্থ। তাই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককেই যাবতীয় দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশ কয়েকদিন ধরে শুধুমাত্র সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ খোলা থাকে। হাসপাতালের অন্য বিভাগগুলি বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়ছেন রোগী ও তাঁর পরিবারের লোকেরা। দূর-দূরান্ত থেকে সঙ্কটাপন্ন রোগীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেও ফিরে যাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ খান বলেন, “যদি চিকিৎসাই না পাব, তাহলে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র রেখে লাভ কী? ব্লক থেকে একাধিকবার জেলায় জানিয়েও ফল হয়নি।”

পটাশপুরের কসবার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক স্বপন সিংহ বলেন, “আমি কিডনির সমস্যায় ভুগছি। আগে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই চিকিৎসা করাতাম। এখন কী হবে জানিনা।” অভিযোগ, সমস্যার কথা বিডিও, মহকুমাশাসক, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিককে একাধিকবার জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, গত ২৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় ৪০০ জনের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরাতে উদ্যোগী হওয়ার জন্য আবেদন জানান। তাতেও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। এবিষয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ওয়াসিম রাণা বলেন, “আমি জানি, এভাবে নোটিস দেওয়া যায় না। কিন্তু বাধ্য হয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরিষেবা বন্ধ রেখেছি। হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে সকালে গড়ে ৩০০ জন রোগী দেখতে হয়। ফলে বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ খোলা থাকলে আমি একা এত রোগী দেখব কী করে?” তাঁর কথায়, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও আরও দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ২৭টি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এত কাজ কী করে করব? তাছাড়া এখানে দীর্ঘ দিন ধরে হাসপাতালের চিকিৎসক-সহ অন্য কর্মীদের থাকার ঘরগুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নতুন দু’টি বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে।” পটাশপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্স সুচেতা মাইতি বলেন, “এখানে থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। এগরা থেকে যাতায়াত করতে হয়। ফলে সমস্যা হয়।” ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সুইপার কসবার বাসিন্দা মদন ঘড়াই বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। তাই বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে বেসরকারি ক্লিনিকে দেখাতে বাধ্য হই।”

পটাশপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার দেবজ্যোতি শাসমল অসুস্থ রয়েছেন। ওয়াসিম রাণার অভিযোগ, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে নোটিশ দিয়েছি।” তৃণমূল পরিচালিত পটাশপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দন সাউ অভিযোগ করেন, “হাসপাতালের উপর পটাশপুর-২ ব্লক, পটাশপু-১ ব্লকের কিছু অংশ, সবংয়ের নদী পাশ্ববর্তী এলাকা মিলে প্রায় ১৫০টি মৌজার মানুষ নির্ভরশীল। একাধিকবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরে ও জেলার বিভিন্ন উন্নয়নী বৈঠকে এনিয়ে বলেও কোনও কাজ হয়নি।” জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাস বন্দোপাধ্যায় বলেন, “এভাবে হাসপাতাল বন্ধের নোটিস দেওয়া যায় না। বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি।” তিনি জানান, স্বাস্থ্য দফতরে সমস্যা সমাধানের জন্য জানাবো। আশা করি, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে চিকিৎসক এলে সমস্যার সমাধানম হবে।”

তবে ডিসেম্বর মাসের আগে পর্যন্ত কী ভাবে চলবে? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মৃণাল দাস বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের সমস্যা রয়েছে। তবে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের হঠকারি সিদ্ধান্তে নোটিস টাঙানো হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “এর পিছনে স্বাস্থ্য দফতরের গাফিলতি রয়েছে, এটা ঠিক। তবে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করতেই এই চক্রান্ত করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE