Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ভুগছে শিলিগুড়ি

হাসপাতালেই রোগের বাসা

হাসপাতালেরই রোগ সারছে না। তাই দুর্ভোগ বাড়ছে রোগীদের। ভাঙা ডান হাত ফুলে ওঠায় ব্যথায় কাতর হয়ে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে গিয়েছিলেন মহম্মদ মতি।

(বাঁ দিকে) প্রসূতি বিভাগে অপেক্ষা রোজকার। (ডান দিকে) বন্ধ অর্থোপেডিকের বহির্বিভাগ। নিজস্ব চিত্র।

(বাঁ দিকে) প্রসূতি বিভাগে অপেক্ষা রোজকার। (ডান দিকে) বন্ধ অর্থোপেডিকের বহির্বিভাগ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৪২
Share: Save:

হাসপাতালেরই রোগ সারছে না। তাই দুর্ভোগ বাড়ছে রোগীদের।

ভাঙা ডান হাত ফুলে ওঠায় ব্যথায় কাতর হয়ে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে গিয়েছিলেন মহম্মদ মতি। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে এই হাসপাতালের অস্থিরোগের বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় বিনা চিকিৎসায় ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁকে। কবে খুলবে তা তাঁকে কেউ জানাতে পারেননি।

হাত ভেঙে যাওয়ায় টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ মতি দিন ২০ আগে এই হাসপাতালেই চিকিৎসা করিয়েছেন। তাঁর হাতে প্লাস্টার করা হয়েছে। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে হাত ফুলে ওঠায় ব্যথা হচ্ছে। সে কারণে ফের হাসপাতালে আসছেন। তাঁকেও একই দুর্ভোগের পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘বাইরে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য নেই। তাই বিপাকে পড়েছি।’’ বুধবার, বৃহস্পতিবার পরপর দু’দিন হাসপাতালে এসে তিনি ঘুরে গিয়েছেন।

কেন এক সপ্তাহ ধরে অর্থোপেডিকের বহির্বিভাগ বন্ধ? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জানান, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে অর্থোপেডিকের চিকিৎসক দুই জন। তাঁদের মধ্যে এক জনের স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ থাকায় তিনি মাস দেড়েক ধরে ছুটিতে রয়েছেন। অপর এক চিকিৎসকের স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি সপ্তাহখানেক আগে ছুটি নিয়েছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার তিনি ফিরেছেন। কিন্তু সপ্তাহে চার দিন সোম, মঙ্গল, শুক্র এবং শনিবার অর্থোপেডিকের বহির্বিভাগ খোলা থাকে। বৃহস্পতিবারও তাই অর্থোপেডিকের বহির্বিভাগ খোলেনি।

শুধু অর্থোপেডিক নয়। হাসপাতালে রোগ বাসা বেঁধেছে চর্মরোগ, নাক-কান-গলা এবং চক্ষুরোগের বহির্বিভাগেও। চর্মরোগের চিকিৎসার একজন মাত্র চিকিৎসক। তিনি কোনও কারণে অসুস্থ হলে বা ছুটি নিলে চর্মরোগের চিকিৎসার বহির্বিভাগ বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া সপ্তাহে অন্তত ১ হাজার রোগী বহির্বিভাগে দেখাতে আসেন বলে স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ জানান। গড়ে ২৫০ জন রোগী চিকিৎসককে দেখতে হয়। তাতে রোগীদের ঠিক মতো দেখাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। নাক-কান-গলা বিভাগেও এক জন চিকিৎসক। সব দিন তাই খোলা না বহিবির্ভাগ। বৃহস্পতিবারও মেয়েকে চমর্রোগের চিকিৎসা করাতে এসে বহির্বিভাগে চিকিৎসক নেই দেখে ফিরে যেতে হয়েছে বিনা চৌধুরীকে। তাঁর মেয়ে চন্দ্রার মুখে চাকাচাকা দাগ হয়েছে। সে জন্য মেয়ের চিকিৎসার জন্য তাঁরা এসেছিলেন।

হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল বলেন, ‘‘শুক্রবার থেকেই বহির্বিভাগে চিকিৎসক বসবেন।’’ সুপার জানান, ১৯৯১ সালের সরকারি নির্দেশিকা মেনে এই হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে নির্দিষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক রয়েছেন। তবে আগের চেয়ে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। সে কারণে বাড়তি চিকিৎসকও অনেক ক্ষেত্রে দরকার বলে তিনি দাবি করেন।

হাসপাতালের একটি সূত্রই জানিয়েছে, হাসপাতালের সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে ধুঁকছে। সেখানে ২৬টি শয্যা রয়েছে। চিকিৎসক রয়েছেন সাকুল্যে ৩ জন। তাঁদের দিয়ে ২৪ ঘন্টা কাজ করাতে সমস্যা হচ্ছে। অন্তত ৫ জন চিকিৎসক হলে ঠিক মতো পরিষেবা দেওয়া সম্ভব বলে কর্তৃপক্ষের একাংশই জানিয়েছেন। ঘাটতি রয়েছে জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসারেরও (জিডিএমও)। সমস্যার কথা স্বীকার করে হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘‘জিডিএমও-রা পর্যাপ্ত থাকলে জরুরি বিভাগের পরিষেবা ঠিক মতো দেওয়া সম্ভব হয়। তা না থাকাতে কিছুটা সমস্যা তো রয়েইছে। বর্তমানে ৬ জন জিডিএমও রয়েছেন। আরও ৭ জন দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE